জীবন গড়তে পত্রিকা

প্রথম আলোর ‘পড়াশোনা’ পাতাটা আমি একদম ক্লাস এইট থেকে এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত ফলো করেছি। চেষ্টা করেছি সে অনুযায়ী নিজেকে আরেকটু ভালোভাবে তৈরি করতে।

প্রথম আলোর ‘পড়াশোনা’ পাতায় নিয়মিত চোখ রাখেন রেদওয়ান রনিছবি: খালেদ সরকার

আমার শৈশব-কৈশোরের কথা মনে পড়ে, আমাদের বাসায় পত্রিকা আসত না। আমার বাবা কলেজশিক্ষক। সে সময় কলেজে নিয়মিত পত্রিকা নেওয়া হতো। আমি যখন এসএসসি দেব, মানে ক্লাস নাইন-টেনে পড়ি, তখন বাবা প্রথম আলোর ‘পড়াশোনা’ পাতাটা নিয়ম করে বাসায় নিয়ে আসতেন আমার জন্য। সেই থেকে আমার পরিচয় হয় এই ‘পড়াশোনা’ পাতার সঙ্গে।

‘পড়াশোনা’ পাতায় খুব অল্প কিছু থাকত, তবে সেটার যে ধারাবাহিকতা ছিল, তা আসলে পড়ালেখায় স্পৃহা তৈরি করত। একটা অধ্যায় ধরে ধরে দারুণভাবে এগোতে থাকে। অপেক্ষায় থাকতাম, পরদিন কী আসবে, কী থাকবে সে পাতায়। এটা আসলে একটা ছাত্রের ইনার চাহিদা তৈরি করে।

পড়াশোনা পাতাটা আসলে আমার বেড়ে ওঠা, আমার এসএসসির ফল—সবকিছুতে সাহায্য করেছে। পরে আমার ছোট ভাই–বোনদেরও সহযোগিতা করেছে। এখন যখন সকালে বাসায় প্রথম আলো আসে, অন্যান্য পাতা পড়তে পড়তে হঠাৎ চোখ পড়ে যায় পড়াশোনায়, নস্টালজিক হয়ে উঠি, নিজের অজান্তেই ইমোশনাল হয়ে পড়ি।

আবেগভরা স্মৃতি

আহসান এইচ আমিনুর, ইজেনারেশন লিমিটেডের প্রধান যোগাযোগ কর্মকর্তা, বর্তমানে বেশ সফল একজন মানুষ। ২০০১ সালে তাঁর বড় ভাই ঢাকায় থাকতেন। আর তিনি থাকতেন গ্রামে। তখন তিনি ক্লাস এইটের ছাত্র।

তাঁর বড় ভাই ঢাকায় তখন পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি করতেন। আর তিনি বাড়িতে থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি মা–বাবার দেখাশোনা করতেন। তাঁদের আর্থিক অবস্থা অতটা সচ্ছল ছিল না যে তিনি নোট বা গাইড বই কিনবেন, প্রাইভেট পড়বেন। তাঁর বড় ভাই ঢাকায় মেসে থাকার সুবাদে ভাই ও কয়েক বন্ধু মিলে প্রথম আলো পত্রিকা রাখতেন। তখন আসলে একটিমাত্র পত্রিকা ছিল, যে পড়াশোনা পাতা বের করত। বড় ভাই তখন পত্রিকাগুলো থেকে পড়াশোনার পাতাটা কেটে রেখে দিতেন।

এভাবে পত্রিকার পড়াশোনা পাতার কাটিংগুলো জমিয়ে জমিয়ে তিনি মাগুরায় বাড়িতে নিয়ে যেতেন। আবার কখনো কোনো বাসে কিংবা কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিতেন।

মাগুরায় বসে বসে ঢাকা থেকে আসা প্রথম আলোর ‘পড়াশোনা’ পাতার সেই কাটিংগুলো জমিয়ে জমিয়ে পড়তেন, পরীক্ষা দিতেন, শিক্ষকদের কাছে জমা দিতেন। শিক্ষকেরা সেই কাটিং থেকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। তিনি মনে করেন, সেই ক্ষেত্রে ছাত্ররা নানাভাবে লাভবান হয়েছে। আর তাঁর পড়াশোনা ক্লাস এইট থেকে আস্তে আস্তে উন্নতির দিকে যায়।

আহসান এইচ আমিনুরের ভাষ্য, ‘আমি ছাত্র যে খুব ভালো ছিলাম আসলে তা নয়। আবার একদম যে খারাপ ছিলাম তা–ও নয়। আসলে প্রথম আলোর পড়াশোনা পাতাটা আমি একদম ক্লাস এইট থেকে এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত ফলো করেছি। চেষ্টা করেছি সে অনুযায়ী নিজেকে আরেকটু ভালোভাবে তৈরি করতে। যেহেতু সেখানে বাছাই করা পড়া থাকত, তাই আমিও জোর দিয়ে পড়তাম। এতে আমার রেজাল্টও দিনে দিনে ভালো হতে থাকে। মাধ্যমিক পরীক্ষায়ও মোটামুটি ভালোই রেজাল্ট করি।’

এই কথাগুলো যখন তিনি বলছিলেন, তখন প্রথম আলোর এই ‘পড়াশোনা’ পাতার কাটিংগুলো যেন তাঁর চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। ঠিক তেমনি চোখের কোণে কেমন যেন বিন্দুও জমছিল। আসলে এটা আমার মতো তাঁরও আবেগের সঙ্গে জড়িত।

আহসান এইচ আমিনুর কৃতজ্ঞতা জানান প্রথম আলোকে ‘পড়াশোনা’র পাতার জন্য। পাশাপাশি তিনি তাঁর বড় ভাইয়ের কাছেও কৃতজ্ঞ, যিনি তাঁকে এটা পেতে সাহায্য করেছিলেন।

পত্রিকার মায়া

আমার এখন দেখে খুব ভালো লাগে আমাদের ছোটবেলার স্মৃতিতে যে ‘পড়াশোনা’র পাতা জড়িয়ে আছে, সেই পাতা নিয়ে এখনো মানুষ আলোচনা করে। এখনো কিশোরেরা, স্কুলে যাওয়া বাচ্চারা এই ‘পড়াশোনা’ পাতাটা পড়ে।

এই পাতার সঙ্গে দেশের অনেক ভালো শিক্ষক জড়িত রয়েছেন। কাজেই তাঁদের সহযোগিতা নিয়ে এখনকার সময়োপযোগী করে, মানে এখনকার বাচ্চারা যেভাবে বুঝতে পারবে, সেভাবে ডিজিটালি প্রেজেন্টস করা। প্রিন্টেড এডিশনে থাকবে; সেখান থেকে কিউআর কোড স্ক্যান করে পাঠক ডিজিটালে চলে যাবে। সেখানে আরও ডিটেইলে এক্সপ্লেনেশন থাকবে; যা এখনকার শিক্ষার্থীদের বেশ উপকারে আসবে বলে মনে করছি। ‘পড়াশোনা’র পাতা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলুক, আরও সফল মানুষ গড়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে জাতির মেধা–মনন সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করুক। শুভকামনা সব সময়। এই পাতার সঙ্গে জড়িত সবার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।


রেদওয়ান রনি: চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চরকির সিওও