ডিম ছেড়েছে বেশি, আরও ‘বাড়বে’ ইলিশ

বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা বন্ধ, জাটকা রক্ষার কার্যক্রম ও অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়িয়েছে।

ইলিশ হালি দরে কিনে মনভরে খেতে অপেক্ষা করতে হয় বর্ষা পর্যন্ত। বর্ষা ইলিশের ভরা মৌসুম। এ সময় দাম কমার কারণে গড়পড়তা আয়ের পরিবারগুলো ইলিশের নাগাল পায়। বছরের বাকি সময় আকাল চলে, সে কথা অবশ্য আর বলা যাবে না। এখন বছরজুড়েই কমবেশি ইলিশ ধরা পড়ে। ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে মা ইলিশ ধরা বন্ধ, জাটকা রক্ষার কার্যক্রম ও অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার পর দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে।

ইলিশের ক্ষেত্রে আগামী বছরের জন্য একটি সুখবর দিয়েছেন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানিয়েছেন, এবারের প্রজনন মৌসুমে ইলিশের ডিম ছাড়ার হার বেড়েছে। দেশে গত ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। এ সময়ে ৫১ শতাংশ ইলিশ ডিম ছেড়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ শতাংশীয় বিন্দু বেশি।

সাধারণত ৪০ শতাংশ ইলিশ ডিম ছাড়তে পারলেই সেটাকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বলে ধরে নেওয়া হয়। গত মৌসুমে ৪১ শতাংশ ইলিশ ডিম ছাড়তে পেরেছিল। এ সময় বাজারে তুলনামূলক কম দামে বড় আকারের ইলিশ কিনতে পেরেছেন ক্রেতারা।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের নদীকেন্দ্র, চাঁদপুরের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ডিম ছাড়ার হার পর্যালোচনাকারী জরিপ দলের প্রধান মো. আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছর ইলিশ যে ডিম ছেড়েছে, তা থেকে জন্মানো জাটকা রক্ষা করা গেলে আমরা পরবর্তী বছরগুলোতে বেশি পরিণত ইলিশ পাব।’

ট্রলার থেকে ইলিশ মাছ খালস করে আড়তে নিয়ে যাচ্ছে শ্রমিকেরা। গত ৫ নভেম্বর বরিশাল নগরের পোর্ট রোডে অবস্থিত মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে
ছবি: প্রথম আলো

৭,২৭৩টি ইলিশে জরিপ

ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে সরকারের একাধিক কার্যক্রম রয়েছে। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত আট মাস জাটকা (২৫ সেন্টিমিটারের নিচে) ধরা নিষিদ্ধ। এর মধ্যে মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জেলেদের ছয়টি অভয়াশ্রম এলাকায় নদীতে নামতে দেওয়া হয় না। এ ছাড়া বর্ষার শেষ দিকে প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধ থাকে। ধরা বন্ধের তিন সপ্তাহে ইলিশের ডিম ছাড়ার হার কেমন, তা জানতে প্রতিবছরই জরিপ হয়।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা জানান, এ বছর ধরা বন্ধের সময়ের আগে ও পরে ৫ দিন করে ১০ দিন এবং ধরা বন্ধের ২২ দিন তাঁরা নদীতে জাল পেতে ইলিশ ধরে ডিম ছাড়ার বিষয়টি পরীক্ষা করেছেন। জরিপ দলে ছিলেন ১২ সদস্য। তাঁরা ‘এম ভি রুপালী ইলিশ’ নামের একটি নৌযান, স্পিডবোট ও জাল নিয়ে সাত হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে জরিপটি করেন।

ডিম ছাড়ার পর জাটকা রক্ষা জরুরি। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবৈধ জাল উদ্ধার ও জেলেদের ধরে জরিমানা করছে। কিন্তু ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে। তাঁরা যাতে বাজার থেকে জাটকা ইলিশ না কেনেন, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে
ইয়াহিয়া মাহমুদ, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক

জরিপকালে জালে ৭ হাজার ২৭৩টি ইলিশ ধরা পড়ে। জরিপ বলছে, ২২ দিনে ইলিশ সাড়ে ৭ লাখ কেজির বেশি ডিম ছেড়েছে। এর ১০ শতাংশ ফুটলে প্রায় ৩৮ হাজার কোটি ইলিশের পোনা পাওয়া যাবে, যা পরবর্তী সময়ে ছোট ইলিশ বা জাটকায় পরিণত হবে। বরাবরের মতো ইলিশ সবচেয়ে বেশি ডিম ছেড়েছে পটুয়াখালী উপকূল এলাকায়। সেখানে ডিম ছাড়ার হার ৭৫ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ভোলার মনপুরায় ৬১ শতাংশ, কক্সবাজারে ৫০ শতাংশ ও চাঁদপুরে ৪১ শতাংশ। জরিপকালে যত ইলিশ ধরা পড়েছে, তার ৩২ শতাংশ প্রজনন সক্ষম ছিল। এক যুগ ধরে দুই এক বছরের ব্যতিক্রম ছাড়া ধারাবাহিকভাবে মা ইলিশের ডিম ছাড়ার হার বাড়ছে বলে বিজ্ঞানীরা জানান।

ইলিশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইলিশের উৎপাদন ও ডিম ছাড়ার পরিমাণ বাড়ার ক্ষেত্রে মূলত তিনটি বিষয় কাজ করেছে। প্রথমত, গত বছর একটি নতুন অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বরিশালের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ এলাকার ওই অভয়াশ্রমে ইলিশ বেশি ডিম ছাড়ছে। দ্বিতীয়ত, নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরা বন্ধে অভিযানের ব্যপকতা বাড়ানো হয়েছে। তৃতীয়ত, এত দিন ইলিশ ধরার ক্ষেত্রে সাড়ে ৪ সেন্টিমিটার ফাঁসের জাল ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়া হতো। এতে প্রচুর পরিমাণে জাটকা মারা পড়ত। গত ১৫ জুলাই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সাড়ে ৬ সেন্টিমিটারের নিচে ফাঁসওয়ালা জাল নিষিদ্ধ করেছে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ডিম ছাড়ার পর জাটকা রক্ষা জরুরি। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অবৈধ জাল উদ্ধার ও জেলেদের ধরে জরিমানা করছে। কিন্তু ভোক্তাদের সচেতন হতে হবে। তাঁরা যাতে বাজার থেকে জাটকা ইলিশ না কেনেন, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

মা-ইলিশ প্রজনন মৌসুম শেষ হয়েছে ৪ নভেম্বর। এখনও জেলের জালে ইলিশ কম ধরা পড়ছে। মাছ ধরে জেলে ঘাটে বিক্রি করতে আসছে। মেঘনা নদীর তীর, তুলাতুলি মাছঘাট, ধনিয়া, ভোলা সদর, ভোলা। ২৪ নভেম্বর ২০২০
ছবি: নেয়ামতউল্যাহ

সেই সময়, এই সময়

ইলিশ উৎপাদন ঘুরে দাঁড়ানো শুরু হয় চলতি শতকের শুরুর দিকে। ২০০১-০২ অর্থবছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ২১ হাজার টন। পরের বছর তা দুই লাখ টনের নিচে নেমে যায়। এরপর বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ইলিশ উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে একটি গবেষণা করে। এতে দেখা যায়, জাটকা ও মা ইলিশ বেশি পরিমাণে ধরা পড়াই উৎপাদন কমার বড় কারণ। গবেষণার ফল ধরে সরকার ইলিশ সুরক্ষায় একটি পরিকল্পনা তৈরি করে। ২০০৩-০৪ অর্থবছর থেকে জাটকা রক্ষার কর্মসূচি নেওয়া হয়। ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকে শুরু হয় অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম। এরপর ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে মা ইলিশ রক্ষায় ১০ দিন ধরা বন্ধের নিয়ম চালু হয়। সময়ে–সময়ে জাটকা রক্ষার কার্যক্রম, অভয়াশ্রমের সংখ্যা ও ইলিশ ধরা বন্ধের সময় বাড়ানো হয়েছে। যার ফল ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি। সাধারণ মানুষের পাতে ফেরে জাতীয় মাছটি।

