জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ

সিলেট অঞ্চলের ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত জয়িতারা
সিলেট অঞ্চলের ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত জয়িতারা

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে সিলেট সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে সিলেট বিভাগের জয়িতাদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই ক্রোড়পত্রে জয়িতাদের সাফল্যগাথা প্রকাশিত হলো।
একজন সংগ্রামী অপ্রতিরোধ্য নারীর প্রতীকী নাম জয়িতা। নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের মূর্ত প্রতীক জয়িতা। কেবল নিজের অদম্য ইচ্ছাকে সম্বল আর চরম প্রতিকূলতাকে জয় করে জয়িতারা তৃণমূল থেকে সবার অলক্ষ্যে সমাজে নিজের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন। সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এই জয়িতাদের খুঁজে বের করার উদ্যোগ নিয়েছে। উদ্যোগটির নাম ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’। জয়িতাদের পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে—
১. অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী; ২. শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী; ৩. সফল জননী নারী; ৪. নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন যে নারী; ৫. সমাজ উন্নয়নে অবদান রেখেছেন যে নারী। পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগভিত্তিক জয়িতা বাছাইয়ের কাজটি পরিচালিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বাছাইয়ের কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। সিলেট বিভাগে ইউনিয়ন পর্যায় থেকে ক্যাটাগরিভিত্তিক মনোনীত ৬৩০ জন জয়িতার মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে ১৮৩ জন, জেলা পর্যায়ে ২০ জন ও বিভাগীয় পর্যায়ে পাঁচজন জয়িতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মনে করে, জয়িতারা বাংলাদেশের বাতিঘর। জয়িতাদের দেখে অন্য নারীরা অনুপ্রাণিত হলে ঘরে ঘরে জয়িতা সৃষ্টি হবে। আর তা হলেই বাংলাদেশ তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।

লক্ষ্যে অবিচল দেলোয়ারা

দেলোয়ারা খাতুন
দেলোয়ারা খাতুন

ছয় ভাইবোনের মধ্যে দেলোয়ারা পঞ্চম। বাবা অন্যের বাড়িতে কামলা দেন। মা সংসারে ও মাঠে কাজ করেন। কখনো অনাহারে থাকেন। কখনো বা দু-এক বেলা খেতে পান। লেখাপড়ার কোনো সুযোগই হয়নি দেলোয়ারার। কোনো রকম নামটা স্বাক্ষর করতে পারেন। ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়। দরিদ্র বাচ্চু মিয়া তাঁর স্বামী। প্রতিটি দিন কাটে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে। প্রভাতের স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায় বিবর্ণ সন্ধ্যায়। তবুও স্বপ্ন দেখেন দেলোয়ারা। স্বামীর সম্বল বলতে ৩৫ শতক জমি। এখানে করলা, বরবটি, ফুলকপি, শিম, বাঁধাকপি, টমেটো চাষ করতে লাগলেন। শুরুর দিনগুলোয় শরীর সইত না। দিন-রাত খাটতেন। তারপরও সফল হতে পারছিলেন না। হাল ছাড়েননি দেলোয়ারা। এলাকার মানুষ তাঁর চাষাবাদ পছন্দ করছে না। এটা নিয়ে হাসি-তামাশা করছে। কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল দেলোয়ারা। কারও সমালোচনাকে পাত্তা দেননি। পরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে কৃষিকাজে তাঁর ব্যাপক সফলতা আসে। তিনি এখন আর্থিকভাবে সচ্ছল একজন সফল নারী।
কৃষিকাজের পাশাপাশি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালনেও তাঁর অনেক সফলতা আসে। ছনের ঘর থেকে তিনটি ইটের ঘর নির্মাণ করেছেন। এখন ২৫ বিঘা জমির মালিক। বার্ষিক আয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। তাঁর বহুমুখী সাফল্য প্রথম আলোসহ স্থানীয় পত্রিকা ও চ্যানেলগুলোয় প্রচারিত হয়েছে। তিনি শ্রম, নিষ্ঠা ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি পান। তাঁর অবদানের স্মারক হিসেবে কৃষিক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার-১৪১৫’ (বাংলা সাল) অর্জন করেন।
পরিবেশ সংরক্ষণে তাঁর ভূমিকা আছে। এ ভূমিকার জন্য এক লাখ টাকা পুরস্কার পান। আজ এখানে আসার পেছনে রয়েছে তাঁর দৃঢ় মনোবল, অসম্ভব আত্মবিশ্বাস আর অসীম সাহস। তাঁর লক্ষ্য ছিল, স্বামীকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে সংগ্রাম করা। যুদ্ধে তিনি জয়ী হয়েছেন। এখন তিনি এক সফল নারী। এ কাজে তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। দেলোয়ারা চার সন্তানের জননী। তিনি সন্তানদের কৃষি প্রযুক্তিশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চান। যাতে তারা কৃষিকাজের মাধ্যমে দেশের সেবা করতে পারে। তিনি চান নারীদের জন্য জয়িতার মতো আরও উদ্যোগ নেওয়া হোক।


