ট্যাংগ পুরস্কার পেল বাংলাদেশের বেলা

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সম্মানজনক ট্যাংগ পুরস্কার পেয়েছে। তাইওয়ান-ভিত্তিক দ্য ট্যাংগ ফাউন্ডেশন থেকে বাংলাদেশের বেলা, কলম্বিয়ার দ্য জাস্টিসিয়া ও লেবাননের দ্য লিগাল এজেন্ডা নামের সংগঠনকে যৌথভাবে আইনের শাসন ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়েছে।

আজ বাংলাদেশ সময় সকাল আটটায় পুরস্কার কমিটির সভাপতি অধ্যাপক জুয়ান রং ইয়েহ সংগঠনগুলোর নাম ঘোষণা করেন। এই পুরস্কারের জন্য সংগঠন তিনটিকে যৌথভাবে ১৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে গবেষণার জন্য তারা ৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার পাবে। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে পুরস্কারটি দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই পরিবেশগত সুশাসন ও ক্ষমতাবানদের কারণে পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছি। আমাদের কাজের মূল লক্ষ্য জনস্বার্থ রক্ষা করা। তার জন্য যে পুরস্কার পেলাম, তা আমাদের আগামী দিনের পরিবেশ সুশাসন প্রতিষ্ঠান কাজকে আরও এগিযে নেবে।’

বাংলাদেশের বেলাকে এই পুরস্কার দেওয়ার কারণ তুলে ধরতে গিয়ে ট্যাংগ ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, পরিবেশ সুরক্ষার দিক থেকে দুর্বল অবস্থায় থাকা এবং আইনের শাসনের নানা ঘাটতিতে থাকা একটি পরিস্থিতিতে বেলা কাজ করছে। আইনের শাসনের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে তারা একই সঙ্গে জনস্বার্থে মামলা করছে। আবার জনসচেতনতা তৈরিতে নানা প্রচারণা ও গবেষণা করছে। তারা এ পর্যন্ত ৩০০টিরও বেশি জনস্বার্থমূলক মামলা পরিচালনা করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সর্বশেষ ২০১৭ সালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ খালগুলো দখলমুক্ত করতে আইনি লড়াই এ নামে বেলা। খালগুলোর পানিপ্রবাহ ঠিক করতে বেলা উচ্চ আদালতে মামলা করে। উচ্চ আদালত সরকারকে ওই খালগুলো দখলমুক্ত ও পরিষ্কার করার জন্য নির্দেশ দেয়। ঢাকার বিপুল পরিমাণে মানুষ প্রতি বছর বর্ষায় যে জলাবদ্ধতার শিকার হচ্ছে, তা থেকে রক্ষায় মামলা একটি আদর্শ উদাহরণ হয়ে থাকবে।

তাইওয়ানের বেসরকারি উদ্যোক্তা ডক্টর স্যামুয়েল ২০১২ সালে এ ফাউন্ডেশন শুরু করেন। ২০১৪ সাল থেকে তিনটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দিয়ে আসছে আইনের শাসন, টেকসই উন্নয়ন ও জৈবপ্রযুক্তি বিজ্ঞানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে তারা এই পুরস্কার দিয়ে থাকে।

১৯৯২ সালে ড. মহিউদ্দিন ফারুকের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বেলা একদল তরুণ আইনবিদকে নিয়ে যাত্রা শুরু করে। সংস্থাটি ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্যের আমদানি ও ব্যবহার বন্ধে, বর্জ্যের ঝুঁকিতে থাকা শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা, নদী দখল-দূষণ রোধ, জলাশয় রক্ষা; শিল্পদূষণ, যানবাহনের দূষণ, বায়ুদূষণ, মাটিদূষণ, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ব্যবহার রোধ, পাহাড়-বন-কৃষিজমি রক্ষায় সংগঠনটি এখনো আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

এর আগে বেলা ২০০৩ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ সংস্থা থেকে গ্লোবাল ৫০০ রোল অব অনার্স পুরস্কার, ২০০৭ সালে সরকার থেকে দেওয়া পরিবেশ পুরস্কার, ২০০৯ সালে এম সলিমুল্লাহ মেমোরিয়াল গোল্ড মেডেল পুরস্কার পায়। বেলার প্রধান নির্বাহী ২০০৯ সালে গোল্ডম্যান এনভায়রনমেন্টাল পুরস্কার ও র‍্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার পায়।