ডিমলায় সেতুর কাজে গতি নেই, ভোগান্তি

নীলফামারীর ডিমলার নাউতরা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পথচারীরা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো
নীলফামারীর ডিমলার নাউতরা নদীর ওপর সেতুর নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পথচারীরা। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার নাউতরা ইউনিয়নের নাউতরা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের কাজ নির্ধারিত সময়েও শেষ হয়নি। এতে এ পথে চলাচলকারী লোকজনকে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, এলজিইডির আওতায় ১ কোটি ৯৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬৩ টাকা ব্যয়ে ৭৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণে চুক্তিবদ্ধ হয় সিরাজগঞ্জের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শামিমুর রহমান জেভি। ওই প্রতিষ্ঠানকে ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ৩০ জুন ওই কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হয়। পরে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই কার্যাদেশের মেয়াদ বর্ধিত করা হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণাধীন সেতুর পাশের বাঁশের সাঁকো দিয়ে যাত্রী নিয়ে পারাপার হচ্ছে রিকশা, রিকশাভ্যান অটোরিকশা, সাইকেল, মোটরসাইকেল। সেখানে দেখা হয় এলজিইডি ডিমলার উপসহকারী প্রকৌশলী জিকরুল আমিন ও কার্যসহকারী (ওয়ার্ক অ্যাসিস্ট্যান্ট) সানোয়ার হোসেনের সঙ্গে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেউ নেই এখানে, বলেই ডিমলার উদ্দেশে রওনা হন।

সেখানে কয়েকজন শ্রমিক ঢালাইয়ের জন্য সাটারিংয়ের কাজ করছিলেন। তাঁদের সরদার রবিউল ইসলাম (৩০) বলেন, ‘এখানে ঠিকাদারের কোনো লোকজন নেই, রংপুর থেকে নাজমুল ইসলাম নামের একজন ঠিকাদার এসে আমাদের মজুরি দেন, না আসলে বিকাশে টাকা পাঠান।’

জলঢাকার চাওড়াডাঙি গ্রাম থেকে ওই পথে ডিমলা যাচ্ছিলেন নজরুল ইসলাম (৪৫)। তিনি বলেন, ‘নাউতরা পর্যন্ত অটোরিকশায় এসেছি, এখন পায়ে হেঁটে নদী পার হয়ে আবার ওদিকে অটোরিকশা ধরব। এতে যাতায়াত খরচ বেশি হচ্ছে। কাজ শুরু হওয়ার এক বছর পার হলেও সেতুর কাজের অগ্রগতি নেই।’

নাউতরা গ্রামের ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম (৫০) বলেন, সেতু না হওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বিকল্প পথে মালামাল আনা-নেওয়ায় খরচ বেশি হচ্ছে। স্কুল-কলেজের বাচ্চাদের ওই পথে পাঠিয়ে অভিভাবকেরাও উৎকণ্ঠার মধ্যে থাকেন। সেতুর কাজের যে গতি, তাতে মনে হয় না এক বছরেও ভোগান্তি দূর হবে।

নাউতরা গ্রামের রবিউল ইসলাম (৩৫) বলেন, এ পথে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ চলাচল করে। এ কারণে বাঁশের সাঁকোটি প্রায় সময় মেরামত করতে হয়। ঠিকাদার সাঁকোটি মেরামত করেন না, স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে মেরামত করা হয়।

নাউতরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, গত জুন মাসে ঠিকাদারের কার্যাদেশের মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা কাজের মেয়াদ বাড়াতে ব্যস্ত। বাঁশের সাঁকোটা তারা একবার করে দিয়েছে। সেটি স্থায়ী হয়নি। এখন ইউপি থেকে সাঁকো মেরামত করে দেওয়া হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ঠিকাদার শামিমুর রহমানের অংশীদার নাজমুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেখানে সেতুর ছাদ (পাটাতন) ঢালাইয়ের জন্য সাটারিংয়ের কাজ চলছে। আশা করি, তিন মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করা যাবে।’

এ বিষয়ে নীলফামারী-১ ডোমার-ডিমলা আসনের সাংসদ আফতাব উদ্দীন সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তিন বছর ধরে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করেছি। কিন্তু ঠিকাদার সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে না পারায় আরও ছয় মাস সময় বৃদ্ধি করেছেন।’

নীলফামারী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘সেখানে আগের লোহার সেতুটি জেলা পরিষদের ছিল। সেটি অপসারণ করতে বেশি সময় লাগায় ঠিকাদার সময়ের মধ্যে শুরু করতে পারেননি। তাই সময় বেশি লাগছে। আমি দ্রুত কাজটি শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগাদা দিচ্ছি। তারা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যাদেশের মেয়াদ বাড়িয়েছে। আশা করছি ওই সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ হবে।’