ঢাকাকেন্দ্রিকতা নিয়ে সুশীল সমাজের প্রশ্ন তোলা উচিত: জাফরুল্লাহ চৌধুরী

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
ফাইল ছবি

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, দেশে কেন্দ্রীয়করণ প্রসঙ্গে সরকারকে জবাবদিহির মধ্যে আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারছে না সুশীল সমাজ। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয়করণ থেকে মুক্ত হয়ে দেশকে ২০টি প্রদেশে ভাগ করা উচিত। দেশের ভেতরে ঢাকাকেন্দ্রিকতা নিয়ে সুশীল সমাজের প্রশ্ন তোলা উচিত।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউট ও মিত্তাল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ‘৫০ বছরে বাংলাদেশ: ফিরে দেখা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক অনলাইন সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এসব কথা বলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। দুই দিনের এই সম্মেলন বুধবার শুরু হয়।

সম্মেলনে ‘মিরাকল ও সুশীল সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক পর্বে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সমীরণ আবেদ এবং তরুণদের নারীবাদী সংগঠন ‘কথা’–এর প্রতিষ্ঠাতা উমামা জিল্লুর। সম্মেলনে মডারেটর ছিলেন চীন ও ভিয়েতনামের সাবেক সুইডিশ রাষ্ট্রদূত বোরে লিংগ্রেন। তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ এসেছিলেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশ আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছাড়া দেশ এগোতে পারে না। দেশের বড্ড বেশি কেন্দ্রীয়করণ বিপজ্জনক হতে পারে। বৈষম্য, দুর্নীতি, আমলাতন্ত্র দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের ক্ষেত্র নিয়ে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, তারা বড় বড় কাজ করছে, কিন্তু তারা জ্বালানি ও কৃষি খাতে কাজ করছে না।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটির মধ্য থেকে প্রথম মিরাকল ঘটেছিল ১৯৭১ সালে স্বেচ্ছাসেবী নারীদের নিয়ে হাসপাতাল গঠনের মধ্য দিয়ে। তিনি বলেন, যুদ্ধে মানুষের অনেকÿক্ষতি হয়। যুদ্ধের বড় একটা প্রভাব নারীদের ওপর পড়ে, কারণ, তাঁরাই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীরা বেরিয়ে এসে যে ভূমিকা নিতে পেরেছিলেন, সে কারণে যুদ্ধকালীন সেবা দিতে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছিল। তিনি বলেন, পাকিস্তান বা ইরানের মতো বাংলাদেশ ততটা রক্ষণশীল না হলেও এখানকার নারীরা রক্ষণশীল। তারপরও সমাজের চাপিয়ে দেওয়া বিভিন্ন শৃঙ্খল ছিন্ন করে তারা সেই সময়ে তাঁরা বেরিয়ে এসেছিলেন।

জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সেই সময় হাজার হাজার নারী গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এই উদ্যমী নারীদের কয়েক শ জনকে ২ থেকে ৩ সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলো এবং তাঁদের নিয়ে তৈরি হলো সেই চিকিৎসা কেন্দ্র। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এটাই ছিল বাংলাদেশ মিরাকলের প্রাথমিক সূচনা।’

আলোচনায় ব্র্যাকের ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা সমীরণ আবেদ বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, কিন্তু এই বিষয়টি উল্লেখ করার মতো যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা এনজিওকে সরকার কাজ করার সুযোগ দিয়েছে, যা অন্যান্য দেশে বিরল। তার ওপর স্বাস্থ্য, শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করেছে এনজিওরা।

সমীরণ আবেদ বলেন, ভারত বা অন্যান্য দেশে পোশাক খাতের শ্রমিকদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বাংলাদেশের মতো ব্যাপক নয়। তিনি বলেন, নারীদের বাইরে কাজে আনার ক্ষেত্রে সুশীল সমাজের ভূমিকা অনেক বেশি।

তরুণ আলোচক উমামা জিল্লুর বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের এবং সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দরকার। তিনি বলেন, এমন নয় যে ঘরের ভেতর থাকলেই নারীরা নিরাপদ। ঘরে কিংবা রাস্তায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেকোনো জায়গায় নারীদের ওপর যৌন হামলার আশঙ্কা রয়েছে।

আলোচকেরা বলেন, লেখক, সাংবাদিক, উন্নয়নকর্মী সবাই মিলে সুশীল সমাজ। সবাইকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই সম্মেলনে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোকপাত করা হয়।