জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ

গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে বরিশাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে বরিশাল বিভাগের জয়িতাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই ক্রোড়পত্রে জয়িতাদের সাফল্যগাথা প্রকাশিত হলো।
একজন সংগ্রামী অপ্রতিরোধ্য নারীর প্রতীকী নাম জয়িতা। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের মূর্ত প্রতীক জয়িতা। কেবল নিজের অদম্য ইচ্ছাকে সম্বল আর চরম প্রতিকূলতাকে জয় করে জয়িতারা তৃণমূল থেকে সবার অলক্ষ্যে সমাজে নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন। সরকারের মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর এই জয়িতাদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগটির নাম ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’। জয়িতাদের পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে—১. অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী; ২. শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী; ৩. সফল জননী নারী; ৪. নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন যে নারী; ৫. সমাজ উন্নয়নে অবদান রেখেছেন যে নারী। পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগভিত্তিক জয়িতা বাছাই কাজটি পরিচালিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বাছাইয়ের কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। বরিশাল বিভাগে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ক্যাটাগরিভিত্তিক মনোনীত ৫৯৩ জন জয়িতার মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে ২০৬ জন, জেলা পর্যায়ে ৩০ জন ও বিভাগীয় পর্যায়ে পাঁচজন জয়িতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর মনে করে, জয়িতারা বাংলাদেশের বাতিঘর। জয়িতাদের দেখে অন্য নারীরা অনুপ্রাণিত হলে ঘরে ঘরে জয়িতা সৃষ্টি হবে। আর তাহলেই বাংলাদেশ তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।

বরিশাল অঞ্চলের ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত জয়িতারা
বরিশাল অঞ্চলের ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত জয়িতারা

অবিরাম ছুটে চলা ফাতেমা

ফাতেমা খানম
ফাতেমা খানম

‘আলো আমার, আলো ওগো, আলো ভুবন-ভরা, আলো নয়ন-ধোওয়া আমার, আলো হূদয়-হরা’ শিক্ষা ও সচেতনতার আলোয় নিজে আলোকিত হয়েছেন। অন্যকে আলোকিত করার মূলমন্ত্র বক্ষে ধারণ করেছেন যে মহীয়সী নারী, তিনি ফাতেমা খানম।
ফাতেমারা সাত ভাইবোন। বাড়ির কাছে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। নদী পার হয়ে অন্য গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তেন। নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যলয়ে যেতে হতো দুটি খেয়া ও কয়েকটি সাঁকো পার হয়ে। এভাবেই তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনে অংশ নেন। তিনি ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ ও পরবর্তী সময়ে ‘বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে চাকরির পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যান। এ সময় সফলতার সঙ্গে এইচএসসি, বিএ ও এলএলবি পাস করেন। চাকরির পাশাপাশি আইন পেশায়ও সাফল্য অর্জন করেন। তিনি কেয়ার বাংলাদেশ ও ডানিডায় ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কর্মরত থাকেন।
এরপর একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। তিনি অক্সফামের প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবেও চাকরি করেন। ১৯৯৮ সালে বরিশালে ছাত্রীদের বাস্তবভিত্তিক শিক্ষার জন্য একটি ছাত্রী হোস্টেল ও তাদের পরিচালনায় একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এর মধ্যে ‘অশোকা ফেলোশিপ’ লাভ করেন। বরিশাল শহরে তিনিই প্রথম নারী, যিনি ব্যক্তিগত গাড়ি চালাতেন। তিনি বিভিন্ন সংস্থায় পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন।
এশিয়া-ইউরোপে অনেক দেশে প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও পলিসি সভায় অংশ নেন। নিজের সারা জীবনের সঞ্চয় ও এলাকার মানুষের সহযোগিতায় নারীদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘মনস্বিতা মহাবিদ্যালয়’। নিজের তিন শতাংশ জমি ও সাত হাজার ৫০০ বই দিয়ে কবি সুফিয়া কামালের নামে একটি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। নিজ এলাকায় তিনি গরিবের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। নারীমুক্তির ধারক ও বাহক তিনি। ফাতেমা খানম অবিরত ছুটে চলা এক নারীর প্রতীক। ২০০৮ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে কাঁঠালিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তিনি তাঁর অসাধারণ কাজ দিয়ে শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন।
স্বপ্নাতুর এক সংগ্রামী নারী

