ঝুঁকি নিয়ে চলছে মৌচাক মার্কেট, আনারকলির পার্কিং দখল

মৌচাক মার্কেটের চারদিকে কোনো ফাঁকফোকর নেই। সর্বত্র দোকান। পার্কিংটাও দখলে। মার্কেটের ভেতরে গুমোট পরিবেশ। সংস্কারের জন্য বন্ধ রাখার আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ঈদের সময়ে আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে এখনো চলছে। মৌচাক লাগোয়া আনারকলি মার্কেটের অবস্থাও ভালো নেই। চলন্ত সিঁড়ি নষ্ট হয়ে আছে আড়াই বছর ধরে।
রাজধানীর পূর্বাঞ্চলের মানুষের পছন্দের মার্কেট মৌচাক-আনারকলি। কম দামের পণ্যের জন্য মার্কেটটি বেশ পরিচিত ছিল। কিন্তু দিনে দিনে আলোচিত মার্কেটটি জঞ্জালে পরিণত হচ্ছে। মৌচাক মার্কেটের চারপাশে এখন বিশৃঙ্খল অবস্থা। কোনটা ফুটপাত আর কোনটা মার্কেটের অংশ, তা আলাদা করে বোঝার উপায় নেই। যে যেখানে জায়গা পেয়েছেন, বসেছেন। মার্কেটের সামনেও একই অবস্থা। নানান ধরনের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন হকাররা। মার্কেটের পেছনে আছে পার্কিং। গতকাল সোমবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, একটু ফাঁকা জায়গায় পাঁচটি গাড়ি রাখা। বাকি অংশে হকাররা দোকান সাজিয়ে বসেছেন। মার্কেটের পার্কিংয়ের জায়গা দখল করে দোকান বসানো হয়েছে। মার্কেটের দুই পাশ দিয়ে আগে পায়ে হাঁটার পথ ছিল। দোকান তুলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ফুটপাতে দোকানের অনুমতির বিষয়ে হকার মো. সুমন বলেন, মার্কেটের ব্যবসায়ীরাই তাঁদের বসার অনুমতি দিয়েছেন। মার্কেটের পশ্চিম অংশ দিয়ে পেছন দিকে যাওয়ার জায়গাটিতে জুয়েলারি, জুতা, পোশাক, কসমেটিকসসহ বিভিন্ন রকমের পণ্য নিয়ে বসে আছেন হকাররা। জায়গাটি সরু হয়ে যাওয়ায় একসঙ্গে একজনের বেশি হাঁটা যায় না। কেনাকাটা করতে আসা নাসরিন জাহান বলেন, ‘ফুটপাতে হাঁটা-চলায় সমস্যা তো হয়ই। কিন্তু এদের কাছ থেকেও আমরা কিনে থাকি।’
গত ৬ জুন একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট মৌচাক মার্কেট বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সুপারিশ অনুযায়ী সংস্কারের পর এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সক্ষমতা সনদ না পাওয়া পর্যন্ত মার্কেটের দোকানপাট বন্ধ রাখতে বলা হয়। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরপর ৭ জুন ছয় সপ্তাহ খোলা রাখা যাবে বলে আরেকটি নির্দেশ দেন আদালত। স্থগিতাদেশ নিয়ে মার্কেট এখনো চলছে।
মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ মার্কেটের সঙ্গে অনেক মানুষের রুটি-রুজি জড়িত। দোকানমালিক কর্তৃপক্ষ দোকান খুলতে বলে, তাই তাঁরা বসছেন। তাঁদের মতে, এ মার্কেটে তেমন কোনো সমস্যা নেই। ভবনমালিক ও বণিক সমিতিপক্ষের ঝামেলার শিকার হচ্ছেন তাঁরা।
এ বিষয়ে মৌচাক মার্কেটের মালিকানা প্রতিষ্ঠান জেড কে লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মো. বশির উদ্দিন বলেন, বণিক সমিতি বলতে পারবে মার্কেট চলার ব্যাপারে।
মৌচাক মার্কেট বণিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি সাইদুল রহমান বলেন, মার্কেট নিয়ে যে মামলা চলছে, তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা মার্কেট চালাতে পারবেন। সংস্কারের বিষয়ে বললেন, শীত নাগাদ কাজ শুরু হতে পারে।
মৌচাক মার্কেট লাগোয়া আনারকলি সুপার মার্কেট। সিদ্ধেশ্বরী বালক উচ্চবিদ্যালয়ের পাঁচতলা এ মার্কেটে চলন্ত সিঁড়ি একটি। তবে সেটি নষ্ট। একটিমাত্র লিফট। সিঁড়ির জায়গায় দোকান দেওয়া হয়েছে। টেইলরের কাছে এসেছেন আনজুম আরা। তিনি বলেন, ‘সিঁড়িটা থাকলে সুবিধা হতো। লিফট দিয়ে বারবার ফ্লোরে ফ্লোরে নামা যায় না।’ মার্কেটের দোকানি মো. জামিল বলেন, প্রায় আড়াই বছর ধরে এই চলন্ত সিঁড়িটি নষ্ট। মাঝে একবার ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু আবার নষ্ট হয়। মার্কেটের ভেতরের পরিবেশও নোংরা। মংলা-আবর্জনা পড়ে থাকে যেখানে-সেখানে। আনারকলি সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি সৈয়দ মুফিজুল বলেন, ‘এটা স্কুলের দেখার কথা।