বিজয়ী এক সাহসী নারী

মিনা রানী সরকার
মিনা রানী সরকার

মিনা রানী সরকার। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে অসম সংগ্রামে বিজয়ী এক সাহসী নারী। তিন বোন, এক ভাই, মা-বাবাসহ ছয়জনের সংসার। চরম অভাব এ সংসারের প্রতিদিনের চিত্র।
বাবা ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। তাঁর আয় দিয়ে কোনোভাবে সংসার চালানো সম্ভব ছিল না। জীবনের কোনো চাহিদাই পূরণ হয় না। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ ছিল মিনার। কিন্তু সীমাহীন দারিদ্র্যের মধ্যে এটা ছিল একধরনের বিলাসিতা। তবুও পড়ালেখার ইচ্ছেটি মনের গহিনে লালন করেন। নিজে কিছু একটা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু কী করবেন? অবশেষে বাজারে জ্বালানি বিক্রি করে কিছু আয় করেন। এ দিয়ে কোনোভাবে লেখাপড়া করা সম্ভব না। বাধ্য হয়ে তিনি অন্যের পুরোনো বই-খাতা ও পোশাক পরে স্কুলে যাওয়া শুরু করেন। এভাবে এসএসসি পাস করেন। সামান্য বেতনে এনজিওতে একটি চাকরি নেন। এই আয় দিয়ে এইচএসসি পড়ার খরচ চালাতে থাকেন।
তিনি সংসারকে দারিদ্র্যের রাহু থেকে বের করতে চান। তাঁর মতো যদি অন্য ভাইবোনেরা লেখাপড়া করে তাহলে সংসারে অভাব থাকবে না। ভাইবোনদের লেখাপড়ার দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। কঠোর পরিশ্রম ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি ও বিএ পাস করেন। এরপর সম্মানজনক একটি কাজের খোঁজ কারতে থাকেন। এরই মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখেন এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালো ফল করেন।
এরপর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেন। শারীরিক প্রতিবন্ধী এই নারী হাওর-বেষ্টিত ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এ অঞ্চলে হাজারো প্রতিকূলতা জয় করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। মিনা শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী হিসেবে জয়িতা নির্বাচিত হন। তিনি চান তাঁর মতো প্রতিবন্ধী যাঁরা আছেন, তাঁরা যেন সমাজের মূল ধারায় ফিরে আসতে পারে। এ জন্য সমাজের ধনী মানুষেরা যেন এগিয়ে আসেন। অদম্য মিনা জীবনসংগ্রামে সফল এক গর্বিত নারী। তিনি অন্যদের কাছে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। মিনারাই বাংলাদেশের বাতিঘর।