রাশিদা ইয়াসমিন
রাশিদা ইয়াসমিন

‘আমি অন্তঃপুরের মেয়ে, চিনবে না আমাকে। অসাধারণ যদি কিছু তলিয়ে থাকে কোথাও কেমন করে প্রমাণ করবে সে—এমন কজন মেলে যারা তা ধরতে পারে!’ রবীন্দ্রনাথের এই বাণী হূদয়ে ধারণ করে এক স্বপ্নাতুর নারী স্বপ্ন দেখেছিলেন একজন সাধারণ নারী থেকে ভিন্ন আঙ্গিকে নিজেকে তুলে ধরতে।
পুুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীদের সফলতা অর্জন কঠিন। বাধাবিপত্তি জয় করে কিছু নারী জীবনযুদ্ধে জয়ী হন। তাঁরা জয়িতা। এমন এক জয়িতা রাশিদা ইয়াসমিন। দরিদ্র বাবার সংসারে অনেক কষ্টে তিনি এসএসসি পাস করেন। স্বামীর সংসারেও ছিল অভাব। রাশিদা চিন্তা করতে থাকেন, কীভাবে নিজের ও অন্য নারীদের ভাগ্যের পরির্বতন করা যায়। তাই ‘শলনা মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সমিতি’ গঠন করেন। ৩৫ জন নারী এ সমিতির সদস্য। বর্তমানে এর সদস্যসংখ্যা ৬৮। এ সমিতির মাধ্যমে রাস্তার পাশে গাছ লাগান। সমিতির কাজের ক্ষেত্র বাড়তে থাকে। সদস্যদের মাছের চাষ ও সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সময় মহিলা অধিদপ্তরের সহযোগিতা পায়। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ৬৪টি জেলার নারী উদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতার উদ্যোগ নেয়। রাশিদা এখানে অংশ নিয়ে সেরা নির্বাচিত হন। এ স্বীকৃতি তাঁকে আরও কর্মোৎসাহী করে তোলে। তাঁর সব কাজে পাশে ছিলেন স্বামী ফজলুল হক। সিঙ্গাপুরের ডেল কোম্পানি রাশিদাকে ‘ডেল শি পাওয়ার’ সম্মানে ভূষিত করে। নারীরা যে পারিবারিক সহযোগিতা পেলে তাঁদের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে পারেন, তার প্রমাণ রাশিদা ইয়াসমিন। তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি আশা করেন ‘তাঁর স্বামীর মতোই আর সব পুরুষ একই রকমভাবে নারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হোক।
মর্মভেদী জীবনের গল্প

