ঢাকায় মার্কিন উপমন্ত্রীর মন্তব্যে ক্ষুব্ধ চীন

কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি লড়াই থেকে দূরে থাকাই বাংলাদেশের জন্য ভালো। পাশাপাশি জাতীয় সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রেখে দুই বড় শক্তির দ্বৈরথ যদি বাংলাদেশের জন্য দর-কষাকষির সুযোগ এনে দেয়, তাহলে সেটাকে কাজে লাগানোর বিষয়টি বিবেচনায় রাখা যেতে পারে

ঢাকা সফরের দ্বিতীয় দিনে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে তাঁরা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। ঢাকা, ১৫ অক্টোবরফাইল ছবি
যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান চলতি মাসের ১৪ থেকে ১৬ তারিখ বাংলাদেশ সফর করেন। সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি ঢাকায় কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর সঙ্গে কথা বলেন

রোহিঙ্গা সংকটসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে চীনের ভূমিকা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক মন্তব্যে স্পষ্টতই ক্ষুব্ধ বেইজিং। সম্প্রতি বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগানের করা বিভিন্ন মন্তব্যে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে চীনা দূতাবাস।
ঢাকার চীনা দূতাবাস  গতকাল শুক্রবার তাদের ফেসবুক পেজে উল্লেখ করেছে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দুর্ভাগ্যজনকভাবে চীন তেমন কিছু করেনি বলে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান যে দাবি করেছেন, তা যথাযথ নয় এবং এটি গঠনমূলকও নয়।
তবে কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি লড়াই থেকে দূরে থাকাই বাংলাদেশের জন্য ভালো। পাশাপাশি জাতীয় সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রেখে দুই বড় শক্তির দ্বৈরথ যদি বাংলাদেশের জন্য দর–কষাকষির সুযোগ এনে দেয়, তাহলে সেটাকে কাজে লাগানোর বিষয়টি বিবেচনায় রাখা যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আজ শনিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের স্বার্থ দেখছি। অন্যরা কে কোথায় ঝগড়াঝাঁটি করল, আমরা এর মধ্যে নেই। এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্নও নই। এ বিষয়গুলোতে গণমাধ্যমের মাথাব্যথা থাকতে পারে। আমরা শুধু আমাদের জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়গুলোই দেখব।’


যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান চলতি অক্টোবর মাসের ১৪ থেকে ১৬ তারিখ বাংলাদেশ সফর করেন। সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি ঢাকায় কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর সঙ্গে কথা বলেন। এরপর ২০ অক্টোবর ওয়াশিংটন থেকে ঢাকার সাংবাদিকদের সঙ্গে ভিডিও সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন। ঢাকা ও ওয়াশিংটন দুই জায়গাতেই গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপের সময় স্টিফেন বিগান চীনের ভূমিকার সমালোচনা করেন।
চীনা দূতাবাস বলেছে, সবার প্রত্যাশা ছিল বিগানের ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের বিষয়ে নজর দেবেন। অথচ বাংলাদেশ ছাড়ার আগে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৫ অক্টোবর চীন-ভারত সীমান্ত সংঘাত, তাইওয়ান প্রণালিতে উত্তেজনা, দক্ষিণ চীন সাগরের প্রসঙ্গ, হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক আইন নিয়ে চীনকে জড়িয়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছেন, যার সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো যোগসূত্র নেই।

আমরা বাংলাদেশের স্বার্থ দেখছি। অন্যরা কে কোথায় ঝগড়াঝাঁটি করল, আমরা এর মধ্যে নেই। এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্নও নই। এ বিষয়গুলোতে গণমাধ্যমের মাথাব্যথা থাকতে পারে। আমরা শুধু আমাদের জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়গুলোই দেখব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন

এ ধরনের আচরণ শুধু কূটনৈতিক শিষ্টাচারেরই লঙ্ঘনই নয়, তা বাংলাদেশের প্রতি অশ্রদ্ধারও প্রতিফলন। কারণ, শান্তিপ্রিয় একটি দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সবার সঙ্গে বন্ধুতা, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়—এই নীতিতে বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বিগানের মন্তব্য, তাঁর আচরণ ছিল একপেশে দৃষ্টিভঙ্গির বহিঃপ্রকাশ।
চীনা দূতাবাস আরও বলেছে, নিজেদের সমস্যা সমাধানের জন্য চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অনেকগুলো দ্বিপক্ষীয় চ্যানেল আছে। আগে থেকে অনুমতি না নিয়ে এর মধ্যে তৃতীয় পক্ষকে টেনে নিয়ে আসা বিগানের উচিত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র ও চীন—বন্ধুতার জন্য বাংলাদেশে এসেছে। এখানে একে অন্যের (যুক্তরাষ্ট্র ও চীন) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যস্ত থাকাটা ঠিক নয়।


এ নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব মো. তৌহিদ হোসেন আজ বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্টিফেন বিগানের মন্তব্যে বাংলাদেশকে অসম্মান করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। আমরা মনে করি, রোহিঙ্গা সমস্যায় চীন অনেক কিছু করতে পারত। কিন্তু করেনি। সেটা বিগান বলতেই পারেন। বাংলাদেশ দুই পক্ষের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। এটা খুব স্পষ্ট। আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন। কাজেই সামগ্রিক পরিস্থিতিতে দেশের কোথায় সুবিধা হবে, এ নিয়ে আমাদের সব সময় চোখ–কান খোলাও রাখতে হবে।’
এদিকে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রসহ চারটি দেশ ও সংস্থা গত বৃহস্পতিবার দাতাদের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন ডেকেছিল। ওই সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও মিয়ানমারের পাশাপাশি চীন ও ভারত অংশ নেয়নি।