জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ

গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে খুলনার সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে খুলনা বিভাগের জয়িতাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই ক্রোড়পত্রে জয়িতাদের সাফল্যগাথা প্রকাশিত হলো।

খুলনা অঞ্চলের ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত জয়িতারা
খুলনা অঞ্চলের ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত জয়িতারা


একজন সংগ্রামী অপ্রতিরোধ্য নারীর প্রতীকী নাম জয়িতা। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের মূর্ত প্রতীক জয়িতা। কেবল নিজের অদম্য ইচ্ছাকে সম্বল আর চরম প্রতিকূলতাকে জয় করে জয়িতারা তৃণমূল থেকে সবার অলক্ষ্যে সমাজে নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন। সরকারের মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর এই জয়িতাদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগটির নাম ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’। জয়িতাদের পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে—১. অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী; ২. শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী; ৩. সফল জননী নারী; ৪. নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন যে নারী; ৫. সমাজ উন্নয়নে অবদান রেখেছেন যে নারী। পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগভিত্তিক জয়িতা বাছাই কাজটি পরিচালিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বাছাইয়ের কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাজশাহী বিভাগে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ক্যাটাগরিভিত্তিক মনোনীত এক হাজার ৬০৫ জন জয়িতার মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে ২৮৫ জন, জেলা পর্যায়ে ৫০ জন ও বিভাগীয় পর্যায়ে পাঁচজন জয়িতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর মনে করে, জয়িতারা বাংলাদেশের বাতিঘর। জয়িতাদের দেখে অন্য নারীরা অনুপ্রাণিত হলে ঘরে ঘরে জয়িতা সৃষ্টি হবে। আর তা হলেই বাংলাদেশ তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।

মাটিতে দাঁড়িয়ে আকাশ ছোঁয়া যায়

সালমা খাতুন
সালমা খাতুন

অদম্য ইচ্ছে থাকলে পশ্চাৎপদ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। জীবনে অর্থনৈতিক মুক্তি আনা যায়। মাটিতে দাঁড়িয়ে আকাশ ছোঁয়া যায়। ‘রূপ-নারানের কুলে জেগে উঠিলাম; জানিলাম এ জগৎ স্বপ্ন নয়। রক্তের অক্ষরে দেখিলাম আপনার রূপ-চিনিলাম আপনারে আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়;’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ বাণী জীবনের প্রতিটি ধাপে অনুধাবন করেছিলেন বলেই আজ সালমা নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে জয়িতা হয়েছেন। বাবা ছিলেন সামান্য দিনমজুর। সালমার আট বছর বয়সে বাবা মারা যান। মাসহ দুই ও ভাই দুই বোনের সংসারে সালমা সবার ছোট। কোনো আবাদি জমি নেই। কেবল ভিটেবাড়িটুকু সম্বল। সালমাদের জীবনের ওপর ভর করে চরম দারিদ্র্য ও হতাশা। অনিশ্চয়তা দেখা দেয় সংসারে টিকে থাকার। তাই কোনো ভাইবোনের লেখাপড়া হয়নি। সালমার মা পরিবার থেকে নেমে আসেন জনপদে। কাজ নেন একটি মাছ কোম্পানিতে। এরই মধ্যে সালমার বড় হয়ে ওঠা। নিজের চোখে দেখছেন সমাজের উত্থান-পতন। তাই তিনি হতে চান আত্মনির্ভরশীল। তিনি দেখছেন, বিমান চালনা থেকে দেশ শাসন কোথায় নেই নারীরা? তাহলে তিনিই বা নয় কেন? অভাবের সংসারে লেখাপড়া করতে পারেননি। কিন্তু পিছিয়ে থাকতে চান না। নিজেকে টেনে এনেছেন খেলার মাঠে। ক্রিকেট তাঁর ভালো লাগে। ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা।
সারা দিন পড়ে থাকেন ক্রিকেট মাঠে। পরিবারের সদস্যসহ সবাই বলেছে, এটা নারীদের খেলা নয়। সবাই সালমাকে অপবাদ দেয়। সালমা শিকার হন ইভ টিজিংয়ের। প্রতিবেশীদের গালমন্দ চরম আকার ধারণ করে। তিনি প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে থাকেন। ক্রিকেট থেকে ফেরাতে তাঁকে বিয়ে দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে যিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের দলপতি হবেন, তাঁকে কি কোনোভাবে ফেরানো যায়? প্রতিনিয়ত অন্যায় অপবাদ চলছেই। তার পরও তিনি ক্রিকেট ছাড়েননি। নিরন্তর অনুশীলন করে গেছেন। একসময় সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আজ তিনি বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা ও একাগ্রতায় সফলতার শিখরে পৌঁছছেন। সালমা একটি ভাগ্য পরিবর্তনের নাম। সফল নারীর নাম। একদিন যাঁরা তাঁর সমালোচনা করেছেন। মানসিক নির্যাতনে ফেলেছেন। আজ তাঁরাই গর্ব করে বলেন, ‘ও আমাদের সালমা।’ সালমা হয়ে ওঠেন অনেকের আদর্শ অনুপ্রেরণা। সালমা প্রমাণ করেছেন, আমি পেরেছি, তুমিও পারবে। জয়তু সালমা।