সীমা বেগম
সীমা বেগম

সেলুলয়েডের ফিতায় বন্দী কোনো সিনেমার গল্প নয়। গ্রামবাংলার অতি সাধারণ বালিকা সীমা বেগমের সীমানা ছেড়ে যাওয়ার মর্মভেদী জীবনের গল্প। জন্মই সীমার আজন্ম পাপ। তাই আজও দুর্ভাগ্য-নির্যাতন পিছু ছাড়েনি। কখনো এক বেলা খেতে পেতেন, কখনো খাওয়া হতো না। অনেক কষ্টে সীমা দাখিল পাস করেন।
সীমার মা তাঁর বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী। উত্তরাধিকার সূত্রে সীমা সৎভাইবোনের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। ভাগ্যের পরিহাসে তিনি নিজেও তাঁর স্বামীর দ্বিতীয় স্ত্রী। স্বামী যৌতুকের জন্য নির্মমভাবে নির্যাতন করতেন। সীমা অনেক কষ্ট করে স্বামীকে একটি স্বর্ণের চেইন দেন। এরপর স্বামী বায়না ধরেন মোটরসাইকেলের। এটা না দিতে পারায় স্বামী ও সতিন তাঁকে ভীষণভাবে নির্যাতন করেন। তাঁর কান ছিঁড়ে রক্ত ঝরতে থাকে। স্বামীর ঘর, বাপের বাড়ি কোথাও আশ্রয় হয় না সীমার। অবশেষে এক ভিক্ষুকের কাছে দিন কাটাতে থাকেন। এরই মধ্যে তাঁর একটি সন্তান হয়।
সীমা তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। দুই বছর মামলা চলে। সীমা ও তাঁর সন্তানের ভরণপোষণ দেওয়ার শর্তে মামলা শেষ হয়। কিন্তু অমানুষ স্বামী তাঁকে একটি পয়সাও দেন না। সীমা ঋণের টাকায় বিদেশ গেলেন। সেখানেও প্রতারণার শিকার। নির্দিষ্ট কাজের পরিবর্তে বাসাবাড়িতে কাজ নিলেন। এখানেও গৃহকর্তার অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়। বারবার বাসার কাজ পরিবর্তন করেন। কিন্তু নির্যাতন বন্ধ হয় না। এক বাসার মালিক তাঁর মাথা ফাটিয়ে দেন। খাবার নেই। বেতন নেই। নির্ঘুম রাত। ভাগ্য যেন বারবার তাঁকে নিয়ে খেলা করছে। অবশেষে পালিয়ে পুলিশের সাহায্য নেন। পুলিশের সহায়তায় একটি ভালো চাকরি পান। দুই বছর পর ১০ লাখ টাকা নিয়ে দেশের মাটিতে ফেরেন সীমা। তিনি বাবার কাছ থেকে কিছু জমি পান। নিজে কিছু জমি কেনেন। এখানে হাঁস-মুরগি, মাছ, আলু ও সবজি চাষ করেন। এরই মধ্যে তাঁর মা ও বোন বিধবা হন। কে কাকে ফেলেন। তিনজনের একসঙ্গে শুরু হলো পথ চলা। সঙ্গে যোগ হলেন বেকার ভাইয়েরা। সাবেক স্বামীর অত্যাচার এখনো শেষ হয়নি। কখনো মামলা। কখনো প্রিয় সন্তানকে ছিনিয়ে নেওয়ার আতঙ্ক। কতই বা বয়স তাঁর? কিন্তু বড় কষ্টের, অপমানের, গ্লানির তাঁর এই অল্প সময়ের জীবন। এত দিনে ঠিকই চিনেছেন সমাজকে, সমাজের মানুষকে। অনেক কাজ তাঁর বাকি। কিন্তু পাশে কেউ নেই। একাই পাড়ি দিতে হবে জীবনের দীর্ঘ পথ। ক্লান্তিকে প্রশ্রয় দিতে চান না। কেবল নারী বলেই তাঁকে সইতে হয়েছে অত্যাচার, নির্যাতন ও অন্যায় অপবাদ। তিনি নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন।
জীবন জয় করেছেন দুর্জয় সাহসে

ফকেজান বিবি
ফকেজান বিবি

ফকেজান বিবি। অতি সাধারণ একজন পল্লিবধূ। এভাবেই তাঁর পরিচয় দেওয়া যেত। কিন্তু সাধারণ আটপৌরে বধূর পরিচয় থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন অনন্যসাধারণ। তিনি রত্নগর্ভা। নিজেকে ধন্য করেছেন। সমাজ ও রাষ্ট্রকে ধন্য করেছেন। চার ভাই, চার বোনের মধ্যে সবার ছোট ফকেজান। পঞ্চম শ্রেণীর গণ্ডি পেরোনোর আগেই কৈশোরে বসেছেন বিয়ের পিঁড়িতে। স্বামীর ঘরে কোনো অভাব ছিল না। তিনি চার ছেলে ও এক মেয়ের মা হলেন। জীবনের নিয়মে সবকিছু ঠিক ছিল। এ সময় হঠাৎ করেই তাঁর স্বামী মারা যান। সংসারে নেমে আসে কলো ছায়া। কিন্তু সন্তানদের শিক্ষিত করার ক্ষেত্রে তিনি হার মানেননি। একদিকে সংসারের হাল ধরা, অন্যদিকে ছেলেমেয়েদের মানুষ করা। হাজারো দায়িত্ব কাঁধে তাঁর। জীবনের সব স্বপ্ন এলোমেলো হচ্ছে। কিন্তু তিনি পথ ভুলতে চান না। নদীর এলাকার মেয়ে। নদী ও প্রকৃতির রুদ্র রোষ এই জনপদকে বিপর্যস্ত করেছে বারবার। প্রকৃতির বিরূপতাকে সঙ্গী করে জীবনের পথ চলা। প্রকৃতির কাছ থেকে জীবনকে জয় করার সাহস পেয়েছেন। তিনি জানেন, বিপদে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়। মমতাময়ী মা ও যোগ্য অভিভাবক হয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন পাঁচ সন্তানকে। বাবার অবর্তমানে সন্তানদের যোগ্য করে মানুষ করেছেন। বড় ছেলে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার। মেজো ছেলে বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম সচিব। তৃতীয় ছেলে কলেজের অধ্যাপক। চতুর্থ ছেলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। তিনি আলাস্কায় কর্মরত। একমাত্র কন্যটিও চাকরি করেন। তাই ফকেজান বিবির কোনো অলংকারের প্রয়োজন পড়েনি। সন্তানরাই তাঁর শ্রেষ্ঠ অলংকার। তিনি এ দেশের জননীদের অহংকার।
থেমে থাকেননি গোলাপজান

