ঢাবির এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সংগীতশিল্পী মহসিনা আক্তার খানমের (লীনা তাপসী খান) একটি গ্রন্থে চৌর্যবৃত্তি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এক ব্যক্তি। অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি।

অভিযোগকারী হলেন সংগীতশিল্পী ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) সাবেক মহাপরিচালক ইফফাত আরা নার্গিস। আজ রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ওই অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, লীনা তাপসী খানের পিএইচডি অভিসন্দর্ভের ওপর ভিত্তি করে রচিত ‘নজরুল-সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার’ গ্রন্থে ৮০ পৃষ্ঠার স্বরলিপি স্ক্যান করে ঢোকানো হয়েছে মূল পাঠ হিসেবে, যা অনৈতিক। এই ৮০ পৃষ্ঠার স্বরলিপির স্থান হতে পারত গ্রন্থের পরিশিষ্টে৷ মূল পাঠে এই স্বরলিপি কোনোভাবেই স্থান পাওয়ার কথা নয়। এটিও একধরনের চৌর্যবৃত্তি। দেখা যাচ্ছে যে ২৭৭ পৃষ্ঠার বইয়ের মধ্যে ৮০ পৃষ্ঠার স্বরলিপিসহ ১৬৯ পৃষ্ঠা লীনা তাপসী খানের রচনা নয়। এগুলো অন্যের গ্রন্থ থেকে হুবহু গৃহীত, লেখকের নয়। বাকি ১০১ পৃষ্ঠা লীনা তাপসী খানের লেখা বলে দাবি করা হয়েছে। এর মধ্যে ইদ্রিস আলীর গ্রন্থ থেকেও নেওয়া হয়েছে। যথাযথ অনুসন্ধান হলে প্রমাণিত হতে পারে যে ওই পৃষ্ঠাগুলোতে ব্যবহৃত তথ্যও লেখকের নয়। এমন অবস্থায় বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

ইফফাত আরা নার্গিস বলেন, ‘সংগীতের প্রতি প্রবল আগ্রহের কারণে আমি লীনা তাপসী খানের “নজরুল-সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার” নামের গ্রন্থটি সংগ্রহ করি। কিন্তু গ্রন্থটি পড়তে গিয়ে আমার এর আগে পড়া তিন-চারটি গ্রন্থের সঙ্গে বেশ কিছু অংশের হুবহু মিল খুঁজে পাই, যা পরিষ্কার চৌর্যবৃত্তি। এই চুরির ওপর ভিত্তি করে যদি তাঁর পিএইচডি অভিসন্দর্ভ রচিত হয়ে থাকে, তবে এই ডিগ্রি তদন্ত করে বাতিল করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আর যদি এই গ্রন্থের সঙ্গে পিএইচডির কোনো সম্পর্ক না থাকে, তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহযোগী অধ্যাপক হয়ে অন্যের গ্রন্থ থেকে যথাযথ তথ্য–সংকেত উল্লেখ না করে নিজের গ্রন্থে ব্যবহার করে যে চৌর্যবৃত্তির আশ্রয় তিনি নিয়েছেন, তার যথাযোগ্য বিচার হওয়া উচিত বলে আমি দাবি করি। এই অভিসন্দর্ভের কারণে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেয়েছেন, এই গ্রন্থের কারণে তিনি পদোন্নতি পেয়েছেন। এই গ্রন্থের জন্য তিনি নজরুল পদকও পেয়েছেন। অর্থাৎ এই চৌর্যবৃত্তির মাধ্যমে তিনি আর্থিক সুবিধা, পেশাগত সুবিধা ও সামাজিক মর্যাদা গ্রহণ করেছেন; যা দুর্নীতি হিসেবেও গণ্য।’

সংবাদ সম্মেলন ডাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর অভিযোগ জানিয়ে তদন্তের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাতে ফল হয়নি। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাড়াও দুজন সহ-উপাচার্য ও সিন্ডিকেটের সব সদস্যের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু তদন্তের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বরং লীনা একজন জাতীয় অধ্যাপকের দোহাই দিয়ে বলে বেড়াচ্ছেন, কেউ তাঁর কিছুই করতে পারবেন না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেন বিষয়টি তদন্ত করছে না, সেটি তাঁর কাছে রহস্য লাগছে।

এই সংবাদ সম্মেলন থেকে পাঁচ দফা দাবি জানান ইফফাত আরা নার্গিস। এগুলো হলো অভিযোগ তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী লীনা তাপসী খানের পিএইচডি ডিগ্রি বাতিল করা, এই ডিগ্রির জন্য পাওয়া সব সুবিধা প্রত্যাহার, ডিগ্রিটি দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে শাস্তি দেওয়া, ওই পিএইচডির ওপর রচিত ‘নজরুল-সঙ্গীতে রাগের ব্যবহার’ গ্রন্থটি বাতিলের জন্য নজরুল ইনস্টিটিউট ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ব্যবস্থা নেওয়া এবং এই গ্রন্থের জন্য পাওয়া নজরুল পদক বাতিল।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে লীনা তাপসী খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়৷ তাঁর পিএইচডির তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যথাযথ সূত্র উল্লেখ করে গবেষণায় অন্যের লেখা ব্যবহার করা যায়। যত দূর মনে পড়ে, লীনা তাপসী খানের অভিসন্দর্ভে তথ্যসূত্রের উল্লেখ ছিল।’ এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তাঁরা দেখছেন।