ইলিশ ধরায় জেলেদের আরও কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, তা আমরা বিবেচনা করে দেখছি। তবে শুধু জেলেদের মানা করলে চলবে না। ভোক্তারা নিষিদ্ধ সময়ে বাচ্চা ও ডিমওয়ালা ইলিশ যাতে না খান, সেটিও মনে রাখতে হবে
স ম রেজাউল করিম , মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী

মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে, গত বছর দেশে ৫ লাখ ৩৩ হাজার টন ইলিশ ধরা পড়েছে। এ বছরের হিসাবে, তা সাড়ে ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ যেভাবে ইলিশ সুরক্ষায় এগোচ্ছে, তাতে আরও এক লাখ টন উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব
বলে গত বছর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও মৎস্যবিষয়ক বৈশ্বিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ফিশের এক জরিপে উঠে আসে। এতে দেখা যায়, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ৬ লাখ ৫৬ হাজার টন ইলিশের উৎপাদন করা যায়। এর চেয়েও বেশি ধরা সম্ভব। তবে বেশি ধরা হলে তা পরবর্তী বছরগুলোতে ইলিশের উৎপাদন কমিয়ে দেবে।

মা-ইলিশ প্রজনন মৌসুম শেষ হয়েছে ৪ নভেম্বর। এখনও জেলের জালে ইলিশ কম ধরা পড়ছে। মাছ ধরে জেলে ঘাটে বিক্রি করতে আসছে। মেঘনা নদীর তীর, তুলাতুলি মাছঘাট, ধনিয়া, ভোলা সদর, ভোলা। ২৪ নভেম্বর ২০২০
ছবি: নেয়ামতউল্যাহ

ওয়ার্ল্ডফিশের হিসাবে, বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশ এখন বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। অথচ চার বছর আগেও বিশ্বের মোট ইলিশের ৬৫ শতাংশ ধরা পড়ত বাংলাদেশে। দেশে যেখানে ধারাবাহিকভাবে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে, সে তুলনায় প্রতিবেশী ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে উৎপাদন কমেছে। ইলিশ উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে ভারত। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশের মোট উৎপাদিত মাছের ১২ শতাংশ ইলিশ। আর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশ আসে ইলিশ থেকে।

অবশ্য মৎস্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়াতে কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে নিষিদ্ধ মৌসুমে মা ইলিশ ধরা ও জাটকা ধরা বন্ধের ক্ষেত্রে আরও কিছু উদ্যোগ নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ সময়ে জেলেরা যাতে ইলিশ ও জাটকা ধরতে না যান, তা নিশ্চিত করতে তাঁদের সহায়তা বাড়ানো দরকার।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী স ম রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইলিশ ধরায় জেলেদের আরও কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, তা আমরা বিবেচনা করে দেখছি। তবে শুধু জেলেদের মানা করলে চলবে না। ভোক্তারা নিষিদ্ধ সময়ে বাচ্চা ও ডিমওয়ালা ইলিশ যাতে না খান, সেটিও মনে রাখতে হবে।’

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মহিপুর মৎস্য বন্দরে ইলিশ। ছবি সেপ্টেম্বর মাসে তোলা
প্রথম আলো

জেলেদের সহায়তা নগণ্য

২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধের সময় মৎস্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত প্রায় ৫ লাখ ২৮ হাজার জেলে পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল সহায়তা দেয় সরকার। এ ছাড়া জাটকা রক্ষার কর্মসূচি চলাকালে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত পরিবারগুলোকে মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়। ইলিশ আহরণকারী জেলেদের জীবিকা নিয়ে কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, সরকার জেলেদের যে সহায়তা দেয়, তা সবাই ঠিকমতো পান না। সহায়তার পরিমাণও কম। তা দিয়ে জেলেদের মৌলিক চাহিদাও পূরণ হয় না। এ কারণে অনেকে নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরতে যান।

অভিযোগ রয়েছে, বেশির ভাগ জেলেই মাছ ধরতে যান শ্রমিক হিসেবে। নৌকার বা ট্রলারের মালিক স্থানীয় প্রভাবশালীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানকালে দরিদ্র জেলেদেরই কারাদণ্ডসহ সাজা দেওয়া হয়। নৌকার মালিক বা ইলিশ ধরার মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যান।

