ঝুঁকিতে না থেকেও পাচ্ছেন ঝুঁকি ভাতা!

কোনো ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে না থেকেও ঝুঁকি ভাতা পাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নন-অপারেশনাল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের অপারেশনাল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ফায়ার সার্ভিসের সূত্র জানায়, ফায়ার সার্ভিসে পোশাকধারী ও সাদা পোশাকধারী—এ দুই ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। পোশাকধারীরা অপারেশনাল কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাঁরা অগ্নিনির্বাপণ, পানি বা অন্য উদ্ধার অভিযানে যান। আর সাদা পোশাকধারী বা নন-অপারেশনাল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাপ্তরিক কাজ করেন। তাঁরা বাহিনীর হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, উচ্চমান সহকারী, করণিক, অফিস সহকারী পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি ভোগ করা এবং নয়টা-পাঁচটা অফিস করা এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনো অভিযানে যেতে হয় না। গত বছরের নভেম্বরে তাঁদের অভিযানসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো ঝুঁকি ভাতা দেওয়ার বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
জানা গেছে, পুলিশের কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ঝুঁকি ভাতা দেওয়া হয়। করণিক বা অফিস সহকারী পদের কেউ ঝুঁকি ভাতা পান না। আনসার ও ভিডিপি এবং কারা অধিদপ্তরের সিভিল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঝুঁকি ভাতা পান না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফায়ার সার্ভিসের একজন অপারেশনাল কর্মকর্তা বলেন, ‘ঝুঁকির মধ্যে না থেকেও দাপ্তরিক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঝুঁকি ভাতা পাওয়ায় অপারেশনাল কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এ প্রথার অবসান চাই।’
তবে নন-অপারেশনাল তত্ত্বাবধায়ক পদমর্যাদার কর্মকর্তা আবদুল মান্নান বলেন, ‘অপারেশনাল কর্মকর্তারা যুদ্ধে যান। আর আমরা যুদ্ধের রসদ জোগাড় করি। আর এটা তো সরকার দিয়েছে। তাঁদের সমস্যা কী?’
ফায়ার সার্ভিসের হিসাবমতে, ফায়ার সার্ভিসে ৩৭৫ জন নন-অপারেশনাল কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। একজন কর্মকর্তা-কর্মচারী মাসে গড়ে চার হাজার ২০০ টাকা ঝুঁকি ভাতা পান। এ হিসাবে প্রতি মাসে সরকারের ১৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত এ জন্য ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ নিয়ে ক্ষুব্ধ অপারেশনাল কর্মকর্তারা কয়েক মাস আগে গোপনে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বরাবর একটি স্মারকলিপিও দেন। সেখানে নন-অপারেশনাল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঝুঁকি ভাতার বিরোধিতা করা হয়েছে।
ঝুঁকি ভাতার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আলী আহমদ খান বলেন, ‘নন-অপারেশনাল কর্মকর্তারা আমাদের সহযোগী। তাঁরাও মাঝে মাঝে ফায়ার সার্ভিসের কাজে যান। বিজিবির নন-অপারেশনাল কর্মকর্তারাও তো সীমান্তে যান না। তাই বলে তাঁরা কি ঝুঁকি ভাতা নেন না?’
স্বরাষ্ট্রসচিব মোজাম্মেল হক বলেন, ‘নন-অপারেশনাল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঝুঁকিতে না থাকলেও যাঁরা ঝুঁকির কাজ করেন, তাঁদের সহযোগিতা করেন। হয়তো অপারেশনাল কর্মকর্তারা তাঁদের ঝুঁকি ভাতা বাড়ানোর অংশ হিসেবে এর বিরোধিতা করছেন।’