ডিপোতে কী কী রাসায়নিক ছিল, খতিয়ে দেখছে তদন্ত কমিটি

বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন-বিস্ফোরণের ঘটনায় গঠিত বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গতকাল মঙ্গলবার ডিপো পরিদর্শন করেছেছবি: প্রথম আলো

পোলট্রি ফিড, ভোগ্যপণ্য ও তৈরিপোশাক রাখার শর্তে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোকে ছাড়পত্র দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর। গত শনিবার রাতে ডিপোতে আগুন লাগার পর সেখানে রাসায়নিক রাখার বিষয়টি সামনে আসে। ডিপোতে কী কী রাসায়নিক রাখা ছিল, তা এখন খতিয়ে দেখছে তদন্ত কমিটি। এ জন্য তারা ডিপো থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে।

ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের বেশ কয়েকটি কনটেইনার ছিল
ছবি: প্রথম আলো

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিএম কনটেইনার ডিপোর পরিবেশগত ছাড়পত্রটি ছিল কেবল কনটেইনার হ্যান্ডেলিং-সংক্রান্ত। ডিপোতে কোনো প্রকার রাসায়নিক কিংবা বিপজ্জনক পণ্য রাখার কথা ছাড়পত্রে উল্লেখ ছিল না। ডিপোতে রাসায়নিক রাখার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর অবগত ছিল না।

পরিবেশগত ছাড়পত্রের আবেদনে ডিপো কর্তৃপক্ষ পোলট্রি ফিড, ভোগ্যপণ্য ও গার্মেন্টস-সংক্রান্ত পণ্য রাখার কথা উল্লেখ করেছিল বলে পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়।

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মফিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, রাসায়নিক রাখার ছাড়পত্রের শর্ত ভিন্ন। বিএম কনটেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ রাসায়নিক রাখার কথা আবেদনে উল্লেখ করেনি। তারা গার্মেন্টসসামগ্রী ও পোলট্রি ফিড রাখার কথা বলে ছাড়পত্র নিয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা ডিপোতে রাসায়নিকও রেখেছিল। ডিপোতে কী কী রাসায়নিক রাখা ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন-বিস্ফোরণের ঘটনায় গঠিত বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গতকাল মঙ্গলবার ডিপো পরিদর্শন করেছে। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য মফিদুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিপো থেকে গতকাল নমুনা সংগ্রহ করেছি। এ ছাড়া ডিপোতে কী কী রাসায়নিক ছিল, তার একটি তালিকা কর্তৃপক্ষকে দিতে বলেছি।’

ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড থাকার বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসের জানা ছিল না
ছবি: প্রথম আলো

ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের বেশ কয়েকটি কনটেইনার ছিল বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়। সূত্রের ভাষ্য, ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড থাকার বিষয়টি ফায়ার সার্ভিসের জানা ছিল না। ফলে ডিপোতে লাগা আগুন নেভাতে তারা পানি মারে। এতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড থাকা কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়।

ফায়ার সার্ভিসের হিসাবে, ডিপোটির ২৮টি কনটেইনারে রাসায়নিক ছিল। তার মধ্যে ১৫টি কনটেইনার বিস্ফোরণ হয়। বাকি কনটেইনারগুলো এখনো ডিপোতে রয়েছে। সেগুলো ডিপোর মধ্যে নিরাপদ দূরত্বে রাখার জন্য বলা হয়েছে।

ডিপো কর্তৃপক্ষ যে পরিবেশগত ছাড়পত্রের শর্ত ভঙ্গ করেছে, সে বিষয়ে ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চল এই প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।

ডিপোতে রাসায়নিক রাখার ক্ষেত্রে ছাড়পত্রে কিছু কঠিন শর্ত থাকে বলে পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলার উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের ছাড়পত্র নিয়ে বিএম কনটেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষ রাসায়নিক রেখেছিল। এটা নিয়ে আমরা ঢাকায় প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। সেখান থেকে নির্দেশনা এলে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

আগুন-বিস্ফোরণের ঘটনার পর ডিপো এলাকা থেকে পানি সংগ্রহ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। তারা সংগৃহীত পানিতে মানমাত্রা সঠিকভাবে পায়নি বলে জানা গেছে।
গত শনিবার আগুন-বিস্ফোরণের ঘটনার পর রোববার পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ডিপো-সংলগ্ন নালা থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে। একই সঙ্গে এলাকার বাতাসের মানও পরীক্ষা করা হয়।

গত শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে
ছবি: প্রথম আলো

পানির নমুনা নেওয়া হয় দুটি স্থান থেকে। দুটি স্থানের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন, পিএইচসহ বিভিন্ন উপাদান সহনশীল পর্যায়ে ছিল না বলে পরিবেশে অধিদপ্তর সূত্র জানায়। বাতাসের মান পরীক্ষার ফলাফল এখনো হাতে পায়নি অধিদপ্তর।

গত শনিবার রাতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। আগুন থেকে দফায় দফায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ ৪৪ জন মারা গেছেন। আহত হন দুই শতাধিক। ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন জানিয়েছেন, তাঁর বাহিনীর নয় সদস্য মারা গেছেন।

নিখোঁজ তিনজন। প্রায় ৬১ ঘণ্টা পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ডিপোর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে সেনাবাহিনী ঘোষণা দেয়।