সব জেলে উপযুক্ত সহযোগিতা পেলে নিষিদ্ধ সময়ে কেউ ইলিশ ধরতে যাবেন না। এতে জেলেদের অবস্থারও উন্নতি হবে। দেশের ইলিশের উৎপাদনও বাড়বে
রবীন্দ্রনাথ বর্মণ , বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ফেডারেশনের সভাপতি

বেসরকারি সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ২০১৪ সালে ইলিশের মৌসুমে জেলেদের অবস্থা নিয়ে একটি জরিপ করে। এতে দেখা যায়, নিষিদ্ধ সময়ে ২৭ শতাংশ জেলে মাছ ধরতে যান। এর প্রধান কারণ, ওই সব জেলের একমাত্র জীবিকা মাছ ধরা। নিষিদ্ধ সময়ে সামান্য সরকারি সহায়তা দিয়ে তাঁদের জীবন চলে না। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁরা নিষিদ্ধ সময়েও মাছ ধরতে নামেন।

পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জরিপকালে যে পরিস্থিতি উঠে এসেছিল, তা একটু বদলেছে। সরকারি সহযোগিতা পাওয়ায় আগের চেয়ে কম জেলে নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরতে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব জেলের আর্থসামাজিক অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি। কারণ যে সহায়তা তাঁরা সরকার থেকে পান, তা দিয়ে মৌলিক চাহিদাও অনেকাংশ পূরণ হয় না। তিনি বলেন, জেলেদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য আরও বিস্তৃত পরিকল্পনা দরকার। তাঁদের আরও বেশি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।

জেলেদের সংগঠন বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ফেডারেশনের হিসাবে, কমপক্ষে ৩০ শতাংশ জেলে সরকারি সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তালিকায় জেলেদের একাংশের নাম দেন না। যাঁরা পান তাঁদেরও অনেক ক্ষেত্রে পরিমাণে কম দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ফেডারেশনের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, সব জেলে উপযুক্ত সহযোগিতা পেলে নিষিদ্ধ সময়ে কেউ ইলিশ ধরতে যাবেন না। এতে জেলেদের অবস্থারও উন্নতি হবে। দেশের ইলিশের উৎপাদনও বাড়বে।

বাজারে বিক্রি হচ্ছে ডিমওয়ালা ইলিশ। প্রতি কেজি ইলিশের দাম দেওয়া হচ্ছে ৮০০-১০০০টাকা। কাজীর দেউরি মাছ বাজার, চট্টগ্রাম নগর । বেলা ৩ টা, ২৫ নভেম্বর ২০২০
ছবি: জুয়েল শীল

ছোট নৌকায় জেলেদের আয় কম

ওয়ার্ল্ড ফিশের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, চলতি বছর সামগ্রিকভাবে দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়লেও ইলিশ বেশি ধরা পড়েছে সাগরে। ফলে যাঁরা সাগরে ট্রলার নিয়ে ইলিশ ধরতে গিয়েছেন, তাঁরা বেশি ও বড় ইলিশ ধরতে পেরেছেন। আর নদীতে যেসব জেলে নিজস্ব উদ্যোগে ইলিশ ধরেছেন, তাঁরা কম পেয়েছেন। আর এ বছর সাগরে ঘনঘন নিম্নচাপ থাকায় ছোট নৌযান সাগরে কম যেতে পেরেছে।

ওয়ার্ল্ড ফিশ, বাংলাদেশের ইকোফিশ প্রকল্পের দলনেতা অধ্যাপক আবদুল ওয়াহাব প্রথম আলোকে বলেন, ইলিশ ধরা জেলেদের জন্য সাড়ে তিন কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এটি আরও বাড়ানো গেলে এবং দেশের ইলিশ আহরণকারী সব জেলেকে এর আওতায় নিয়মিত সহযোগিতার ব্যবস্থা করা দরকার। এটা নিশ্চিত করা গেলে কেউ আর নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরতে যাবেন না। ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে।