জীবাশ্ম জ্বালানির ফাঁদ থেকে বেরোতে হবে

জলবায়ুবিষয়ক বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলন আজ শুরু। ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সামনে নিজের অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়ার বিকল্প নেই।

পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পেছনে মানুষের অনিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ড সবচেয়ে বেশি দায়ী। কারণ, পৃথিবীতে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণের সমন্বয়ে যে বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠেছে, তার একটি উপাদান ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য সামগ্রিকভাবে বিনষ্ট হয়। উৎপাদক, ভোক্তা ও অণুজীবের চক্রাকার খাদ্যশৃঙ্খল ভেঙে পড়ে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশের সেই ভারসাম্যই সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে পড়ছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ছে। গলছে মেরু অঞ্চলের বরফ। দ্রুত হারে বাড়ছে সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা। বদলে যাচ্ছে বন্য প্রাণীদের আবাসস্থল। আর হারিয়ে যাচ্ছে এসব প্রাণীর অনেক প্রজাতি। হানা দিচ্ছে নানা ধরনের ভাইরাস।

করোনাক্রান্তিতে জনজীবন পর্যুদস্ত। জীবন বাঁচাতে প্রাণ-প্রকৃতি তথা ধরিত্রী মাতাকে (মাদার আর্থ) রক্ষা করা বাঞ্ছনীয়। পরিবেশের প্রতিটি উপাদান সংরক্ষিত হলেই বাস্তুসংস্থান চক্র বজায় থাকবে।

আজ বৃহস্পতিবার বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার ব্রত নিয়ে ১৯৭০ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী দিনটি পালিত হয়ে আসছে। এবারের দিবসটির আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে আজ দুই দিনের জলবায়ুবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন ‘গ্লোবাল লিডারস সামিট’ শুরু হবে। আগামী নভেম্বরে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জাতিসংঘ আয়োজিত জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত সম্মেলনের (কপ-২৬) আগে এ সভাটি জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর নেতৃত্ববৃন্দকে ভার্চ্যুয়ালি একই মঞ্চে নিয়ে আসছে।

জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর (ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম) সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনে যোগ দেবেন। সবার প্রত্যাশা, ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর নেতা হিসেবে বাংলাদেশ বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেবে।

ন্যায্যতার লক্ষ্যে সক্রিয় ভূমিকা

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ঘটনা একটি অসম প্রক্রিয়া। উদাহরণস্বরূপ, জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান মাত্র শূন্য দশমিক ২৮ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি। বিশ্বের সব কটি দেশের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিজ্ঞানীদের জোট বা প্যানেল আইপিসিসির পঞ্চম প্রতিবেদন বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ মানুষ ঝুঁকিতে পড়বে। ২০১২ সালে প্রকাশিত ক্লাইমেট ভালনারেবিলিটি মনিটরের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রতিবছর অতিরিক্ত ছয় লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঝুঁকিতে পড়বে।

ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে নিজের অধিকার আদায় করে নিতে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। প্রথমত, জলবায়ু পরিবর্তনে ঐতিহাসিকভাবে উন্নত দেশগুলো দায়ী। অন্যদিকে উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সুতরাং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা সর্বজনীন উদ্দেশ্য ও অগ্রাধিকার হলেও দেশভেদে দায়িত্ব ভিন্ন। উন্নত দেশগুলোকে বেশি দায়িত্ব নিতে হবে; পাশাপাশি প্রতিটি দেশের বর্তমান ও আগামী প্রজন্মের উন্নত, টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও বৈষম্যহীন জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে। উন্নত দেশগুলোকে এ সত্য কার্যকরভাবে উপলব্ধি করতে হবে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণসহ টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে হবে।

এ মূলনীতিগুলো ১৯৯২ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে অনুষ্ঠিত রিও সম্মেলনের ঘোষণায় ছিল। কিন্তু তা দুর্বল হতে হতে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। ধরা যাক, আটজন ব্যক্তিকে রাত আটটায় নিমন্ত্রণ করা হলো। কিন্তু পাঁচজন সন্ধ্যা ছয়টায় উপস্থিত হয়ে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ খাবার খেয়ে নিল। রাত আটটায় বাকি তিনজন এল। পরে পাঁচজন অবশিষ্ট এক-তৃতীয়াংশ খাবার সবার মধ্যে ভাগ করে খেতে বলল!

কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে ঘটনাটি এই নিমন্ত্রণের মতোই। উন্নত দেশগুলো আগেই বিশ্বের বায়ুমণ্ডলে বিপুল পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ করেছে। এই শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়তে দিতে না চাইলে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে। এখন প্রশ্ন উঠছে, শিল্পোন্নত দেশ কী পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ কমাবে, তার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে দেশগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো কার্বন নিঃসরণ নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু সামগ্রিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা রয়ে গেছে।

রোহিঙ্গা শরণার্থী, পরিবেশ ও জলবায়ু

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপদ ছাড়াও নানা ধরনের পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আশাব্যঞ্জক কোনো অগ্রগতি না হওয়া নতুন সমস্যা তৈরি করছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা দেশের পরিবেশ ও বাস্তুসংস্থানের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি করছে।

২০১৭ সালে নতুন করে সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা আসার পর দুই হাজার হেক্টর বন ধ্বংস হয়েছে। রোহিঙ্গা শিবির এলাকার মাটি, পানি, বন ও জীববৈচিত্র্য বড় ধরনের হুমকিতে পড়েছে। বাস্তুসংস্থানের ভারসাম্য ভেঙে পড়ায় আর্থসামাজিক ক্ষতি আরও বাড়ছে। রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে বিশ্ব নেতৃত্বকে বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে না। রোহিঙ্গা সমস্যা থেকে উত্তরণ ও ক্ষতিপূরণ আদায়ে বাংলাদেশকে জোরালোভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করতে হবে।

জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ চলছেই

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রতিরোধে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে ২০৩০ সাল নাগাদ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যে পরিমাণে কমাতে হবে, বর্তমানে বিশ্ব তার চেয়ে ১২০ শতাংশ বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের পথে রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বিশ্বব্যাংক জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ করে চলেছে। জার্মানভিত্তিক পরিবেশবাদী গ্রুপ আর্জওয়ার্ল্ডের গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি সইয়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত জীবাশ্ম জ্বালানিসংশ্লিষ্ট প্রকল্পে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে বিশ্বব্যাংক। অথচ বিশ্বব্যাংকই বলছে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব কমাতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ না নেওয়া হলে ২০৩০ সাল নাগাদ ১০ কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যের কাতারে চলে যাবে। এটা স্পষ্টত পরস্পরবিরোধী নীতি।

অন্যদিকে বেসরকারি সংস্থাগুলোর একটি আন্তর্জাতিক জোটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পর থেকে বিশ্বের বড় বড় ব্যাংক জীবাশ্ম জ্বালানি খাতের কোম্পানিগুলোতে ৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। কোভিড-১৯ মহামারিতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমেছে। তবে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগের তহবিলে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রয়ে গেছে। ২০২০ সালে এ খাতে বিনিয়োগ করা অর্থের পরিমাণ ২০১৬ ও ২০১৭ সালের চেয়ে বেশি।

কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানো কঠিন

প্যারিস চুক্তিতে এ শতাব্দীর শেষে প্রাক্‌–শিল্পযুগের তুলনায় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখার অঙ্গীকার করা হয়। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বায়ুমণ্ডলে বেশি পরিমাণে কার্বন নিঃসরণ। প্যারিস চুক্তিতে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার (নেট জিরো) কথা বলা হয়েছে।

১৯৯৭ সালে করা বহুরাষ্ট্রীয় আন্তর্জাতিক চুক্তি কিয়োটো প্রটোকলে কার্বন নিঃসরণ কমাতে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ কমানোর অঙ্গীকার করেছিল। রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা ও কার্বন নিঃসরণের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে তৈরি করা ওই চুক্তির শর্ত সব দেশ পালন করেনি। পরবর্তীকালে ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ‘ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশনের (এনডিসি) নামে সে বাধ্যবাধকতার শর্তটি উঠিয়ে দেওয়া হয়। ২০৩০ সালের মধ্যে ঐচ্ছিকভাবে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন মাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এর মানে হলো, রাষ্ট্রগুলো জাতীয়ভাবে নির্গমন কমানোর মাত্রা ঠিক করবে এবং তা পূরণের জন্য কাজ করবে।

