ডাকসুতে সাবেক হলেও ঢাবি সিনেটে বহাল থাকছেন তাঁরা

ভিপি নুরুল হক, জিএস গোলাম রাব্বানী, এজিএস সাদ্দাম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত
ভিপি নুরুল হক, জিএস গোলাম রাব্বানী, এজিএস সাদ্দাম হোসেন। ছবি: সংগৃহীত

গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সর্বশেষ কমিটি (নুরুল-রাব্বানী) ভেঙে গেছে৷ তবে ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ডাকসুর ‘মনোনয়নে’ বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের শিক্ষার্থী-প্রতিনিধি হওয়া পাঁচ নেতা তাঁদের উত্তরসূরি (পরবর্তী সিনেট সদস্য) আসা পর্যন্ত দায়িত্বে বহাল থাকছেন৷ সিনেটে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগটি তাঁরা পাবেন নিজেদের ছাত্রত্ব থাকা পর্যন্ত৷

এই পাঁচ নেতা হলেন ডাকসুর সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) গোলাম রাব্বানী, সদস্য তিলোত্তমা শিকদার, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন৷ এই পাঁচজনের এখনো ছাত্রত্ব আছে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ২০ (২) ধারায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের শিক্ষার্থী-প্রতিনিধিরা এক বছরের জন্য দায়িত্বে থাকবেন৷ কিন্তু নির্বাচন, মনোনয়ন কিংবা নিয়োগের মাধ্যমে উত্তরসূরি আসার আগ পর্যন্ত তাঁরা দায়িত্ব পালন করবেন৷ তবে শিক্ষার্থী-প্রতিনিধিদের ছাত্রত্ব শেষ হয়ে থাকলে তাঁদের সিনেট সদস্যপদ বাতিল হয়ে যাবে৷ অধ্যাদেশের ২০ (ঠ) ধারা অনুযায়ী, ডাকসু-মনোনীত শিক্ষার্থীদের পাঁচজন প্রতিনিধি বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের সদস্য হন৷
২৩ জুলাই সিনেটের বার্ষিক অধিবেশন (বাজেট সভা) সামনে রেখে সদস্যপদ থাকার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে বলে আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের দুজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি৷ তাঁরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন থেকে চিঠির মাধ্যমে তাঁদের আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানানোর প্রক্রিয়া চলছে৷
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান আজ প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন অনুসরণ করেই সবকিছু করা হবে৷
এর আগে গত বছরের মার্চে ডাকসু নির্বাচনের পর জুনে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক, জিএস গোলাম রাব্বানী, সদস্য তিলোত্তমা শিকদার, ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও তৎকালীন কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে মনোনয়ন দেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান৷ তবে ডাকসুতে আলোচনা না করেই অনির্বাচিত রেজওয়ানুল ও সনজিতকে সিনেট সদস্য করায় তখন বেশ সমালোচনা হয়েছিল।
এরপর দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে দেওয়ার দুদিনের মাথায় ‘ব্যক্তিগত সমস্যার’ কথা বলে সিনেট থেকে পদত্যাগ করেন রেজওয়ানুল৷ পরে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন রেজওয়ানুলের স্থলাভিষিক্ত হন৷
ডাকসুর পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দীর্ঘ ২৯ বছর পর নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ডাকসুর কমিটি ভেঙে গেছে৷ অর্থাৎ, নুরুল-রাব্বানী-সাদ্দামেরা সাবেক হয়ে গেছেন৷ তবে নুরুল ও রাব্বানী পরবর্তী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এবং ‘অসমাপ্ত কাজ’ সমাপ্ত করার যুক্তি দেখিয়ে দায়িত্বে থাকার আগ্রহ ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন৷ যদিও মেয়াদ শেষে পদে থাকাকে ‘অনৈতিক’ বলেছেন সাদ্দাম৷
করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রায় চার মাস ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। বন্ধ আবাসিক হলগুলোও। যদিও ‘সীমিত সামর্থ্য’ নিয়ে চলছে অনলাইন ক্লাস৷ এমন পরিস্থিতিতে ডাকসু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয় বলে মনে করে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই৷
কিন্তু ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের চিন্তা-ভাবনা কিংবা ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ এ নিয়ে সন্দিহান ডাকসুর সদ্য সাবেক নেতারাও৷ তাঁদের দাবি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অবশ্যই আয়োজন করতে হবে ডাকসু নির্বাচন৷
ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক বলছেন, নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি নিয়ে গত মার্চের শুরুতে উপাচার্যের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল৷ তবে উপাচার্য নির্বাচনের বিষয়ে স্পষ্ট কিছু তো বলেনইনি, বরং বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন৷ সরকারও আর ডাকসু নির্বাচন চাইছে না বলে তিনি মনে করেন৷
নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভিপি হিসেবে আমি উপাচার্য মহোদয়কে অনেকবার বলেছি যে ডাকসুর পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে কিছু বলুন৷ কিন্তু কথা শুনে মনে হয়েছে, তিনি নির্বাচন দিতে চান না৷ ডাকসু নিয়ে আসলে সরকারেরও কনসার্ন থাকে৷ সরকারও আর ডাকসু নির্বাচন চাইছে না বলেই হয়তো উপাচার্য এ নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলতে পারছেন না৷ কিছু বললে হয়তো তিনি চাপে পড়তে পারেন, তাই অস্পষ্ট কথা বলছেন৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থী, ছাত্রসংগঠনসহ অন্য অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে এমন অবস্থা তৈরি করব, যাতে প্রশাসন চাইলেও ডাকসু নির্বাচনের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে পারবে না৷ গতবারও চাপে পড়েই প্রশাসন ডাকসু নির্বাচন করতে বাধ্য হয়েছিল৷’
নুরুল বললেন, ‘আমরা ডাকসুর দায়িত্ব ছাড়িনি৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ছাড়ব না৷ ডাকসুর কক্ষের চাবিটা এখনো আমার কাছে আছে৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের সম্মেলন ডেকে, ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বসে পরামর্শ করে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব ছাড়ব৷ ডাকসু নির্বাচন আমরা আদায় করেই ছাড়ব৷’
এ ব্যাপারে উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, যথানিয়মে ও যথাসময়ে ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে সবাইকে জানানো হবে।