টানা বৃষ্টিতে খেতে পানি, ফসলের ক্ষতি

বরিশাল বিভাগসহ চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফরিদপুর ও মানিকগঞ্জে আধপাকা ধানগাছ নুইয়ে পড়েছে। মাঠে পানি জমায় রবিশস্যের ক্ষতি হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বৃষ্টির পানিতে কেটে রাখা ধান তলিয়ে গেছে। গতকাল দুপুরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজি এলাকায়
ছবি: এম সাদেক

‘দুই একর জমির মোটা আমন শ্যাষ। এক মুট (এক মুঠো) ধানও ঘরে নেতে পারমু না। পাকা ধানের গাছ হুইয়্যা পড়ছে। সব ধান খইরাইয়্যা (ঝরে) গ্যাছে।’ গতকাল মঙ্গলবার কথাগুলো বলছিলেন বরগুনার তালতলী উপজেলার মনুখেপাড়া গ্রামের কৃষক মজিবর শরীফ। আর চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার লুধুয়া গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান বললেন, ‘এবার ৪৪ শতাংশ জমিতে সবজি লাগাইছিলাম। ফলনও ভালা অইছিল। গত তিন দিনের বৃষ্টিতে আমার সবজিখেত পানিতে তলাইয়া গেছে।’

ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর প্রভাবে গত রোববার থেকে গতকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়েছে প্রায় সারা দেশে। এতে অনেক জেলার কৃষক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিশেষ করে বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোসহ চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফরিদপুর ও মানিকগঞ্জে বিস্তীর্ণ মাঠের আধপাকা ধানগাছ নুইয়ে পড়েছে। অনেক এলাকায় মাঠে পানি জমে যাওয়ায় আমনের বীজতলাসহ শীতকালীন সবজি ও রবি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির তালিকায় রয়েছে গম, ভুট্টা, মসুর, খেসারি, মটর, মাষকলাই, সরিষা, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ধনে, কালিজিরা, মিষ্টি আলু, মেথি, যব, শসা, গাজর, টমেটো, আলু ইত্যাদি।

বরিশালের বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ বলছে, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী আমনের স্থানীয় জাতসহ শীতকালীন শাকসবজির বেশি ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিক হিসাবে ২৫ হাজার হেক্টর আমনের খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর খেসারির খেত, ৭ হাজার ৫০০ হেক্টরের শীতকালীন শাকসবজি, ২ হাজার ১৫৬ হেক্টরের শর্ষে, ৫৭৩ হেক্টরের মসুর ডাল, ২০৩ হেক্টরের গম, ২৮৮ হেক্টরের আলু ও ৩২ হেক্টরের আগাম তরমুজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফরিদপুর কৃষি বিভাগ জানায়, জেলার ৯টি উপজেলার ৬৬ হাজার ১৮৪ হেক্টর জমির মধ্যে ১৯ হাজার ৭০১ হেক্টর জমির ফসল বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে, যা মোট জমির ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

টানা বৃষ্টিতে চাঁদপুরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আলুর। এ ছাড়া শর্ষে, গম, বোরো বীজতলা ও শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মতলব উত্তরের মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের ভেতরে প্রায় ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। কৃষকেরা বলেন, জলাবদ্ধতা দূর করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

কৃষকদের অভিযোগ, বেড়িবাঁধের ভেতরে অনেক সেচ ও পানিনিষ্কাশন খাল অবৈধভাবে দখল করে সেখানে রাস্তা, দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা বানিয়েছেন প্রভাবশালীরা। এ কারণে নিচু জমিতে আটকে থাকা পানি সরছে না। তবে চাঁদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. রুহুল আমিন বলেন, ওই বেড়িবাঁধের ভেতরে জমির জলাবদ্ধতা দূর করতে পাউবোর দুটি পাম্প সার্বক্ষণিক কাজ করছে।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদকপ্রতিনিধিরা]