বাধ্যবাধকতার শর্ত উঠিয়ে নেওয়ার পরও দেশগুলো পর্যাপ্ত কার্বন নিঃসরণ কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তির ১৯৭টি দেশের মধ্যে মাত্র ৭৫টি দেশ নতুন এনডিসি দাখিল করেছে। এরা বেশির ভাগই উন্নয়নশীল দেশ। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের মতো সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশ এনডিসি দাখিলে পিছিয়ে রয়েছে। আবার জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অধিকাংশ দেশ নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্য বৃদ্ধি করেনি। চীন বলছে, ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিঃসরণ ৫৫ শতাংশ ও যুক্তরাজ্য ৬৮ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ ৪৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে হবে। কিন্তু জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন রূপরেখা সম্মেলনের (ইউএনএফসিসিসি) এক সমীক্ষা বলছে, যেসব দেশ ইতিমধ্যে এনডিসি দাখিল করেছে, তাদের অঙ্গীকার অর্জিত হওয়ার পরও ২০১০ সালের তুলনায় ২০৩০ সাল নাগাদ বৈশ্বিকভাবে মাত্র ১ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে নতুন ধাক্কা না দিলে ২০৫০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না।

অঙ্গীকার আছে, তহবিল আসছে না

ধনী দেশগুলো ২০২০ সালের মধ্যে দরিদ্রদের জন্য বছরে ১০ হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের কয়েকটি দরিদ্রতম দেশের জনগণ প্রতিবছর জলবায়ু সংকটের প্রভাব মোকাবিলায় মাথাপিছু মাত্র ১ ডলারের মতো সহায়তা পাচ্ছে! স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে হতে যাওয়া কপ-২৬-এ নতুন তহবিল ঘোষণা করার আভাস নেই। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানে নতুন বোতলে পুরোনো দাওয়াই পরিবেশিত হবে। উপরন্তু আগের অঙ্গীকার পূরণ করা হবে কি না, তা নিয়েই সংশয় আছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবের শিকার দেশগুলোর বিপন্নতার সুযোগ নিচ্ছে বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থা। বেসরকারি সংস্থা অক্সফাম বলছে, জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাব মোকাবিলায় সাহায্যের বদলে দরিদ্র দেশগুলোকে কোটি কোটি ডলার ঋণ দেওয়া হচ্ছে।

ভুল বার্তা দেওয়া হচ্ছে

নভেম্বরে কপ-২৬ সম্মেলনের আগে আয়োজনকারী দেশ যুক্তরাজ্য জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা বৈশ্বিকভাবে ভুল বার্তা দিচ্ছে। সিদ্ধান্তগুলো প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করবে। উদাহরণস্বরূপ, বৈদেশিক সহায়তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করা, মহাসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে নতুন করে অনুমতি দেওয়া, বিদ্যুচ্চালিত গাড়িতে প্রণোদনা কমানো, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সংশয়বাদী একজনকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) প্রধান করায় সমর্থন, গ্রিন হোম গ্রান্ট নামে যুক্তরাজ্যের একমাত্র সবুজ পুনরুদ্ধার কর্মসূচি থেকে সরে আসা, নতুন বিমানবন্দর সম্প্রসারণ ইত্যাদি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্যারিস চুক্তির অঙ্গীকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

বিশ্বে মোট শক্তি ব্যবহারের ৮১ শতাংশ আসে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে। উদ্বেগজনকভাবে কয়েক দশক ধরে অব্যাহতভাবে মোট জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে। একটি কার্যকর আন্তর্জাতিক চুক্তি এ বিপর্যয় অনেকাংশে এড়াতে পারে। এ জন্য আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি নিরোধ চুক্তির (নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি) দিকে যেতে হবে। দরিদ্র দেশগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে আসতে পর্যাপ্ত আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

প্রকৃতি ও মানুষের আন্তসম্পর্ক

প্রাণ-প্রকৃতি তথা ধরিত্রী মাতা ভালো থাকলেই মানুষ ভালো থাকবে। মানুষ যেমন প্রকৃতি ধ্বংসে দায়ী, তেমনি মানুষের চেষ্টাতেই প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পেতে পারে। প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ আহরণ ও ব্যবহারের মাধ্যমে ধ্বংস ত্বরান্বিত না করে টেকসই পথে চলতে হবে। সর্বোপরি উৎপাদনব্যবস্থা টেকসই, সবুজ ও পরিবেশবান্ধব করা ছাড়া উপায় নেই। প্রাণ-প্রকৃতিবিধ্বংসী ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে মানুষ ও প্রকৃতির ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্কই আমাদের কাম্য। পৃথিবীর সর্বজনের এই আকাঙ্ক্ষার জন্য বৈশ্বিক সহযোগিতা ও অংশীদারত্বের বিকল্প নেই।

● লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশের আইইউসিএন জাতীয় কমিটির চেয়ারপারসন।