ভেঙে পড়েননি পুষ্প রানী

পুষ্প রানী বৈদ্য
পুষ্প রানী বৈদ্য

১৯৭১ সাল। চারদিকে যুদ্ধ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নিপীড়ন চলছে। হতদরিদ্র রাখাল শুক্লবৈদ্যের বাড়িতে হানা দেয় পাকিস্তানি বাহিনী। হানাদাররা শুক্লবৈদ্যসহ ২১ জনকে হত্যা করে। আগুনে পুড়িয়ে দেয় ঘরবাড়ি।
এ ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী রাখালের স্ত্রী পুষ্প রানী বৈদ্য। তিনিও রেহাই পাননি। পাকিস্তানিদের হাতে নির্যাতনের শিকার হন। দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। নিজস্ব কোনো সম্পদ ছিল না। আর্থিক অবস্থা ভয়ানক খারাপ। ভিটেবাড়ি ও যৎসামান্য ধানি জমি ছাড়া আর কিছু নেই। তাঁর চোখের সামনেই স্বামীসহ পরিবারের সদস্যদের পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। তবুও ঘুরে দাড়াতে চান পষ্প রানী। ভুলে যেতে চান বিভীষিকার দিনগুলি। প্রতিদিন জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে এগিয়েছেন। পড়ালেখা করিয়েছেন সন্তানদের।
চেতনা একাত্তরের সহযোগিতায় পুষ্প রানী বৈদ্য নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হন। সেই নির্যাতনে আঁতকে ওঠা আর নেই। বরং অসীম সাহসিকতার বহিঃপ্রকাশ তাঁর অবয়বে। চেতনা একাত্তরের সম্পাদক কেয়া চৌধুরী সুখ-দুঃখে তাঁর পাশে ছিলেন। নিজেকে আবিষ্কার করেছেন বিপুল প্রাণশক্তিতে। চোখের সামনে অনেক মৃত্যু-নির্যাতনের পরও পুষ্প রানী ভেঙে পড়েননি। দুই শিশুসন্তানকে বুকে নিয়ে জীবনসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। হতদরিদ্র ধোপা পরিবারের সদস্য পুষ্পের জীবন ছিল ধু ধু মরুভূমির মতো। চারদিকে ছিল কেবল শূন্যতা, হাহাকার। অনেক কষ্ট করে টাকা উপার্জন করেছেন। দুই ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। তাদের বিদেশে পাঠিয়েছেন। এখন পরিবারে কোনো দুঃখ নেই। তাই ‘নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা নারী’ ক্যাটাগরিতে তিনি ‘জয়িতা’র স্বীকৃতি পেয়েছেন।


রত্নগর্ভা জননী

সুফিয়া আক্তার খানম
সুফিয়া আক্তার খানম

সুফিয়া আক্তার খানম। বয়স আনুমানিক ৮০ বছর। হাওর- অঞ্চলে বাস করেন। তার ওপর রয়েছে প্রাকৃতিক ও সামাজিক প্রতিকূলতা। তৎকালীন সামাজিক পরিবেশও নারীশিক্ষার অনুকূল ছিল না। এসব কারণে তাঁর অষ্টম শ্রেণীর বেশি পড়া হয়নি। ১৮ বছর বয়সে বিয়ে হয়। স্বামী সরকারি চাকরিজীবী। সংসারের ব্যাপারে তিনি খুব একটা খোঁজখবর রাখতেন না। ঘরে-বাইরের সব দায়িত্ব নিতে হয় সুফিয়া আক্তারকে। কিন্তু সবকিছুর ওপর ছিল তাঁর সন্তান। নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি নয়টি সন্তানকেই লেখাপড়া শিখিয়ে দক্ষ, যোগ্য ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলেন। বড় ছেলে ফারুক আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ও এলএলবি পাস করেন। তিনি সুনামগঞ্জে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। দ্বিতীয় ছেলে মরতুজা আহমদ (তথ্যসচিব) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে ১২তম স্থান অর্জন করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সমাপ্ত করেন। তৃতীয় ছেলে মুজতবা আহমদ উচ্চশিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করছেন। চতুর্থ ছেলে মুশতাক আহমদ সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ও এনভায়রনমেন্ট ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক। ছোট ছেলে খালিদ আহমদ এলএলবি করে আইন পেশায় নিয়োজিত। তাঁর চার মেয়ে সুরাইয়া আক্তার খানম, নার্গিস আক্তার খানম, হ্যাপী আক্তার ও ফরিদা আক্তার উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। সন্তানদের শিক্ষিত করে প্রতিষ্ঠিত করার প্রেরণায় এক মায়ের ভূমিকায় তিনি সফল জননী।
নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ। কিন্তু উচ্চশিক্ষিত করেছেন নয় সন্তানকে । এবং সমাজের বিভিন্ন অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এলাকার অবহেলিত মা-বোনেরা তাঁকে অনুকরণ করেন। এখানকার মায়েরা সুফিয়া আক্তারের মতো তাঁদের সন্তানদেরও মানুষের মতো মানুষ করতে চান। সুফিয়া আক্তারের এ অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি সফল জননী ক্যাটাগরিতে বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত জয়েছেন।

