জাতিসংঘের ‘বাস্তব জীবনের নায়ক’ ঢাবির ছাত্র তানভীর

তানভীর হাসান
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

জাতিসংঘের ‘বাস্তব জীবনের নায়ক’ (রিয়েল লাইফ হিরো) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদ্য সাবেক সদস্য তানভীর হাসান সৈকত৷


দুর্দশাপীড়িত মানুষকে সহায়তার জন্য তানভীরসহ আরও কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় সংস্থা (ইউএনওসিএইচএ)৷

গতকাল বুধবার ছিল বিশ্ব মানবতা দিবস৷ দিবসটি উপলক্ষে গত সোমবার মানবতাবাদী ও মানবিক সহায়তার সম্মুখযোদ্ধাদের বিশেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘রিয়েল লাইফ হিরোস’ নামের ক্যাম্পেইন করে ইউএনওসিএইচএ৷ এর উদ্দেশ্য মানবিক কাজের স্বীকৃতি ও মানুষকে মানবিকতায় উদ্বুদ্ধ করা৷


করোনাকালে প্রান্তিক মানুষকে সহায়তার স্বীকৃতি হিসেবে জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ তানভীর হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগেরও সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা৷

তানভীর ছাড়া জাতিসংঘের ‘বাস্তব জীবনের নায়ক’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন বাংলাদেশি প্রকৌশলী রিজভী হাসান, ধাত্রী তানিয়া আক্তার, অনুবাদক সিফাত নূর ও করোনাকালে মানুষের পাশে দাঁড়ানো তরুণী আঁখি৷


তানভীর সম্পর্কে ইউএনওসিএইচএর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গত মার্চে বাংলাদেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস ছেড়ে নিজেদের বাড়িতে চলে যান৷ কিন্তু তানভীর ও তাঁর সঙ্গের কয়েকজন ক্যাম্পাসে থেকে প্রান্তিক মানুষকে সহায়তা করেন৷ গত এপ্রিলের শুরু থেকে টানা ১১৬ দিন মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার পর তিনি সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত মানুষকে সহায়তা করতে সেখানে যান৷ বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে অর্থসহায়তা নিয়ে তিনি মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন৷

প্রকৌশলী রিজভী হাসান সম্পর্কে ইউএনওসিএইচএ বলেছে, স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনা শেষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে কাজ শুরু করেন রিজভী৷ তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের কাজ পান৷ দেখতে পান, বিভিন্ন দাতব্য সংস্থা রোহিঙ্গাদের জন্য কম খরচে আবাসনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে৷ লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার নারীদের সেবা দিতে তিনি সেখানে কম খরচে নিরাপদ স্থাপনা গড়ে তোলা শুরু করেন৷ রোহিঙ্গা শিবিরের নারীদের কাউন্সেলিংসহ দক্ষতা উন্নয়নের নানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এসব স্থাপনায়৷ ব্যতিক্রমী এসব স্থাপনার মাধ্যমে বহু নারীকে নিরাপদে সেবা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যেতে পারছে ব্র্যাক ও ইউনিসেফ।

তানিয়া আক্তার সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি ‘মিডওয়াইফারিকে’ (ধাত্রীবিদ্যা) পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন মানুষের সেবা করার জন্য৷ নিজের কাজের মাধ্যমে মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করেন তিনি৷ তানিয়া কাজ করেন বাংলাদেশের একটি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে৷ তানিয়ার পেশাগত জীবনে মোড় বদলের বছর ছিল ২০১৬৷ সে বছর তিনি ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে ‘উইম্যান ডেলিভার ২০১৬’ সম্মেলনের জন্য নির্বাচিত হন৷ এ বছরই কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বদলি হন তিনি৷ তানিয়া রোগীদের আস্থা অর্জন করেছেন৷ তাই তাঁর কাছ থেকে সেবা নিতে রোগীর ভিড় লেগে থাকে৷ ২০১৭ সালের শুরু থেকেই তানিয়া রোহিঙ্গা মায়েদের সেবা দেন৷ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত দ্বীপ ভোলায় তিনি মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাস এবং প্রসব-জটিলতার বেশ কিছু ঘটনা সামলেছেন৷ মিডওয়াইফারিকে বাংলাদেশে স্বতন্ত্র পেশা হিসেবে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখেন তানিয়া৷

সিফাত সম্পর্কে ইউএনওসিএইচএর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, যেকোনো সংকটের সময় খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের মতো তথ্য ও যোগাযোগের প্রয়োজন দেখা দেয়৷ এই তথ্য ও যোগাযোগ হতে হয় জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষায়। এ ক্ষেত্রে একজন অনুবাদকের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিফাত মানবিকতার নায়ক। কারণ তিনি জটিল, জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাংলায় অনুবাদ করেছেন৷ ২০২০ সালের মার্চে ট্রান্সলেটর উইদাউট বর্ডারস নামের একটি সংস্থায় কাজ শুরুর পর ১ লাখ ১৫ হাজারের বেশি বিদেশি শব্দের বাংলা অনুবাদ করেছেন তিনি৷ আইএফআরসি ও ইউএনএইচসিআরের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার হয়ে এই শব্দগুলো অনুবাদের মাধ্যমে অনেক বেশি মানুষের কাছে জীবনরক্ষাকারী তথ্য পৌঁছে দিতে পেরেছেন তিনি৷ সম্প্রতি কোভিড-১৯ নিয়ে তাঁর অনুবাদের মাধ্যমে বহু মানুষ নিজেকে ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ রাখতে পেরেছেন৷

আঁখি সম্পর্কে ইউএনওসিএইচএ বলেছে, বাংলাদেশের আরও বহু শিশুর মতো একসময় শিশুশ্রমে নিয়োজিত ছিলেন আঁখি৷ তাঁকে পুনর্বাসনে সহায়তা করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন৷ বয়সের কারণে স্কুলে ফেরানো না গেলেও তাঁকে সেলাইকাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ পরে তাঁকে দেওয়া হয় একটি সেলাই মেশিন ও কিছু কাপড়৷ সেখান থেকে তিনি নিজের গার্মেন্টস কারখানা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতে থাকেন৷ বর্তমানে আঁখি তাঁর মা ও বড় বোনের সহযোগিতায় নিজের ব্যবসা পরিচালনা করছেন৷ বাংলাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে মাস্ক-সংকট দেখা দেয়৷ আঁখি তখন মাস্ক তৈরি করতে শুরু করেন৷ কম দামে আশপাশের দরিদ্র মানুষের কাছে এসব মাস্ক বিক্রি শুরু করেন তিনি৷