জামিন আবেদন খারিজ, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের আপিল শুনবেন হাইকোর্ট

হাইকোর্ট ভবন
ফাইল ছবি

অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের এক মামলায় চার বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে ডেসটিনি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশিদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। তবে জামিন চেয়ে তাঁর করা আবেদন সরাসরি খারিজ করেছেন আদালত। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।

ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে করা ওই মামলায় গত ১২ মে রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক। রায়ে ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমীন ও কোম্পানির প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান এম হারুন-অর-রশিদসহ ৪৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডের পাশাপাশি অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।

বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে আপিল করার পাশাপাশি জামিন চেয়ে আবেদন করেন এম হারুন-অর-রশিদ। আদালতে হারুনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী রবিউল আলম ও এম মঈনুল ইসলাম। দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে ছিলেন।

পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হারুন-অর-রশিদের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে মামলার নথি (রেকর্ড কল) তলব করেছেন হাইকোর্ট। শুনানির জন্য পেপার বুক প্রস্তুত (মামলার বৃত্তান্ত) করতে বলা হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের মহাপরিদর্শক ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেওয়া এই আদেশ দেশের বাইরে থাকা পলাতক দণ্ডিতদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করতেও বলা হয়েছে।

হারুন-অর-রশিদের অন্যতম আইনজীবী এম মঈনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হারুনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যগত কারণে প্রয়োজনে দরখাস্ত নিয়ে আসা যাবে বলে অভিমত দিয়েছেন আদালত। এই মামলায় দণ্ডিত ৪৬ আসামির মধ্যে ৩৯ জন পলাতক।

ডেসটিনি মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও ডেসটিনি ট্রি প্ল্যান্টেশন লিমিটেডের নামে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই রফিকুলসহ ডেসটিনির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়। রাজধানীর কলাবাগান থানায় এ মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুই মামলায় মোট ৪ হাজার ১১৯ কোটি ২৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়।

দুই বছর তদন্তের পর ২০১৪ সালের ৪ মে উভয় মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। আর ট্রি প্ল্যান্টেশনের মামলায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। দুই মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫৩। রফিকুলসহ ১২ জনের নাম দুটি মামলাতেই রয়েছে। আসামিদের মধ্যে আগে থেকেই কারাগারে আছেন মোহাম্মদ হোসেন ও রফিকুল।

মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির মামলায় দণ্ড পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন মোহাম্মদ গোফরানুল হক, মোহাম্মদ সাঈদ-উর-রহমান, মেজবাহ উদ্দিন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন, ইরফান আহমেদ, ফারাহ দিবা, জামসেদ আরা চৌধুরী, শেখ তৈয়েবুর রহমান, নেপাল চন্দ্র বিশ্বাস, জাকির হোসেন, আজাদ রহমান, আকবর হোসেন, মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, সাইদুল ইসলাম খান, সুমন আলী খান, শিরীন আকতার, রফিকুল ইসলাম সরকার, মজিবুর রহমান, দিদারুল আলম, এম হায়দার উজ্জামান, জয়নাল আবেদীন, কাজী মো. ফজলুল করিম, মোল্লা আল আমীন, শফিউল ইসলাম, জিয়াউল হক মোল্লা, সিকদার কবিরুল ইসলাম, ফিরোজ আলম, ওমর ফারুক, সুনীল বরণ কর্মকার, ফরিদ আকতার, এস সহিদুজ্জামান চয়ন, আবদুর রহমান, সাকিবুজ্জামান, এস এম আহসানুল কবির, এ এইচ এম আতাউর রহমান, জি এম গোলাম কিবরিয়া, আতিকুর রহমান, খন্দকার বেনজীর আহমদ, এ কে এম সফিউল্লাহ, শাহ আলম, দেলোয়ার হোসেন, জেসমিন আক্তার ও শফিকুল হক।