জীবনের সৌন্দর্য কেবল জীবন উপভোগের মধ্যে নয়

অর্চনা বিশ্বাস
অর্চনা বিশ্বাস

জীবনের সৌন্দর্য কেবল জীবন উপভোগের মধ্যে নয়। গ্রিক দেবতা প্রমিথিউস স্বর্গ থেকে আগুন এনে সভ্যতা শুরু করেছিলেন। সভ্যতার সে আগুনে আজও আলোকিত হচ্ছে দিগন্ত। প্রমিথিউসরা ক্ষণজন্মা। যুগে যুগে এঁরা অন্ধকার পৃথিবীকে আলোকিত করেন। নড়াইলের অর্চনা বিশ্বাস এ যুগের প্রমিথিউস। বাবা ছিলেন সামান্য কৃষক। জীবনকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে ছিল দারিদ্র্য। তাই নবম শ্রেণীর বেশি পড়তে পারেননি। কিন্তু তিনি পেছনে পড়ে থাকতে চাননি। তিনি একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হন। রাজনৈতিক কারণে স্বামীর কারাবাস হয়। অন্ধকারে ছেয়ে যায় জীবনের পথ। শুরু হয় জীবনের নতুন এক যুদ্ধ।
তিনি বস্তিতে ছোট পরিসরে একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র চালু করেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন। তিনি এখানে ৫৪টি মাহিলা সংগঠন ও ৫৪টি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলেন। শিশু শিক্ষাকেন্দ্র থেকে ১২ হাজার শিশু তাদের জীবনকে আলোকিত করেছে। ১৬ হাজার অসহায় নারীদের সংগঠিত করেছেন। ‘জয়তি সোসাইটি’র মাধ্যমে তাদের ভাগ্য বদলের কাজ করেছেন। জয়তি সোসাইটির প্রতিটি সদস্যকে যৌতুক, তালাক, ইভ টিজিং, বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সচেতন করেছেন। এবং এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি গঠন করেছেন। এর মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীদের মোটরসাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণ দেন। বিভিন্ন কাজে ৫৬০ জন নারীর কর্মসংস্থান করেছেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ‘জয়তি ফিটনেস সেন্টার’-এ নারী ও শিশুদের নিয়মিত ক্রীড়া, ব্যায়াম, ম্যারাথন দৌড় ইত্যাদি চর্চা ও প্রতিযোগিতা হয়। তিনি পাঁচজন নারীকে জাতীয় ফুটবল দলে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। তিনি ধীরে ধীরে নবম শ্রেণী থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। অর্চনা বিশ্বাস সামাজিক কাজে কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছেন। বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে সম্মাননা পেয়েছেন। দূরদর্শিতা, পরিশ্রম, অধ্যবসায়, দৃঢ়তা একজন মানুষকে তাঁর গন্তব্যের শিখরে পৌঁছে দিতে পারে। নির্ভীক এই নারী সমাজের আলোকবর্তিকা, বাতিঘর।

