ডিআইজি মিজান ও বাছিরের বিরুদ্ধে আরও দুজনের সাক্ষ্য

ডিআইজি মিজানুর রহমান ও দুদকের পরিচালক এনামুল বাছির
ফাইল ছবি

ঘুষ গ্রহণের মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বরখাস্ত হওয়া পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির এবং পুলিশের বরখাস্ত হওয়া উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দুজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

আগামী ৭ অক্টোবর মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য শুনানির নতুন দিন ঠিক করা হয়েছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম এই আদেশ দেন। দুই সাক্ষী হলেন দুদকের উচ্চমান সহকারী জিল্লুর রহমান ও প্রধান সহকারী এ এস এম আবু জাফর বিশ্বাস।

এর আগে  আসামি খন্দকার এনামুল বাছির ও ডিআইজি মিজানুর রহমানকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।

গত ১৮ মার্চ খন্দকার এনামুল বাছির ও মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ঘুষ লেনদেনের মামলায় গত ১৯ জানুয়ারি ডিআইজি মিজানুর রহমান এবং দুদকের পরিচালক এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।

দুদকের পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা সে সময় আদালতে বলেছিলেন, আসামি খন্দকার এনামুল বাছির দুদকের কর্মকর্তা হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডিআইজি মিজানুর রহমানকে অবৈধ সুবিধা দেওয়ার জন্য ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেন।

অপর দিকে ডিআইজি মিজানুর রহমান সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নিজের বিরুদ্ধে আনা অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে রেহাই পেতে দুদকের পরিচালক এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দেন। ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের বিষয়টি দুদক অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেয়।

অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয় এনামুল বাছিরকে। অনুসন্ধান চলাকালে ২০১৯ সালের ৯ জুন বিভিন্ন গণমাধ্যমে খন্দকার এনামুল বাছিরকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন ডিআইজি মিজানুর রহমান—এমন প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় । আসামি ডিআইজি মিজানুর রহমান গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি জাতির সামনে স্বীকার করে নেন। তিনি তখন জানান, এনামুল বাছিরকে তিনি ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছেন। বিষয়টি দুদকের নোটিশে এলে শক্তিশালী একটি বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির কাছে লিখিতভাবে খন্দকার এনামুল বাছির ঘুষের টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

মামলার বাদী শেখ ফানাফিল্যা আদালতে আরও বলেন, সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, মিজানুর রহমান ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি একটি বাজারের ব্যাগে করে ২৫ লাখ টাকা এনামুল বাছিরকে দেওয়ার জন্য রমনা পার্কে যান। আলোচনা শেষে রমনা পার্ক থেকে ডিআইজি মিজানুরের গাড়িতে ওঠেন খন্দকার এনামুল বাছির।

পরে গাড়িটি যখন শাহজাহানপুরে থামে, তখন মিজানুর রহমান ২৫ লাখ টাকা খন্দকার এনামুল বাছিরের হাতে তুলে দেন। পরে খন্দকার এনামুল বাছির গাড়ি থেকে নেমে বাসার দিকে রওনা হন। একইভাবে ২০১৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ডিআইজি মিজানুর রহমান তাঁর আরদালি সাদ্দাম হোসেনকে নিয়ে উত্তরার বাসা থেকে রওনা হন।

পরে রমনা পার্কে মিজানুর রহমানের সঙ্গে দেখা করেন বাছির। তারপর মিজানুরের গাড়িতে উঠে শান্তিনগরে আসেন খন্দকার এনামুল বাছির। তখন ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেন খন্দকার এনামুল বাছির।

এ ছাড়া খন্দকার এনামুল বাছির ডিআইজি মিজানের কাছে একটি গাড়ি দাবি করেন। আর গাড়ি দাবি করার বিষয়টি লিখিতভাবে দুদকের কাছে স্বীকারও করেন বাছির। মামলার বাদী শেখ মো. ফানাফিল্যা আদালতকে জানান, ডিআইজি মিজান ও এনামুল বাছির বেআইনিভাবে অন্যের নামে দুটি সিম ব্যবহার করে নিজেরা খুদে বার্তা আদান-প্রদান করতেন।

একটি সিম কেনা হয় মিজানের বডিগার্ড হৃদয়ের নামে, অন্যটি কেনা হয় মিজানের আরদালি সাদ্দামের নামে। ডিআইজি মিজানের নির্দেশে একটি সিম এবং মোবাইল সেট এনামুল বাছিরকে দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে খুদে বার্তা আদান-প্রদানের বিষয়টি ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন (এনটিএমসি) মনিটরিং সেন্টারের ফরেনসিক কল রেকর্ডিংয়ে প্রমাণিত হয়। এভাবেই ডিআইজি মিজানুর রহমান এবং দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ঘুষ লেনদেন করেন।