ঝরনার পানিতে ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু

আসাদুজ্জামান
আসাদুজ্জামান

সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা শেষ। কয়েক দিনের জন্য ছুটি। ছুটির আনন্দ ভাগাভাগি করতে বন্ধুদের নিয়ে ঝরনা দেখতে গিয়েছিলেন আসাদুজ্জামান ও নাইমুল হাসান। সেখানে চলছিল আনন্দ-উল্লাস। কিন্তু হঠাৎ থেমে গেল সেই উল্লাস। কারণ, পা পিছলে ঝরনার পানিতে পড়ে চিরতরে ‘হারিয়ে গেলেন’ আসাদুজ্জামান ও নাইমুল হাসান।
গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের পেছনের পাহাড়ের ঝরনার পানিতে ডুবে মারা যান আসাদুজ্জামান ও নাইমুল হাসান। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আসাদুজ্জামান ও নাইমুল হাসানের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। তাঁরা দুজনই পরিবারের সঙ্গে নগরের হালিশহর এলাকায় থাকতেন।
আসাদুজ্জামান ও নাইমুল হাসানের সহপাঠী সাকিব ইফতেখার বলেন, সোমবার (গতকাল) তাঁদের প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের শেষ পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষে বেলা তিনটার দিকে তাঁরা সাত বন্ধু ঝরনা দেখতে যান। সবাই ঝরনায় নেমে সাঁতার কাটেন। সাঁতার শেষে সবাই পাড়েও উঠে আসেন। বিকেল পৌনে চারটার দিকে চলে আসার সময় আসাদুজ্জামান ও নাইমুল পা পিছলে পড়ে ঝরনার পানিতে তলিয়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মোহাম্মদ নিয়াজ মোরশেদ বলেন, বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পারে। তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসের হাটহাজারী স্টেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সেখানে ডুবুরি না থাকায় আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে যোগাযোগ করা হয়। সেখান থেকে ডুবুরিরা এসে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তাঁদের দুজনকে উদ্ধার করেন।
মোহাম্মদ নিয়াজ মোরশেদ জানান, নাইমুল হাসানের লাশ ক্যাম্পাসে তাঁর বাবা আকবর হোসেনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

নাইমুল হাসান
নাইমুল হাসান

আসাদুজ্জামানকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় আসাদুজ্জামান ও নাইমুলের সহপাঠীরা সেখানে ভিড় জমান। সেখানে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে আসাদুজ্জামানের বাবা শামসুল আলম ছেলের লাশ নিতে আসেন। এ সময় তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার ছেলেকে তো সাঁতার শিখিয়েছিলাম। আজ সকালেও তাকে আদর করে ক্যাম্পাসে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু আমার ছেলে এভাবে ফিরবে ভাবতেই পারছি না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঝরনাটি বিপজ্জনক হওয়ায় সেখানে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। ঝরনায় যাওয়ার রাস্তায় নিরাপত্তাকর্মী দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সতর্কবার্তাও আছে। তারপরও অনেক শিক্ষার্থী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সেখানে যান। আজও (সোমবার) নিরাপত্তাকর্মী ওই শিক্ষার্থীদের সেখানে যেতে বাধা দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা শোনেননি।’
দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
২০১৩ সালের ৩০ জানুয়ারি একই ঝরনায় ডুবে মারা যান চারুকলা ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের ছাত্র সালমান জাহান।