টাকার অভাবে কাজের গতি কমে গেছে, দাবি ঠিকাদারের

ছবি: প্রথম আলো

পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পে ঠিকাদারকে সময়মতো বিল পরিশোধ না করার অভিযোগ উঠেছে। চায়না ঠিকাদার দাবি করছে, গত সাত মাসের কাজের কোনো বিল তারা পায়নি, যা প্রায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ। এ জন্য কাজের গতি কমিয়ে দিতে হয়েছে।

পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকায় রয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৯ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। চীনের অর্থায়নে জি টু জি পদ্ধতিতে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর ঠিকাদার চীনের চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড।

ব্যয়ের দিক থেকে রেলের সবচেয়ে বড় এই প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৬ সালে। প্রথমে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। এরপর ব্যয় বেড়ে ৩৯ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার দিন থেকেই সেতু দিয়ে ট্রেন চালু করার সিদ্ধান্ত আছে সরকারের।

প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত জানুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ৩৯ শতাংশ। মাওয়া থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশকে অগ্রাধিকার দিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। এই অংশের কাজ হয়েছে ৬৫ শতাংশ।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, করোনা সংক্রমণের মধ্যে অন্য প্রকল্পে কাজের গতি কম থাকলেও পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পের কাজে বেশ গতি ছিল। এ জন্য চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ করা ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকার চেয়ে বেশি কাজ হয়েছে। এ জন্য সংশোধিত বাজেটে বাড়তি ১ হাজার ৮০১ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এখনো তা পাওয়া যায়নি। এ জন্যই ঠিকাদারের বিল পরিশোধে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।

চায়না রেলওয়ে গ্রুপের হয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফোরথট পিআর নামে একটি প্রতিষ্ঠান। বুধবার তাদের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকার একই দিনে পদ্মা সেতু এবং এর রেলপথ—দুটোই চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু তহবিল সংকট গোটা প্রকল্পটির সুষ্ঠু বাস্তবায়নে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থের অপর্যাপ্ততাকে কেন্দ্র করে প্রকল্পটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি) এখন সঠিক সময়ের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে বিপর্যয়ের সম্মুখীন।

সিআরইসি প্রদত্ত তথ্য অনুসারে, ২০১৮ প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য অগ্রিম বিল (মোবিলাইজেশন পেমেন্ট) পেয়েছে। এরপর প্রতিবারই অন্তর্বর্তীকালীন বিল পেতে অনেক বেশি সময় লেগেছে। যেমন গত বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর সময়কালের বিল জমা দেওয়া হয় ২৭ অক্টোবর। ব্যয়ের স্থানীয় অংশ রেল ছাড় করেনি। এ জন্য চীনা অংশও পাওয়া যায়নি।

সিআরইসি বলছে, এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রী কেনা এবং সহযোগী ঠিকাদার ও সরবরাহকারীদের সময়মতো পাওনা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এ জন্য প্রকল্পের কাজের গতি কমে এসেছে এবং ব্যয়ের পরিমাণও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি, প্রকল্পের অধীনে রেলের জন্য গত বছরের জুলাইয়ের মধ্যে ১০০ কোচ সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ এখনো কোচ নির্মাণের কোনো নির্দেশনা দেয়নি। সিআরইসির পক্ষ থেকে একাধিকবার বাংলাদেশ রেলওয়েকে জানানো হয়েছে, কোচ নির্মাণ এবং তা হস্তান্তর হতে দুই বছর সময় লাগবে।

এই বিষয়ে প্রকল্পের পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দীন এ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা বিজ্ঞপ্তি দেয়নি বলে জানিয়েছে। ফলে বিল আটকে থাকার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চান না। পদ্মা সেতুর অর্থের সংকট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই অর্থবছরে কাজ বেশি হয়েছে। ফলে টাকা আরও লাগবে। সেটা তাঁরা সরকারের কাছে চেয়েছেন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পেয়ে যাবেন বলে আশা করছেন।