যুক্ত কর হে সবার সঙ্গে

সালমা বাছিত
সালমা বাছিত

১৯৪৮ সালের ১৪ আগস্ট। সিলেট শহরের কোলাহল থেকে দূরের একটি ছোট্ট লোকালয়। এখানে জন্ম সালমা বাছিতের। বড় হতে থাকেন মা-বাবার আদরের সংসারে। প্রাথমিক মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে সিলেট মহিলা কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে বিএ পাস করেন। তখনকার দিনে নারীদের স্বাধীনতা ও সামাজিক নিরাপত্তা ছিল না। সব ক্ষেত্রে নারীরা ছিলেন পেছনের সারিতে। অবজ্ঞা-অবহেলায় ভরা ছিল তাঁদের জীবন। এসব বিষয় সালমাকে কষ্ট দিত। ‘যুক্ত কর হে সবার সঙ্গে, মুক্ত কর হে বন্ধ...।’ রবীন্দ্রনাথের এ বাণী ধারণ করে সারা জীবন পথ হেঁটেছেন সালমা বাছিত। তিনি বাধার প্রাচীর ভেঙে সামনে এগোতে চান। শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নিলেন। এবং গার্লস গাইড প্রশিক্ষণ নিলেন। মেয়েদের নিয়ে গঠন করলেন ব্যান্ড দল। এটা ছিল এ অঞ্চলে মেয়েদের প্রথম ব্যান্ড দল।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পেয়েছেন বিশেষ সম্মাননা। ২০০২ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে গার্লস গাইডে শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকা নির্বাচিত হন। তিনি জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সদস্য ছিলেন। বর্তমানে সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা রেড ক্রিসেন্টের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় রেড ক্রিসেন্ট পুরস্কার।
তিনি সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী পরিষদের একজন সদস্য। সিলেট জেলা ফুটবল সংস্থার মহিলা ফুটবল কমিটিরও সদস্য। তিনি সুরমা লায়ন্স ক্লাবের সেক্রেটারি থাকা অবস্থায় পেয়েছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কার। নির্বাচিত হয়েছেন ক্লাবের আজীবন সদস্য।
বর্তমানে জাতীয় মহিলা সংস্থার জেলা কমিটির সদস্য। জেলা সমাজসেবা পরিষদের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন তিনি। দায়িত্ব পালন করছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, সিলেটের সহসভাপতি হিসেবে। নারী ও শিশুদের জন্যও কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ জেলা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সিটি করপোরেশনের জন্মনিবন্ধন টাস্কফোর্সের সদস্য।
তাঁর এসব অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ লিডারশিপ একাডেমি সিলেট জেলা থেকে তাঁকে গ্র্যাজুয়েশন প্রদান করেছে।
এ ছাড়া চার থেকে চৌদ্দ বছরের শিশুদের নিয়ে তাঁর একটি ব্যক্তিগত কার্যক্রম আছে, যা থেকে শিশুদের খাবার প্রদান করা হয়। সমাজ উন্নয়নে তাঁর নিরন্তর প্রচেষ্টার মাধ্যমে যে অসামান্য অবদান রেখেছেন, তা তাঁকে এনে দিয়েছে বিভাগীয় পর্যায়ে জয়িতা নির্বাচিত হওয়ার বিরল সম্মান।
যাঁরা জয়িতা হলেন
দেলোয়ারা খাতুন : ক্যাটাগরি: অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী, গ্রাম: জিনারপুর, উপজেলা: বিশ্বম্ভরপুর, জেলা: সুনামগঞ্জ
মিনা রানী সরকার : ক্যাটাগরি: শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী, গ্রাম: জয়শ্রী, উপজেলা: ধর্মপাশা, জেলা: সুনামগঞ্জ
পুষ্প রানী বৈদ্য : ক্যাটাগরি, নির্যাতনের বিভীষিকা মুুছে ফেলে যে নারী ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, গ্রাম: গোছাপাড়া, উপজেলা: চুনারুঘাট, জেলা: হবিগঞ্জ
সুফিয়া আক্তার খানম : ক্যাটাগরি: সফল জননী নারী, গ্রাম: চাপিইতি, বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ উপজেলা: ধর্মপাশা, জেলা: সুনামগঞ্জ
সালমা বাছিত : ক্যাটাগরি: সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী, গ্রাম: পশ্চিমভাগ, উপজেলা: দক্ষিণ সুরমা, জেলা: সিলেট
জয়িতা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি আগামীকাল ১ এপ্রিল বিকেল সাড়ে পাঁচটায় চ্যানেল আইতে প্রচারিত হবে
তত্ত্বাবধানে: মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়
আয়োজনে: মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর
বাস্তবায়নে: বিভাগীয় প্রশাসন, সিলেট
প্রচার সহযোগিতায়: প্রথম আলো-চ্যানেল আই