জামুকাকে রাজাকারদের তালিকা করতে দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলকে (জামুকা) একটি ‘বাণিজ্যকেন্দ্র’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সংগঠন। জামুকাকে রাজাকারদের তালিকা তৈরির দায়িত্ব দিয়ে সরকার নতুন করে যে আইন করতে যাচ্ছে, তাকে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়ে সংগঠনটির মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, রাজাকারের তালিকার নামে একটা বড় বাণিজ্য করা এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাকে ব্যাহত করার জন্য জামুকাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে৷ জামুকাকে বন্ধ ঘোষণার দাবিও তুলেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এই সংগঠনটি৷

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধারা এসব কথা বলেন৷ ‘জামুকাকে রাজাকারের তালিকা প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়ার প্রতিবাদে’ অমুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধ আন্দোলন নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এই কর্মসূচি হয়৷

কর্মসূচিতে অমুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধ আন্দোলনের আহ্বায়ক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন (বিচ্ছু জালাল) বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধারাও চাই যে রাজাকারদের তালিকা করা হোক৷ এই তালিকা করবেন তাঁরাই, যাঁরা গবেষক এবং এলাকায় এখনো বেঁচে আছেন৷ জামুকার মহাপরিচালক রাজাকারের ভাগ্নে৷ সেখানে লাখ লাখ টাকা দিয়ে অমুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা বানানো হচ্ছে৷ আমরা রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি৷’

সংগঠনের সদস্যসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা আহসানুল হক মিনু বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ করে দেশ এনেছি এরা (জামুকা) যুদ্ধ দেখেনি৷ এরা কীভাবে মুক্তিযোদ্ধাকে বিচার ও যাচাই-বাছাই করবে? এরা কীভাবে রাজাকারদের যাচাই-বাছাই করবে? এর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা জেগে উঠবেন৷ মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গন থেকে ফিরে এসে অস্ত্র জমা দিয়েছেন, কিন্তু ট্রেনিং জমা দেননি৷’

মুক্তিযোদ্ধাদের হেয় প্রতিপন্ন করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য আজকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জামুকার একশ্রেণির লোক সূক্ষ্মভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেন অমুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধ আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা ঐক্যজোটের সভাপতি রুহুল আমিন মজুমদার৷ তিনি বলেন, ‘জামুকা অবৈধ, মুক্তিযোদ্ধাদের এটির কোনো প্রয়োজন নেই৷ এটি করেছে স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত৷ কেন করেছিল, তার ফলাফল এখন আমরা পাচ্ছি৷ ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জামুকা কর্তৃক যেসব প্রজ্ঞাপন ও পরিপত্র জারি করা হয়েছে, মহামান্য হাইকোর্ট সেগুলোকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন৷ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের সর্বমোট ১০০ জন সম্মানিত বিচারপতি একটি ডিএলআর করেছেন৷ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জামুকা নিয়মের বাইরে গিয়ে যখন যা ইচ্ছা তা-ই করছে- যাকে ইচ্ছা বানায়, যাকে ইচ্ছা বাতিল করে৷ সারা দেশে শত শত অমুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকার আজকে তালিকাভুক্ত হয়েছে, শত শত মুক্তিযোদ্ধাকে ভাতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে৷’

বীর মুক্তিযোদ্ধা বাহাউদ্দিন রেজা বীরপ্রতীক বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫০ বছর পর অমুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধ আন্দোলন কমিটি করে আমাদের শাহবাগে মানববন্ধন করতে হচ্ছে- মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এর চেয়ে বড় দুঃখজনক ব্যাপার আর হতে পারে না৷ যাঁদের জন্ম ১৯৮২ সালে, তাঁরাও আজকে মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছেন৷ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় সেতুর ওপর থেকে পড়ে মারা গেছেন- এমন ব্যক্তিও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে ভাতা পাচ্ছেন৷ এসবে আমরা অপমানিত, দুঃখিত ও লজ্জিত৷ যেসব অমুক্তিযোদ্ধাকে ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা বানানো হয়েছে, তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করার জোর দাবি জানাচ্ছি৷ অমুক্তিযোদ্ধা প্রতিরোধ আন্দোলনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা অমুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ করব ইনশাআল্লাহ৷’

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুল মতিন সেন্টু, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব আহমেদ শহীদ, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন৷