জাপানের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্বে আগ্রহী বাংলাদেশ

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন
ফাইল ছবি

ব্যবসা–বাণিজ্য বাড়ানোর পাশাপাশি সংযুক্তি আর মানবসম্পদ উন্নয়নে সহযোগিতার মাধ্যমে জাপানের সঙ্গে সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে নিতে আগ্রহী বাংলাদেশ। বেইজিংয়ের পর আনুষ্ঠানিকভাবে টোকিওর সঙ্গে সম্পর্ককে ঢাকা যে কৌশলগত পর্যায়ে নিতে চায়, তা এরই মধ্যে জাপানের রাজনৈতিক নেতাদের জানানো হয়েছে।

দুই বছর বিরতির পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও জাপানের পররাষ্ট্রসচিবদের মধ্যে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে এ বিষয়ে জোর দেবে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দুই দেশের সম্পর্ককে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করবেন দুই পররাষ্ট্রসচিব।

বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাঁর দপ্তরে এই প্রতিবেদককে বলেন, জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক বিস্তৃত হয়ে এখন তা সমন্বিত অংশীদারত্বের পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখন এই সহযোগিতাকে বাংলাদেশ কৌশলগত অংশীদারত্বে নিয়ে যেতে আগ্রহী।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা–বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ গত বছরের শেষ দিকে দুদেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের জন্য একটি যৌথ সমীক্ষা চালানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। এবারের বৈঠকে এফটিএ বিষয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ মনে করে, এফটিএ সই হলে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বাড়বে। সে সঙ্গে বাড়বে দুদেশের ব্যবসা–বাণিজ্য।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবের তৃতীয় এ বৈঠক হবে ভার্চ্যুয়াল। এতে মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশের ও জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ উপমন্ত্রী হিরোশি সুজুকি তাঁর দেশের নেতৃত্ব দেবেন। দুই দেশের মধ্যকার প্রথম পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক ২০১৬ সালে ঢাকায় ও দ্বিতীয় বৈঠক ২০১৮ সালে টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

দুই পররাষ্ট্রসচিবের আলোচনায় আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিগ–বি নামে পরিচিত জাপানের বঙ্গোপসাগরীয় শিল্পপ্রবৃদ্ধি অঞ্চলের প্রসঙ্গ আসতে পারে। বিশেষ করে চীন যখন অঞ্চল ও পথের উদ্যোগে (বিআরআই) বাংলাদেশকে যুক্ত করেছে, সেখানে মাতাবাড়ী প্রকল্পে যুক্ত বিগ–বি প্রসঙ্গ আলোচনায় আসবে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো–প্যাসিফিক কৌশলের (আইপিএস) সঙ্গে জাপান ও ভারত যুক্ত থাকায়, আলোচনায় ওই বিষয়টি সংযুক্তির প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব পাবে।

সংযুক্তির প্রেক্ষাপটে বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে গড়ে ওঠা মাতারবাড়ী প্রকল্প ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চল ও মিয়ানমারসহ আসিয়ানের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্ত করার জন্য বিশেষভাবে কাজে লাগানোর সুযোগের বিষয়টিতে জোর দেন ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও শান্তি–স্থিতিশীলতার বিবেচনায় যেকোনো উন্নয়ন কৌশলে যুক্ত হতে বাংলাদেশের আপত্তি নেই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানান, আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের প্রসঙ্গ আলোচনায় তুলবে বাংলাদেশ। বিশেষ করে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশ জাপানের আরও জোরালো সহযোগিতা চাইবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে যাতে মিয়ানমারের ওপর জাপান চাপ দেয়, বাংলাদেশ সেই অনুরোধ জানাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা–বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ গত বছরের শেষ দিকে দুদেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের জন্য একটি যৌথ সমীক্ষা চালানোর প্রস্তাব দিয়েছিল। এবারের বৈঠকে এফটিএ বিষয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ মনে করে, এফটিএ সই হলে বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ বাড়বে। সে সঙ্গে বাড়বে দুদেশের ব্যবসা–বাণিজ্য।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তার (ওডিএ) অংশ হিসেবে জাপান এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার দিয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্প চূড়ান্ত না হওয়ায় এখন পর্যন্ত ৯০০ কোটি ডলার ছাড়ের অপেক্ষায় আছে। দুই পররাষ্ট্রসচিবের বৈঠকে বিষয়টি আসতে পারে।