টমেটোখেতে নাবিধসা রোগ, চাষিরা দিশেহারা

পঞ্চগড় সদর উপজেলার বলেয়াপাড়া গ্রামের নাবি ধসা রোগে আক্রান্ত একটি টমেটোখেত l ছবি: প্রথম আলো
পঞ্চগড় সদর উপজেলার বলেয়াপাড়া গ্রামের নাবি ধসা রোগে আক্রান্ত একটি টমেটোখেত l ছবি: প্রথম আলো

পঞ্চগড়ে কয়েক শ একর জমির টমেটোখেত নাবিধসা (লেট ব্লাইট) রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলার টমেটোচাষিরা। নাবিধসা রোগে আক্রান্ত খেতের টমেটোগাছের পাতা, ফুল ও ফসল ঝলসে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিভিন্ন কীটনাশক ও বালাইনাশক ওষুধ ব্যবহার করেও কোনো লাভ হচ্ছে না বলে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত মৌসুমে পঞ্চগড়ের ২ হাজার ২৫২ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে টমেটো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমি। এরই মধ্যে জেলার পাঁচটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় টমেটো লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩ হাজার ১১৪ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। এসব জমি থেকে উৎপাদনও শুরু হয়েছে।

সদর উপজেলার হাফিজাবাদ, হাড়িভাসা কামাত কাজলদিঘি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি টমেটোখেতই কমবেশি লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত। কৃষকেরা সন্ধ্যায় ভালো টমেটোখেত রেখে বাড়ি ফিরছেন। আর পরদিন এসে দেখছেন খেতের টমেটোগাছের প্রায় সব পাতাই জ্বলেপুড়ে গেছে।

সদর উপজেলার ঝেচুপাড়া এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি গত বছর ৫ বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করে প্রায় ৭ লাখ টাকা আয় করেছি। সেই সাহসে এবারও ৯ বিঘা জমিতে টমেটো লাগিয়েছি। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচও করেছি। কিন্তু হঠাৎ করে লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হয়ে আমার সব টমেটোগাছের সঙ্গে ফুল-ফল রাতারাতি জ্বলেপুড়ে গেছে। লাভের আশায় আমি সবকিছুই এই টমেটোর পেছনে খরচ করেছি। আমি এখন কীভাবে চলব ভেবে পাচ্ছি না।’

বলেয়াপাড়া গ্রামের কৃষক বাবুল হোসেন বলেন, ‘আমি এবার এক একর জমিতে হাইব্রিড জাতের টমেটো আবাদ করেছি। দুটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকার ঋণ আর নিজের সব সঞ্চয় ঢেলেছি টমেটোখেতে। আমি কীভাবে এই ঋণ শোধ করব। এখন আমার মরণ ছাড়া উপায় নেই।’

পঞ্চগড় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুল হক কৃষকদের অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘হঠাৎ বৈরী আবহাওয়া আর অতিবৃষ্টিতে নাবি (লেট) টমেটোখেতে লেট ব্লাইট (নাবিধসা) রোগ দেখা দিয়েছে। এ রোগের কারণে কৃষকেরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। কৃষকদের এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য পঞ্চগড় কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের সচেতন করতে লিফলেট বিতরণসহ নানা প্রকার সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে পর্যাপ্ত রোদ হলে এই রোগ নির্মূল হবে। এরই মধ্যে আমরা ছত্রাকনাশক ওষুধ পাতার ওপর-নিচে স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি। আশা করছি, কৃষকেরা সচেতন হলে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।’

শীতপ্রবণ পঞ্চগড় জেলায় দুই দফায় টমেটোর চাষ হয়। প্রথম দফায় আমন ধান ওঠার পরপরই শীতকালে শুরু হয় আগাম টমেটো উৎপাদন। আর দ্বিতীয় দফায় গ্রীষ্মকালে উৎপাদন হয় লেট বা নাবি টমেটো, যা ওই সময় দেশের আর কোথাও হয় না।