জাহালমকে আসামি করার ব্যাপারে জড়িতদের ওপর নজর রাখতে বলেছেন হাইকোর্ট

জাহালম।  ফাইল ছবি
জাহালম। ফাইল ছবি

নিরীহ পাটকলশ্রমিক জাহালমকে দুর্নীতির মামলায় ভুল আসামি করার সঙ্গে যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কী ব্যবস্থা নেয়, তা দেখবেন হাইকোর্ট।

জাহালমকে জেল খাটানোর জন্য দায়ী ব্যাংক কর্মকর্তাসহ জড়িত ব্যক্তিদের ওপর নজরদারি রাখতে বলেন হাইকোর্ট।

বিনা দোষে জাহালমের জেল খাটার ঘটনায় দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। আগামী ২১ আগস্ট পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ঠিক করেছেন আদালত।

‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শিরোনামে গত ২৮ জানুয়ারি ‘প্রথম আলো’তে প্রতিবেদন ছাপা হয়। সোনালী ব্যাংক থেকে সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিলেন আবু সালেক ও তাঁর সহযোগীরা। কিন্তু দুদক সালেকের স্থলে জাহালমের নামে অভিযোগপত্র দেয়। গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় তিন বছর কারাভোগ করেন জাহালম। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনলে হাইকোর্টের এই বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুল দেন। হাইকোর্টের নির্দেশে গত ৩ ফেব্রুয়ারি জাহালম কারাগার থেকে ছাড়া পান।

দুদক কী ব্যবস্থা নেয় তা দেখব
দুর্নীতির মামলায় প্রকৃত আসামি আবু সালেকের পরিবর্তে জাহালমকে আসামি করার ঘটনায় দুদক ১১ জুলাই হাইকোর্টে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহালমকে আবু সালেক বলে অভিযোগপত্র দেওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলেই। তবে দুদকের কর্মকর্তাদের এই ভুলপথে চালিত করতে সহায়তা করেছেন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং ভুয়া হিসাবধারীর শনাক্তকারীরা।

আজ শুনানির শুরুতে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান দুদকের ওই তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে পড়ে শোনান।

শুনানির সময় হাইকোর্ট দুদকের এই আইনজীবীর কাছে জানতে চান, প্রধান আসামি সালেক কোথায়? তাঁকে ধরার জন্য কী পদক্ষেপ নিয়েছে দুদক?
খুরশীদ আলম খান তখন আদালতকে জানান, সালেককে ধরার ব্যাপারে সব চেষ্টাই করছে দুদক।

দুদকের আইনজীবী আদালতকে জানান, ব্যাংকের কর্মকর্তারাই মূলত জাহালমকে আবু সালেক হিসেবে শনাক্ত করেন। আদালতে গিয়েও ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জাহালমকে আবু সালেক হিসেবে শনাক্ত করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের আত্মসাৎ করা ১৮ কোটি টাকা কোথায় গেল, সে ব্যাপারে পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি।

দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের সময় অনেক কিছুই করেছে দুদক। সিঙ্গাপুর থেকে টাকা ফেরত এনেছে। কমিশন অনেক ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সোনালী ব্যাংকের আত্মসাৎ করা টাকা কোথায় গেল, তা জানার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা নিতে পারত। এ ব্যাপারে দুদক এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এটা কেমন তদন্ত? গুরুতর অপরাধের ঘটনার তদন্তের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থ দুদক।

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আত্মসাতের সঙ্গে ব্যাংকের লোকজন জড়িত ছিলেন।

হাইকোর্ট দুদকের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, সোনালী ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাঁদের গ্রেপ্তারও করা হয়নি।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান আদালতকে জানান, দুদকের প্রতিবেদন নিয়ে শিগগিরই কমিশন বসবে। কমিশন যে সিদ্ধান্ত নেয়, তা সঙ্গে সঙ্গে আদালতকে জানানো হবে।

এ সময় হাইকোর্ট বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে দুদক কী ব্যবস্থা নেয়, তা আমরা দেখব। দায়ীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা দেখব।’

দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনকে ভালো প্রতিবেদন বলে আখ্যায়িত করে হাইকোর্ট বলেন, ‘ভালো তদন্ত হয়েছে।’

হাইকোর্ট দুদকের আইনজীবীর কাছে জানতে চান, জাহালমকে আসামি করার ক্ষেত্রে যাঁরা জড়িত তারা এখন চাকরিতে আছেন কি না?

তখন দুদকের আইনজীবী জানান, ব্যাংকের কর্মকর্তারা সবাই চাকরিতে আছেন। আদালত দুদকের আইনজীবীকে বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের ওপর নজরদারি রাখবেন।’

এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা প্রতিষ্ঠানটির আইনজীবী জাকির হোসেনকে জানাতে বলেছেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার, ব্র্যাক ব্যাংকের আইনজীবী আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। জাহালম তাঁর বড় ভাই শাহানুরকে সঙ্গে নিয়ে আদালতে হাজির ছিলেন।