ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন লুটপাটের তথ্য প্রকাশ বন্ধ করতে: ফরহাদ মজহার

ফরহাদ মজহার

নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার। তিনি বলেছেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে শুধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নয়, এটা করা হয়েছে লুটপাটের বিরুদ্ধে তথ্য প্রকাশ বন্ধ করতেও।’

আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ফরহাদ মজহার এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বিএনপিপন্থী হিসেবে পরিচিত অংশ ‘১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন চারটি সংবাদপত্র রেখে বাকিগুলো বন্ধ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এ জন্য সাংবাদিকদের একটি অংশ প্রতি বছর এই দিনটিকে ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

ফরহাদ মজহার বলেন, গণতন্ত্র কিন্তু নির্বাচনের নাম নয়। বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন যে গণতন্ত্র আর নির্বাচন একই কথা। নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপির সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্পর্কে বিএনপির অজ্ঞতা প্রচুর। এই অজ্ঞতাটা আমাদের জাতীয় অজ্ঞতা, যা ১৯৭১ সাল থেকেই শুরু হয়েছে। বিএনপি যখন র‌্যাব গঠন করে, প্রথম লেখা আমি লিখেছিলাম যে এটা বিএনপিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। আমি সরকার সরানোর পক্ষের লোক নই, কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নির্বাচনের পক্ষের লোকও নই। আমি রাষ্ট্রকে নতুনভাবে গঠন করার পক্ষের লোক।’

সরকারের সমালোচনা করে ফরহাদ বলেন, মতপ্রকাশ, চিন্তা ও সরকারের বিরোধিতার জন্য মানুষকে গুম করা হচ্ছে। এর আগে করা হতো আইনবহির্ভূত হত্যা। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচুর ক্যাম্পেইন করেছিল। এরই একটা কুফল হলো গুম হওয়া।

সভায় অংশ নিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বর্তমান সরকারকে বিদায় না করা পর্যন্ত আমাদের গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কিছুই মুক্ত হবে না। দেশকে মুক্ত করতে হলে সবাই মিলে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে।’
জাতীয় প্রেসক্লাব ও বিএফইউজের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, ‘১৯৭৫ সালের এই দিনে বাকশালি সরকার সংসদে সংবাদপত্র বাতিল অধ্যাদেশ জারি করেছিল। সাংবাদিকদের দুর্যোগের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল।’ তিনি কারাবন্দী সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী ও শাহাদাৎ হোসেনের মুক্তি এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হওয়া সব হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, এখন প্রতিদিনই গণমাধ্যমের কালো দিবস। গণমাধ্যমে এখন সত্য বলার সুযোগ নেই, গণমাধ্যমের নিকষ কালো দিবস চলছে।

ফটো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল বলেন, ‘আমাকে সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর কোথায় নিয়ে যাওয়া হলো, তারাই জানেন। যখন বের করা হয়, তখন দেখতে পাই যে আমি একটা খালের মাঝখানে পড়ে আছি।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার ভয়াবহ। আমার সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, তার বিচার এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। এই বিচার অবশ্যই হবে, আমি শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছি।’

বিএফইউজের একাংশের সভাপতি এম আবদুল্লাহ এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, গত ১২ বছরে শত শত কালো দিবস তৈরি করেছে ফ্যাসিবাদী সরকার। বর্তমান সরকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, কখনো করেনি।
সভায় অন্যদের মধ্যে বিএফইউজের একাংশের মহাসচিব নুরুল আমিন, ডিইউজের একাংশের সভাপতি কাদের গণি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।