জ্যোৎস্নার আলোয় পুঁথিপাঠ

লক্ষ্মীপূর্ণিমার রাত। চারদিকে ভেসে যাওয়া জ্যোৎস্না। গ্রামের সবুজ গাছপালা, পুকুরপাড়, নদীর ঘাট—সবখানেই দুধসাদা পূর্ণিমার স্নিগ্ধ আলো। অপূর্ব দ্যুতি ছড়ানো সেই আলোয় গ্রামের মানুষেরা মেতে ওঠেন পুঁথিপাঠে।
নির্মল এই আয়োজনে সঙ্গী হন ঈদের বন্ধে বাড়িফেরা শহুরে বাসিন্দারাও। বাড়ির উঠানে বিছানো পাটি ও চেয়ারে বসে মধ্যরাত পর্যন্ত পুঁথির সুরে মগ্ন থেকে পরে বাড়ি ফেরেন আগত মানুষেরা।
গত মঙ্গলবার রাতে এভাবেই গ্রামীণ ঐতিহ্য ধারণ করে পুঁথিপাঠের আয়োজন করা হয়েছিল মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ইটাউলি গ্রামে। সিলেটি নাগরি-বর্ণমালায় লিখিত দুটি পুঁথি থেকে পাঠ করেন দুই পুঁথিপাঠক। তাঁদের পুঁথির মোহনীয় সুরের জাদুতে আবিষ্ট হন শ্রোতারা। ইটাউলি গ্রাম তো ছিলই, পার্শ্ববর্তী বিয়ানীবাজার থেকেও অনেকে পুঁথিপাঠ শুনতে ভিড় জমিয়েছিলেন।
ইটাউলি গ্রামের সৈয়দ মাতাবুর রহমান পাঠ করেন ধর্মীয় আখ্যানমূলক পুঁথি হালাতুননবী। পাঠ শুরুর আগে তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরে পুঁথি পাঠ করি না। ইদানীং এভাবে ঘটা করে পুঁথিপাঠের আয়োজন করাটা চোখেই পড়ে না। তাই এত শ্রোতার সামনে পুঁথিপাঠ করাটা বেশ আনন্দের বিষয়ই বটে।’
সিলেট অঞ্চলের জনপ্রিয় সোনাভানের পুঁথি থেকে পাঠ করেন খোকন ফকির। তিনি বলেন, ‘গ্রাম দেশে আগে পুঁথিপাঠের আসরের নিয়মিত আয়োজন হতো। আগের মতো না হলেও সিলেট অঞ্চলে এখনো এই ঐতিহ্য রয়ে গেছে।’
পুঁথিপাঠ শুনতে হাজির হয়েছিলেন সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, স্থপতি-নাট্যকার শাকুর মজিদসহ ঢাকা ও সিলেটে বসবাসরত অনেকেই। নাট্যকার শাকুর মজিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুঁথিপাঠ সিলেট অঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী লোকসংগীতের ধারা। এটির বর্তমান রূপ দেখতেই এখানে উপস্থিত হয়েছি।’
পুঁথিপাঠের আয়োজন করেন ঢাকার উৎস প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ও নাগরি-গবেষক মোস্তফা সেলিম। তিনি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বাংলা বর্ণমালার বিকল্প লিপি হিসেবে প্রচলিত সিলেটি-নাগরি লিপি নিয়ে কাজ করছি। এর অংশ হিসেবে পুরোনো পুঁথিগুলো প্রকাশ করছি। এরই ধারাবাহিকতায় পুঁথিপাঠের আয়োজন করা হয়েছে।’