জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডে বিজয়ী ৮৯ শিক্ষার্থী

এবারের জাতীয় আসরে দিনভর ছিল না কোনো আয়োজন। ছিল না গণিত নিয়ে শিক্ষার্থীদের হইহুল্লোড়, বিজয়ী হয়ে মাঠ কাঁপানো দৌড় বা আনন্দ উদ্‌যাপন। এবারের জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াডের আয়োজন ছিল পুরো ভিন্নধর্মী। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই হয়েছে অনলাইনে। তবে গণিতের প্রতি আগ্রহ একটুও কমেনি শিক্ষার্থীদের।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব ২০২১–এর সমাপনী পর্ব ছিল আজ মঙ্গলবার। বেলা তিনটার দিকে অনলাইনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই অলিম্পিয়াডের বিজয়ী ৮৯ শিক্ষার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। এদের মধ্যে প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে ১৫ জন, জুনিয়র ক্যাটাগরিতে ২০ জন, সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে ৩০ ও হায়ার সেকেন্ডারিতে বিজয়ী ২৪ জন।

এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়নস হয়েছে প্রাইমারি ক্যাটাগরিতে ম্যাপল লিফ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী আরিব নোমান, জুনিয়র ক্যাটাগরিতে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থী জুনাইদ রাফি, সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী এস এম এ নাহিয়ান এবং হায়ার সেকেন্ডারি ক্যাটাগরিতে সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থী তাহজিব হোসাইন খান। সেরা গণিত ক্লাবের সম্মান পেয়েছে নেত্রকোনার গণিত ক্লাব ম্যাথমেটিকস অ্যান্ড সায়েন্স অর্গানাইজেশন অব নেত্রকোনা (মেসন)।

চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত এবারের অলিম্পিয়াডের অনলাইনে নিবন্ধন হয়। সারা দেশ থেকে মোট ৩৫ হাজার ২৬২ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে। এই শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রথম ধাপে ১২ মার্চ অনলাইনে হয় বাছাই গণিত অলিম্পিয়াড। এতে অংশ নেয় ৩১ হাজার ৭৩৫ শিক্ষার্থী। বাছাই অলিম্পিয়াড থেকে আরেক ধাপে নির্বাচিত হয় ১৬ হাজার ১৫৪ শিক্ষার্থী। এদের নিয়ে গত ২৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় অনলাইন আঞ্চলিক গণিত অলিম্পিয়াড।

আঞ্চলিক অলিম্পিয়াড পর্ব পেরিয়ে আসে ১ হাজার ২৯৮ শিক্ষার্থী। এদের নিয়ে গত ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয় অনলাইন জাতীয় গণিত অলিম্পিয়াড ২০২১।

করোনা সংক্রমণের কারণে গতবারের ধারাবাহিকতায় এ বছরের গণিত অলিম্পিয়াডের সব আয়োজন অনলাইনে হয়। নিবন্ধন, বাছাই, আঞ্চলিক এবং জাতীয় পর্ব হয়। জাতীয় পর্বের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয় আজ।

অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ

সমাপনী পর্বে বিজয়ীদের নাম ঘোষণার আগে ছিল গুণীদের কথা। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বলেন, ‘বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা গণিতের আন্তর্জাতিক আসরগুলোতে যথেষ্ট ভালো করছে। করোনা অতিমারিকে ভয় না পেয়ে, বাইরে যাতায়াত না করে ঘরে থেকে কীভাবে আরও দক্ষতা বাড়ানো যায়, সেটিতে মনোযোগ দিতে হবে। এই সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে।’

অধ্যক্ষ ব্রাদার লিও প্যারেরা

সেন্ট যোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ব্রাদার লিও প্যারেরা তাঁর বক্তব্যের শুরুতে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী ও সেন্ট যোসেফের প্রিন্সিপাল ব্রাদার রবি পিউরিফিকেশনকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘তাঁদের আত্মার চিরকল্যাণ কামনা করছি। গণিত অলিম্পিয়াড আগে একভাবে হতো, গত দুই বছর করোনার কারণে ভিন্নভাবে হচ্ছে। এই সময়ে আশা হারানো যাবে না। নিজ নিজ ভূমিকা পালন করে যেতে হবে। সংকট সমস্যায় জীবন থেমে থাকে না।’

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি ১৯তম বার আয়োজন করল জাতীয় গণিত উৎসব।

ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন

জুমে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, ‘দেশের শিক্ষার্থীরা এখন গণিতে অনেক ভালো করছে। যারা জাতীয় পর্যায়ে এসেছে, এটাও একটা বড় অর্জন। যারা জয়ী, তাদের জন্য শুভেচ্ছা।’

কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক

কিশোর আলোর সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, ‘যেভাবেই হোক গণিত অলিম্পিয়াড চলবে। আমাদের আশা, সামনের বছরে যেন অলিম্পিয়াড বাস্তবে হয়। আমরা গণিত শিখব, স্বপ্ন দেখব। গণিত করেও আমরা স্বপ্ন দেখাতে পারব। একটা সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখি, সেই স্বপ্নের পথে তরুণ-তরুণীরা এগিয়ে নিয়ে যাবে, স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে।’

প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম

বাংলাদেশের তরুণেরা অদম্য উল্লেখ করে প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী স্বপ্ন দেখিয়েছেন, একদিন গণিতে-বিজ্ঞানে নোবেল বাংলাদেশে আসবে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সময় ও চ্যালেঞ্জ এসেছে। দেশের তরুণেরা যেকোনো পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নিয়ে সফল হয় এবং এগিয়ে যেতে পারে।’

গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল

গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমাদের চাওয়া, গণিতের জন্য শিক্ষার্থীদের আরও ভালোবাসা হোক। গণিতের প্রতি ভালোবাসা হলে চিন্তা অন্য রকম হয়। তখন প্রতিযোগিতা হয় নিজের সঙ্গে।’

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ মাহবুব মজুমদার

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড দলের কোচ মাহবুব মজুমদার বলেন, ‘গেল বছরেও গণিত আন্তর্জাতিক অলিম্পিয়াডে এ দেশের শিক্ষার্থীরা ভালো করেছে। এ বছরও করবে বলে আশা। এ বছর প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান গার্লস ম্যাথমেটিক্যাল অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা একটি ব্রোঞ্জ ও একটি সিলভার মেডেল পেয়েছে। মেয়েদের সামনে আনা হলে তারাও পারবে।’

গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান।
জাতীয় পর্বের এই ৮৯ জন বিজয়ীকে নিয়ে পরবর্তীকালে গণিত ক্যাম্পের আয়োজন করা হবে। ক্যাম্পের ফলাফলের ভিত্তিতে ছয় শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করা হবে, যারা চলতি বছরের জুলাই মাসে রাশিয়ায় অনুষ্ঠেয় ৬২তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে (আইএমও) অংশ নেবে।

গণিত অলিম্পিয়াডের ফলাফল ও বিজয়ীদের নাম পাওয়া যাবে (online.matholympiad.org.bd) এবং (prothomalo.com) এই ঠিকানায়।