ঝরা শালপাতায় বাড়তি আয়

শালগাছের ঝরাপাতা কুড়িয়ে বিক্রি করে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার চারটি শালবাগানের আশপাশের শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের হাজারো মানুষের মধ্যে আনন্দ দেখা দিয়েছে।
শালবাগান থেকে সংগ্রহ করা শুকনো পাতা বস্তায় ভরে সেগুলো ভ্যান, রিকশা কিংবা মাথায় করে মধ্যবিত্ত, নিম্ন–মধ্যবিত্ত কৃষক ও বিভিন্ন পেশার মানুষের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে বাড়তি টাকা আয়ের সুযোগ হওয়ায় তাঁদের এ আনন্দ।
ফাল্গুন-চৈত্র মাসে অনেক গাছেরই পাতা ঝরে যায়। বিশেষ করে এ সময় ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার থুমনিয়া, শতহা, সাগুনী ও পূর্ব হাজিপুর শালবাগান যেন গাছের শুকনো ঝরা পাতার বিছানা হয়ে গেছে।
নতুন পাতায় ভরে ওঠার আগে এ সময় শালগাছের পুরোনো পাতা ঝরে যায়। এই পুরোনো পাতা ঝরার সঙ্গে জড়িয়ে আছে উল্লিখিত শালবাগানের আশপাশের হাজারো শ্রমিক আর নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন-জীবিকা। শ্রমজীবী এসব মানুষ পাতা ঝরার এ মৌসুমটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকেন।
গতকাল বুধবার থুমনিয়া শালবাগানের পাশের রাস্তায় এক্তিয়ারপুর গ্রামের ভাদুরী রানী (৫৬), ভাদুয়া গ্রামের কানামণি রায় (৬৫), থুমনিয়া গ্রামের ববিতা রায়, সুমিতা রায়, ভামদা গ্রামের সেতারা বেগমসহ (৫০) আট-দশজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, ফাল্গুন-চৈত্র মাসে গাছের পাতা ঝরে। এ সময় বিভিন্ন জায়গার মানুষ সারা বছর রান্নার কাজের জন্য পাতা সংগ্রহ করে রাখেন। গৃহস্থবাড়ির পাতা সংগ্রহের চাহিদার সুযোগে শ্রমিকেরাও সজাগ হয়ে ওঠেন। তাঁরা প্রতিদিন শালবাগানে এসে পাতা কুড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। হাতে প্রতিদিনের কাজ থাকায় শ্রমিকদের মধ্যে দেখা দেয় আনন্দ।
এর আগে সোমবার দুপুরে মসলন্দপুর গ্রামের ভ্যানচালক সুশীল চন্দ্র রায় বলেন, ‘একটি ভ্যানে ১০-১২ বস্তা পাতা বহন করা যায়। ৩০-৩৫ টাকায় এক বস্তা পাতা বিক্রি হয়। দিনে দুইবার যাতায়াত করি। পাতা বিক্রি করলে দৈনিক খরচ বাদে ৫০০ টাকা টেকে। চৈত্রের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমার এই ব্যবসা চলবে। বছরের মধ্যে এ মাসেই আমার বেশি টাকা আয় হয়।’
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাদুয়া গ্রামের প্রমীলা রানী বলেন, ‘আমি শালবাগান থেকে পাতা কুড়িয়ে মাথায় করে গেরস্তের বাড়িতে নিয়ে যাই। এক বস্তার দাম ৩০-৩৫ টাকা পাই। দিনে আট-নয় বস্তা বহি। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পাতা বহে দিনে সাড়ে তিন শ টাকা পাওয়া যায়।’
গাছের গোড়ায় জমে থাকা শুকনো পাতাগুলো দ্রুত সরিয়ে নেওয়াতে খুশি বন বিভাগের লোকজনও।
পীরগঞ্জ বন বিট কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পাতাগুলো দ্রুত নিয়ে গেলে আমরা নিশ্চিন্ত হই। কেননা, শুকনো পাতা পড়ে বিছানার মতো স্তূপ হয়ে আছে শালবাগান। যদি আগুন লাগে, তাহলে বাগানের সর্বনাশ হয়ে যাবে। তাই আমরা চাই লোকজন দ্রুত পাতা নিয়ে যাক, আর শালবনগুলোও বিপদমুক্ত হোক।’