ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান, আতঙ্ক

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ভাঙা স্থান দেখাচ্ছেন নালিতাবাড়ীর নামাছিটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক।  ছবি: প্রথম আলো
ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ভাঙা স্থান দেখাচ্ছেন নালিতাবাড়ীর নামাছিটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক। ছবি: প্রথম আলো

বিদ্যালয় ভবনটি দূর থেকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই, কিন্তু ভেতরে গেলে চোখে পড়ে ছাদে ও দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ার চিত্র। এই ভবনের চারটি কক্ষই ঝুঁকিপূর্ণ। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন জেনেও সেখানে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

এই চিত্র শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌর শহরের নামাছিটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এভাবে ঝুঁকি নিয়ে তিনটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

পৌর শহরের নামাছিটপাড়া এলাকায় ১৯৭৩ সালে ৩৩ শতাংশ জমির ওপর নামাছিটপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৯৪ সালে বিদ্যালয়ের জন্য চারকক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারি হয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫২। শিক্ষক রয়েছেন ৫ জন।

শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয় সম্প্রসারণের জন্য ২০১৪ সালে পাশেই তিনতলা ফাউন্ডেশনের দুই কক্ষের একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। নতুন এই ভবনে প্রাক্‌–প্রাথমিক ও পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়। আর চার কক্ষের ভবনে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বসার জন্য একটি অফিস কক্ষসহ তিনটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। এই তিনটি শ্রেণিকক্ষে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠদান করা হয়। অফিস কক্ষসহ তিনটি শ্রেণিকক্ষেই ২০১৫ সাল থেকে বড় বড় ফাটল সৃষ্টি হয়। ভবনের ছাদের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। চারটি কক্ষের বিভিন্ন স্থানে দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পলেস্তারা খসে পড়ায় ভবনটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে থাকে। ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় অনেক অভিভাবক তাঁদের ছেলেমেয়েকে বিদ্যালয়ে আসতে দিতে চান না।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফা আক্তার জানায়, ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে তারা ভয়ে ভয়ে ক্লাস করে।

শিক্ষক নাছিমা আক্তারা জানান, চার বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান করতে হচ্ছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। অনেকে তাঁদের ছেলেমেয়েদের বিদ্যালয়ে আসতে দিতে চান না। এতে দিন দিন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমছে।

আরেক শিক্ষক মোশারফ হোসেন জানান, একবার ইউএনওর উপস্থিতিতে ক্লাস চলাকালে ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে তাঁর মাথার ওপর পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর ওপরও পড়েছে। এ নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীরা ভয়ে থাকে। ফলে তারা ক্লাসে ঠিকমতো মনোযোগী হতে পারে না। দ্রুত এ ব্যাপারে একটা পদক্ষেপ
নেওয়া প্রয়োজন। 

ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বিকল্প পাঠ্যদানের পদক্ষেপ নিতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি পরিদর্শন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ জানান, ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নিতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গেও যোগাযোগ কো হয়েছে। এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজিল্লা তুন নেছা জানান, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ জেনে তিনি দেখতে গিয়েছিলেন। তাঁদের সহযোগিতায় উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের মাধ্যমে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে বড় ধরনের বাজেট চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। আশা করছেন খুব তাড়াতাড়ি বরাদ্দ পাওয়া যাবে।