ডেক্সামেথাসন ভালো কাজ দেয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেবন নয়

ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ
ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, ডেক্সামেথাসন একটি স্টেরয়েড ওষুধ। প্রয়োজন অনুযায়ী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত অনেক রোগীর ক্ষেত্রে তিনি এই ওষুধ ব্যবহার করেছেন। জ্যেষ্ঠ এই চিকিৎসক বললেন, তিনি দেখেছেন, এই ওষুধ কাজ করে। বেশ ভালোই কাজ করে। তবে এটি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই ব্যবহার করা উচিত হবে না।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীদের উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ডেক্সামেথাসন ওষুধটিই করোনার চিকিৎসায় গুরুতর অসুস্থদের জীবন রক্ষা করতে সক্ষম। মূলত করোনায় আক্রান্ত যেসব রোগীর ভেন্টিলেশন ও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, সেই রোগীদের জীবন বাঁচাতে ডেক্সামেথাসন অত্যন্ত কার্যকর বলে দেখা গেছে। এটা একধরনের স্টেরয়েড। তবে মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগীদের জন্য এই ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন নেই।

ওষুধটি সম্পর্কে এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে জানতে চাইলে এ বি এম আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শুরু থেকে আমার রোগীদের জন্য এটি ব্যবহার করেছি। ওষুধটি কার্যকর।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কোনো গবেষণা করিনি। তবে আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, যে রোগীদের এটি দিয়েছি, তাঁরা ভালো হয়েছেন।’

জ্যেষ্ঠ এই চিকিৎসক বলেন, এই ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, এটি দামে খুব সস্তা। এ কারণে করোনায় আক্রান্ত যেকেউ যেন ফার্মেসি থেকে কিনে এনে সেবন না করেন। এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে, এটি স্টেরয়েডের একটি ওষুধ। এর ব্যবহারের বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। যদি কোনো করোনা রোগীর এই ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন হয়, সেটি নির্ধারণের দায়িত্ব কেবল চিকিৎসকের। তিনিই রোগীকে ব্যবস্থাপত্র দেবেন। ডা. আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, কেউ নিজ উদ্যোগে সেবন করবেন না।’

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত এই চিকিৎসক বলেন, করোনায় আক্রান্ত সবার জন্য এই ওষুধের প্রয়োজন নেই। মূলত, শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে। বিষয়টি রোগীর অবস্থা দেখে চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক এই গবেষণা চালিয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া প্রায় ২ হাজার করোনা রোগীর দেহে ডেক্সামেথাসন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। তা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি ৪০ শতাংশ থেকে ২৮ শতাংশে কমে আসে। আর যেসব রোগীর অক্সিজেন গ্রহণের প্রয়োজন হয়, তাঁদের মৃত্যুঝুঁকি ২৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে কমে আসে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি ২০ জন করোনারোগীর মধ্যে ১৯ জনেরই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না। আবার যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি হন, তাঁদের মধ্যেও অধিকাংশই সুস্থ হয়ে যান। তবে কারও কারও অক্সিজেন ও ভেন্টিলেশন সুবিধার প্রয়োজন হয়। এই উচ্চ ঝুঁকির রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রেই উপকারী হিসেবে পাওয়া গেছে ডেক্সামেথাসনের নাম।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণা দলের প্রধান অনুসন্ধানকারী ও অধ্যাপক পিটার হরবি বলেন, ‘এটাই একমাত্র ওষুধ, যার প্রয়োগে মৃত্যুহার কমতে দেখা গেছে এবং সত্যিকার অর্থেই বেশ ভালো পরিমাণে কমে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার।’

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৃদু উপসর্গ থাকা করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসন খুব একটা কার্যকর নয়। অর্থাৎ যেসব করোনারোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয় না, তাঁদের ক্ষেত্রে ডেক্সামেথাসোন প্রয়োজন নেই।

ডেক্সামেথাসন বেশ পরিচিত একটি ওষুধ এবং দামেও অত্যন্ত সস্তা। সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা বলছেন, যুক্তরাজ্যে প্রতিদিনের চিকিৎসায় ডেক্সামেথাসন ব্যবহারের খরচ প্রায় সাড়ে পাঁচ পাউন্ড। ১০ দিন পর্যন্ত ডেক্সামেথাসন প্রয়োগ করার কথা বলা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, করোনা মহামারির শুরুতে এই ওষুধের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেলে অন্তত ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু ঠেকানো যেত।

বাংলাদেশ মেডিসিন সোসাইটির মহাসচিব ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক আহমেদুল কবীর প্রথম আলোকে জানান, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় এই ওষুধের প্রয়োগ হচ্ছে অনেক দিন থেকে। কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় যে নির্দেশিকা প্রণয়ন করা হয়েছে, সেখানে ডেক্সামেথাসন গোত্রভুক্ত ওষুধ ওরাডেক্সন ও মিথাইল প্রেডনিসোলোন ব্যবহার হচ্ছে। এতে ভালো ফলও পাওয়া গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান সীতেশ চন্দ্র বাছাড় প্রথম আলোকে বলেন, ওষুধটি বাংলাদেশের বড় ওষুধ উৎপাদনকারী প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই তৈরি করছে বহু বছর ধরে।

বাংলাদেশের ৩০টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের দাম বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ডেক্সামেথাসন মুখে খাওয়ার ওষুধের দাম সর্বনিম্ন দাম ৬০ পয়সা থেকে ১ টাকা ১৫ পয়সা পর্যন্ত। ইনজেকশনের দাম সর্বনিম্ন ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা।