টাকার অভাবে বাংলা হচ্ছে না জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, টাকার অভাবে বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার প্রক্রিয়া থমকে আছে। আজ রোববার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার বিষয় কেন আটকে আছে জানতে চাইলে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘টাকার জন্য আটকে আছে। আমরা টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করতে পারিনি। অনেক টাকা! প্রাথমিক আলোচনায় প্রতিবছর ৬০০ মিলিয়ন ডলার (৫ হাজার কোটি টাকা) দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।’ তিনি জানান, ভাষাভাষীর দিক থেকে বাংলা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ভাষা। প্রায় ৮৭ কোটি লোক এ ভাষায় কথা বলে। বাংলাকে দাপ্তরিক ভাষা করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের কোনো আপত্তি নেই।

জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘জাতিসংঘ গঠনের শুরুতে পাঁচটি ভাষা ছিল। পরে জাতিসংঘের দাপ্তরিক কাজে যুক্ত হয় আরবি। এরপর প্রায় ১৯ বছর আরবি ভাষাভাষী দেশগুলো এর খরচ বহন করছে। জাতিসংঘ সব সময় খরচ নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন থাকে। জাতিসংঘ আমাদের বলেছে, তোমাদের বাংলা চালু করলে তো খরচ হবে, খরচটা কে দেবে? তোমরা যদি দাও, তাহলে তোমরা সদস্যরাষ্ট্রকে বলো, তাহলে অসুবিধা নেই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, জাপানি, হিন্দি ও জার্মান ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষার জন্য প্রস্তাব কর হয়েছিল। আর্থিক কারণে ওই তিন ভাষাও জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক ভাষা হতে পারেনি।

ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের কনিষ্ঠ কূটনীতিকদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওই অনুষ্ঠান আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফরেন সার্ভিস একাডেমি প্রাঙ্গণে তৈরি অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিদেশি কূটনীতিকেরা।

আলোচনা অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, একাডেমির রেক্টর মাসুদ মাহমুদ খন্দকার বক্তব্য দেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোতে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।

২০১০ সালের ২১ অক্টোবর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে পাস হওয়া সর্বসম্মত এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এখন থেকে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করবে জাতিসংঘ।