ডিবি পরিচয়ে অপহরণের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ, ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের সিংগা গ্রাম থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে শাহাদাত হোসেন (৩৭) নামের এক যুবককে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনার সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় অপহৃতের স্ত্রী ফাতেমা ইয়াসমিন বাদী হয়ে আজ বুধবার থানায় ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১০ জনকে আসামি করে একটি অপহরণ মামলা করেছেন।

শাহাদাত গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, তাঁর স্বামী শাহাদাত ঢাকায় ফার্মেসি চালাতেন এবং তিনি (ফাতেমা) বিদ্যাময়ী আইডিয়াল ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন। দেশে করোনা শুরু হলে ব্যবসা ও স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। ধারদেনা করে সাত–আট মাস চলার পর ঢাকায় বাসাভাড়া দিয়ে থাকার সামর্থ্য না থাকায় পাঁচ মাস আগে স্বামী–সন্তান নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরে আসেন। দিনমজুরি খেটে কোনোরকম জীবন যাপন করছেন। প্রতিদিনের ন্যায় স্বামী–সন্তান নিয়ে নিজ বসতঘরে ঘুমিয়েছিলেন। গত সোমবার দিবাগত রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে ঘরের দরজা ধাক্কাধাক্কি করে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে দরজা খুলতে বলেন। দরজা খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঁচজন ব্যক্তি ঘরের মধ্যে ঢুকে স্বামী শাহাদাতকে মারধর করে হাতে হাতকড়া পরিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।

ফাতেমা ইয়াসমিন অভিযোগ করে বলেন, ‘সোমবার দিবাগত রাত আনুমানিক পৌনে তিনটার দিকে (০১৮৯০৭৯৭৮৯০) নম্বর থেকে ফোন করে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে রাতের মধ্যে টাকা নিয়ে চন্দ্রহার বাজারের সেতুর কাছে থাকতে বলে। টাকা না দিলে স্বামীকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। ওই রাতে আমি ও আমার দেবর নাসির উদ্দিন (২৫) ২৫ হাজার টাকা, আমার গলার চেইন ও কানের দুল (যার মূল্য ১ লাখ ৬০ হাজার) তাদের কথামতো চন্দ্রহার বাজারের সেতুর কাছে গিয়ে তাদের হাতে দিয়ে অনুনয়–বিনয় করে স্বামীর মুক্তি চাই। আধা ঘণ্টা পরে সাড়ে পাঁচটার দিকে গাড়িযোগে এসে চন্দ্রহার বাজারে শাহাদাতকে ফেলে যাওয়া হয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শাহাদাতকে উদ্ধার করে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ওরা আমাকে গাড়িতে তুলেই চোখ মুখ বেঁধে ফেলে এবং গাড়ির মধ্যে তিন ঘণ্টা হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে হাত পা থেঁতলে দেয় ও নির্যাতন করে।’

গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মো. তৌহীদুজ্জামান বলেন, ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে শাহাদাতকে অপহরণ করে মুক্তিপণ নেওয়ার ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এজাহারভুক্ত আসামি তিন বন্ধুসহ এই চক্রের নিজেদের মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার রয়েছে, যা মাদক পরিবহনসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কাজে ব্যবহার করে থাকে। এ ঘটনায় ফাতেমা ইয়াসমিন বাদী হয়ে শহীদ প্যাদা (৪৫), লোকমান হোসেন (৪৬) ও নাসির হাওলাদারের (৪২) নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১০ জনকে আসামি করে আজ থানায় একটি মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।