এগিয়েছেন স্বপ্নের পথে

সাবিনা ইয়াসমিন
সাবিনা ইয়াসমিন

নারীর মুক্তিযুদ্ধ হয়তো চিরকালের। তাদের জন্মটাই যুদ্ধের। চারপাশের শত বাধা ডিঙিয়ে পথ চলতে হয় নারীদের। এভাবে কেবল অটল, অদম্য সাহসী নারীরাই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। সাবিনা ইয়াসমিন এমনই একজন সাহসী নারীর নাম। যিনি জ্ঞান অর্জনের তীব্র আকাঙ্ক্ষাকে সঙ্গী করে এগিয়েছেন স্বপ্নের পথে। থানা প্রশাসকের পদে চাকরি করতেন সাবিনার বাবা। সোনার চামচ মুখে নিয়ে পৃথিবীতে আসার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু প্রকৃতি যাকে নিয়ে খেলা করবে, তার এত সুখ সইবে কেন? যুদ্ধের বছর। সাবিনা তখন মায়ের গর্ভে। এক রাতে রাজাকাররা মায়ের পাশ থেকে বাবাকে নিয়ে হত্যা করে এবং লুট করে বাড়ির সবকিছু। দুটি শিশুকে নিয়ে সাবিনার মা শূন্য হাতে সংসার যাত্রা শুরু করেন। বাবার মৃত্যুতে চারপাশ থেকে দারিদ্র্য ঘিরে ধরে সাবিনাদের। সন্তানদের নিয়ে মা দিশেহারা হয়ে পড়েন। সাবিনা টিউশনি করে লেখাপড়া করতে থাকেন। এভাবে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। আত্মীয়স্বজন পড়ালেখা বাদ দিয়ে কোনো একটা চাকরি করতে বলেন। কিন্তু সাবিনা অভাবের কাছে হেরে যেতে চান না।
আকাশের মতো বিশাল তাঁর শক্তি, সাহস, মনোবল। জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে তিনি বিএল কলেজ থেকে অনার্সসহ ইংরেজিতে এমএ পাস করেন। স্থানীয় পর্যায়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে সফল হতো সাবিনা। জন্মের পর থেকে জগৎ সংসারের কঠিন সব প্রতিকূলতাকে একাই মোকাবিলা করেছেন। তাঁর দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের কাছে হার মেনেছে সব অশুভ শক্তি। তিনি ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। কলেজ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হন। এরপর তিনি বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণা করছেন। তিনি বিভিন্ন জার্নাল ও জাতীয় পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। তিনি কবিত ও নাটক লেখেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা পাঁচ। খুলনা বেতার থেকে পাঁচটি নাটকও প্রচারিত হয়েছে। আঁধার জয়ের দিগ্বিজয়ী নারী সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি আজ বাংলাদেশের বাতিঘর।

হাল ছাড়েন না স্বপ্নচারী ফরিদা

ফরিদা বেগম
ফরিদা বেগম

শৈশবে বিয়ে হয় ফরিদা বেগমের। একে একে নয় সন্তানের জননী হন তিনি। স্বামী ছোট চাকরি করেন। এতগুলো মানুষের সংসার চালানো কষ্টকর। ভয়ানক অর্থনৈতিক সংকটে দিন কাটে ফরিদা বেগমের। সন্তানদের নিয়ে তাঁর অনেক বড় স্বপ্ন। স্বামীর অর্থে আর কোনোভাবেই চলে না। তিনি চার দেয়ালের চৌকাঠ থেকে বেরিয়ে আসেন খোলা আকাশের নিচে। নিজের হাতে ঘর-গৃহস্থালির কাজে লাগে এমন উপকরণ তৈরি করেন। এবং বাজারে বিক্রি করেন। এর পরও সংসার চলে না। বাবা-মায়ের দেওয়া সব গয়না বিক্রি করেন। এ অর্থও শেষ হয়ে যায়। কিন্তু হাল ছাড়েন না স্বপ্নচারী ফরিদা। শেষ পর্যন্ত মাথা গোঁজার ঠাঁই ব্যতীত সমস্ত জমি বিক্রি করেন। এরপর হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল পালন শুরু করেন। শাকসবজির চাষ করতে থাকেন। খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করে বিক্রি করেন। নিজের বিশ্রামের কথা, সুখের কথা কখনোই ভাবতেন না। তাঁর প্রতিটি সন্তান অত্যন্ত মেধাবী। সন্তানদের সাফল্য দেখে সব কষ্ট ভুলে যান। তাঁর সব সন্তান পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। এভাবে পড়তে পড়তে বড় ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, মেজো ছেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে, সেজো ছেলে ঢাকা কলেজে ভর্তি হলো। চতুর্থ সন্তান জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক পেল।
অন্য সন্তানেরা পড়ালেখায় সাফল্য পেতে শুরু করল। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে বড় ছেলে ক্যানসারে মারা যান। এ মৃত্যুতে তিনি মানসিকভাবে প্রচণ্ড আঘাত পান। কিন্তু তিনি পথ হারাননি। ফরিদা বেগমের সন্তানেরা আজ উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। আজ তাঁর সন্তানদের একজন ডাক্তার, একজন মেরিন ক্যাপ্টেন, একজন লে. কর্নেল, একজন বহুজাতিক কোম্পানিতে, একজন আইনজীবী ইত্যাদি। সন্তানদের সাফল্যে সমাজে তাঁর মাথা আকাশ সমান উঁচু। অতীতের কষ্টের দিনগুলো তিনি সহজেই ভুলে যেতে পারেন।