গোলাপজান
গোলাপজান

১৫ বছর বয়সে ষাটোর্ধ্ব একজন বৃদ্ধের সঙ্গে বিয়ে হয় গোলাপজানের। স্বামী পঙ্গু হয়ে ঘরে পড়ে থাকেন। স্বামী ও সংসারকে জীবনের নিয়তি বলে মেনে নেন গোলাপজান। এ জীবনে সুখ-শান্তি, আনন্দ বলে কিছু নেই গোলাপজানের। সংসারের বোঝা পড়ে গোলাপজানের কাঁধে। নিরন্তর ছুটে চলে তাঁর জীবন। স্থানীয় একটি এনজিওতে চাকরি নেন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কাজে যুক্ত থাকেন। তিনি গতানুগতিক জীবনের বৃত্তের বাইরে আসেন। শুরু হয় জীবনের কল্যাণমুখী কাজের পথ চলা। নারীদের কম সন্তান ও সুখী জীবনের ব্যাপারে উৎসাহিত করেন। তিনি হাঁস, মুরগি, গরু ও ছাগল পালনের প্রশিক্ষণ নেন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ধাত্রীবিদ্যার প্রশিক্ষণ নেন। বিসিক থেকে বাঁশ, বেত ও নার্সারি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন। এসব জ্ঞানের মাধ্যমে নিজে স্বাবলম্বী হন।
স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেন গোলাপজান। মা হওয়ার মতো কঠিন সময়ে নারীরা খুব অসহায় বোধ করেন। তাঁরা নিজেকে নিয়তির হাতে ছেড়ে দেন। গোলাপজান দায়িত্ববোধ, মায়া-মমতা ও ভালোবাসা নিয়ে তাঁদের পাশে দাঁড়ান। সন্তান প্রসবে নারীদের সাহায্য করেন। এই বয়সেও প্রতিদিন অন্তত ১৫ জন গর্ভবতী নারীর বাড়ি যান।
তিনি গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য ও ওজন পরীক্ষা করেন। জটিল রোগীদের সরকারি হাসপাতালে পৌঁছে দেন। তাঁদের কম খরচে সন্তান প্রসবের ব্যবস্থা করেন। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। যক্ষ্মা রোগীদের জন্য নিয়মিত ওষুধ সংগ্রহ করেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ান। এভাবে বহুমুখী জনসেবা কাজের মধ্য দিয়ে মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জন করেন। অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার আনন্দই তাঁর সব কাজের প্রেরণা। সমাজ উন্নয়নে অবদানের জন্য তিনি জয়িতা নির্বাচিত হন।
যাঁরা জয়িতা হলেন
ফকেজান বিবি : ক্যাটাগরি, সফল জননী নারী, গ্রাম: শ্রীপুর, উপজেলা: ভান্ডারিয়া, জেলা: পিরোজপুর
গোলাপজান : ক্যাটাগরি, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী, গ্রাম: কানাইনগর, উপজেলা/জেলা: ভোলা
রাশিদা ইয়াসমিন : ক্যাটাগরি, অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী, গ্রাম: শোলনা, উপজেলা/জেলা: বরিশাল
ফাতেমা খানম : ক্যাটাগরি, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী, গ্রাম: শৌলজালিয়া, উপজেলা: কাঁঠালিয়া, জেলা: ঝালকাঠি
সীমা বেগম : ক্যাটাগরি, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে যে নারী ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, গ্রাম: মানিকজোড়. উপজেলা/জেলা: বরগুনা
জয়িতা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি আগামীকাল ১১ মার্চ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় চ্যানেল আইতে প্রচারিত হবে
তত্ত্বাবধানে : মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়
আয়োজনে : মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর
বাস্তবায়নে : বিভাগীয় প্রশাসন, বরিশাল
অর্থায়নে : জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল
প্রচার সহযোগিতায়: প্রথম আলো-চ্যানেল আই