টিকা পেয়েছেন ২.২৩% মানুষ

টিকাদানে অনেক দেশকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। কর্মকর্তারা মনে করছেন, এই সাফল্য তাঁরা ধরে রাখতে পারবেন।

করোনার টিকা
প্রতীকী ছবি : রয়টার্স

এক মাসে দেশের প্রায় ৩৭ লাখ মানুষকে করোনার টিকা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, যা মোট জনসংখ্যার ২ দশমিক ২৩ শতাংশ। টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বৈশ্বিকভাবে অনেক ওপরে। কিছু ক্ষেত্রে টিকা উৎপাদনকারী প্রতিবেশী দেশ ভারতকেও পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক তথ্য-উপাত্তবিষয়ক দাতব্য প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল চেঞ্জ ডেটা ল্যাব নিয়মিতভাবে করোনার টিকা প্রয়োগবিষয়ক বৈশ্বিক তথ্য প্রকাশ করছে। গতকাল শনিবার তারা সবচেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে এমন ২০টি দেশের তালিকা প্রকাশ করেছে। তালিকার ১৭ নম্বরে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এ পর্যন্ত দেশটির ৮ কোটি ৫০ লাখের বেশি মানুষ টিকা পেয়েছেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতে ১ কোটি ৯৫ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছেন।

বাংলাদেশে গণটিকাদান শুরু হয় ৭ ফেব্রুয়ারি। এই এক মাসে ছুটির দিন বাদে মোট ২২ দিন মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। গতকাল টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ৯৮৩ জন। এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন ৩৬ লাখ ৮২ হাজার ১৫২ জন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উন্নত দেশ কানাডার চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে। কানাডায় এ পর্যন্ত ২২ লাখ মানুষ টিকা পেয়েছেন।

শুধু কানাডা নয়, প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, আফগানিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত ছাড়া অন্য যে দেশ ও অঞ্চল বেশি মানুষকে টিকা দিয়েছে সেই তালিকায় আছে: চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, তুরস্ক, ইসরায়েল, জার্মানি, রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, ইতালি, চিলি, স্পেন, মরক্কো, পোল্যান্ড।

বাংলাদেশ মূলত একটি উৎস থেকে টিকা পাচ্ছে। সেটি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। একাধিক উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ জোরদার করা দরকার।
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান, চেয়ারম্যান, ফার্মাকোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ

স্বাস্থ্যসচিব আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিকা কার্যক্রমের একটি ঐতিহ্য আমাদের আছে। করোনার টিকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক টিকাদান কার্যক্রম নজরদারিতে রেখেছেন। এর সঙ্গে প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার মাঠকর্মী এই কাজে যুক্ত। এসব কারণে বাংলাদেশের অবস্থানকে আমরা ওপরে নিতে পেরেছি।’

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট কোভিশিল্ড নামে উৎপাদন করছে। এই টিকা ব্যবহার করছে বাংলাদেশ। ভারত সরকার ২০ লাখ টিকা বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে। ৭০ লাখ টিকা বাংলাদেশ সরকার কিনেছে। এই টিকা সরবরাহের দায়িত্বে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। ৩ কোটি টিকা কেনার চুক্তি আছে বাংলাদেশ সরকার, সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মার মধ্যে। প্রথম চালানে ৫০ লাখ ও দ্বিতীয় চালানে ২০ লাখ টিকা সরবরাহ করেছে বেক্সিমকো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ মূলত একটি উৎস থেকে টিকা পাচ্ছে। সেটি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। একাধিক উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ জোরদার করা দরকার।

এ পর্যন্ত বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। মাতৃ, নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক সামছুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান হারেই টিকা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। কিছুদিন পরে দৈনিক টিকাদান সামান্য বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে। তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক উদ্যোগে কোভ্যাক্স থেকে বিভিন্ন দেশে টিকা সরবরাহ করা শুরু হয়েছে। খুব শিগগির বাংলাদেশে সরবরাহ করার খবর আমরা পাব।’

বাংলাদেশ করোনার টিকা উৎপাদন করছে না। গ্লোবাল চেঞ্জ ডেটা ল্যাবের হিসাব বলছে, কিছু মাপকাঠিতে উৎপাদনকারী দেশকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ১০০ জনের মধ্যে ২ দশমিক ৬ জনকে টিকা দিয়েছে। প্রতিবেশী ভারতে এই হার ১ দশমিক ৪। বিশ্বে এই হার সবচেয়ে বেশি ইসরায়েলে, ৯৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ গর্ভবতী নারী ছাড়া ৪০ বছরের বেশি বয়সী সব নাগরিককে টিকা দেওয়ার কথা বলেছে। দেশে ৪০ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ কোটি। বর্তমান হারে টিকা দেওয়া চলতে থাকলে সব মানুষকে টিকা দিতে আট মাসের বেশি সময় লাগবে।