ব্যর্থতা তাঁকে হতাশ করেনি

সোনালী আক্তার
সোনালী আক্তার

সোনালী আক্তারের বাবা ছোটখাটো ব্যবসা করতেন। সংসারে ছিল নিত্য অভাব। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। অর্থের অভাবে এসএসসি পাস করার পর আর পড়া হয়নি। সোনালীর বিয়ের পর স্বামীর সংসারেও সেই অভাব। জীবনে একবার জট লাগলে সহজে খুলতে চায় না। স্বামীর সঙ্গে তিনিও কাজে নামলেন। সোনালী শাড়ি তৈরি করে বাজারে বিক্রি শুরু করেন। প্রথমবার সফল হলেন না। কিন্তু ব্যর্থতা তাঁকে হতাশ করেনি। সোনালী আক্তার মনোবল হারালেন না। তিনি ঋণ সহায়তায় বেকার নারীদের নিয়ে ‘সোনালী হস্তশিল্প’ গড়ে তোলেন।
গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে নারী কর্মী জোগাড় করেন। এতে তাঁকে অনেক অপমানিত হতে হয়েছে। রক্ষণশীল সমাজের কোনো মন্তব্যই তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। সব অবস্থাতেই তাঁর স্বামী পাশে ছিলেন। স্থানীয় বাজারে তাঁর শাড়ি বিক্রি হতে থাকে। ক্রমান্বয়ে পণ্যের চাহিদা বাড়ে। এখন তাঁর শাড়ি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। বিদেশে তাঁর পোশাকের চাহিদা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে তাঁর কারখানায় এক হাজার ২০০ নারী শ্রমিক কাজ করেন। এখন তাঁর মূলধন ৪০ লাখ টাকা। একজন নারী প্রতি মাসে সাংসারিক কাজের পাশাপাশি কয়েক হাজার টাকা উপার্জন করছেন। সোনালী হস্তশিল্পের এমন সফলতা ও বিকাশ দেখে কুমারখালীতে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বর্তমানে প্রায় ছয় হাজার নারী শ্রমিক এই পেশার সঙ্গে জড়িত। তাঁর এই প্রতিষ্ঠানকে সবাই মডেল হিসেবে অনুসরণ করে। তিনি চান এমন আরও প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠুক, যাতে অসহায় নারীদের কল্যাণ ও কর্মসংস্থান হয়। সোনালী আক্তার অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করে জয়িতা হয়েছেন।

যাঁরা জয়িতা হলেন
সালমা খাতুন : ক্যাটাগরি, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী, গ্রাম: মিলকী দেয়াড়া, উপজেলা: রূপসা, জেলা: খুলনা
অর্চনা বিশ্বাস : ক্যাটাগরি, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী, গ্রাম: নলদীর চর, উপজেলা/জেলা: নড়াইল
সাবিনা ইয়াসমিন : ক্যাটাগরি, শিক্ষা ও চাকুরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী, গ্রাম: সরল, উপজেলা: পাইকগাছা, জেলা: খুলনা
ফরিদা বেগম : ক্যাটাগরি, সফল জননী নারী, গ্রাম: কাজদিয়া, উপজেলা: রূপসা, জেলা: খুলনা
সোনালী আক্তার : ক্যাটাগরি, অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী, গ্রাম: দুর্গাপুর কাজীপাড়া, উপজেলা: কুমারখালী, জেলা: কুষ্টিয়া
জয়িতা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি আগামীকাল ১৮ মার্চ বিকেল সাড়ে পাঁচটায় চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত হবে
তত্ত্বাবধানে: মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়
আয়োজনে: মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর
বাস্তবায়নে: বিভাগীয় প্রশাসন, খুলনা
অর্থায়নে : জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল
প্রচার সহযোগিতায়: প্রথম আলো চ্যানেল আই