ডেঙ্গু: তথ্য বিশ্লেষণেই ব্যস্ত আইইডিসিআর

যশোরে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়েছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় রোগীদের ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দা ও সিঁড়ির নিচে রাখতে হচ্ছে। গতকাল যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে।  ছবি: প্রথম আলো
যশোরে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়েছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় রোগীদের ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দা ও সিঁড়ির নিচে রাখতে হচ্ছে। গতকাল যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। ছবি: প্রথম আলো

প্রায় এক মাস ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরের হাসপাতালে বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে। অথচ ঢাকার বাইরে এডিস মশার পরিস্থিতি কী, এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্য সরকারি দপ্তর থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা তিনটি জেলা ভ্রমণ করলেও এখনো তথ্য বিশ্লেষণ শেষ করতে পারেননি।

গতকাল সোমবার সারা দেশে ৭১৬ জন নতুন রোগী সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয় বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম। এর মধ্যে ঢাকায় ৩০০ জন, ঢাকার বাইরে ৪১৬ জন।

গত কয়েক দিনে যশোরে নিয়মিতভাবে রোগী বেশি ভর্তি হতে দেখা গেছে। গতকালও ৪৭ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। অন্য সব জেলায় রোগী ভর্তি কমে
এলেও বেড়েছে কুষ্টিয়াতে। কুষ্টিয়ায় গতকাল নতুন ২৭ জন রোগী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অধিকাংশ রোগী কুষ্টিয়ার বিভিন্ন গ্রামের।

কুষ্টিয়ার দাঁড়পাড়ায় ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ নিয়ে গত ২৮ আগস্ট প্রথম আলোতে ‘ছোট্ট গ্রামে ডেঙ্গুর বড় আক্রমণ’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হয়। ৩০ আগস্ট আইইডিসিআরের প্রতিনিধিদল কুষ্টিয়া যায়। দলটি দাঁড়পাড়াতেও গিয়েছিল। কিন্তু তারা কী পেয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি।

এরপর ৫ সেপ্টেম্বর আইইডিসিআরের পরিচালকসহ গবেষক ও বিজ্ঞানীদের দল মেহেরপুর গিয়েছিল। সেখানে তারা কী পেয়েছে, তা এখনো সাধারণ মানুষ জানতে পারেনি।

পবিত্র ঈদুল আজহার পর থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। বরিশালেও প্রচুর রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতে থাকে। পরিস্থিতি জানতে ২১ আগস্ট বরিশালে গিয়েছিল আইইডিসিআরের প্রতিনিধিদল। ২০ দিন পর গতকাল সোমবার পর্যন্ত আইইডিসিআর বলতে পারেনি, তারা বরিশালে কী পেয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গতকাল রাতে আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘তথ্য বিশ্লেষণের কাজ চলছে।’

 ৬৪ জেলায় ডেঙ্গু রোগ ধরা পড়েছে। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা সারা দেশেই আছে বলে ধারণা করছেন কীটতত্ত্ববিদেরা। কিন্তু সঠিক তথ্য কারও কাছে নেই। শুধু ব্যতিক্রম যশোরের সিভিল সার্জন কার্যালয়। তারা জরিপ করে শহর ও গ্রামে এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, ডেঙ্গু এখন শুধু ঢাকা শহরের রোগ নয়। সারা দেশই এখন ডেঙ্গুর ঝুঁকির মধ্যে।

কীটতত্ত্ববিদ মঞ্জুর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বরিশালের শের–ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী আসছে পটুয়াখালী বা অন্য জেলার গ্রাম থেকে। কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে রোগী আসছে বিভিন্ন গ্রাম থেকে। এসব গ্রামে মশা নিধন বা নিয়ন্ত্রণে কে কী করছে, তা কিছুই জানা যাচ্ছে না। এখনই জেলায় জেলায় মশা নিধনের জোরালো উদ্যোগ না নিলে আগামী বছর পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

এ বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ৭৭ হাজার ২৩০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩ হাজার ৫৪৪ জন রোগী ছিল ঢাকার বাইরের। ঢাকার বাইরে বেশ কিছু মৃত্যুর ঘটনাও আছে।

এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতকাল দুপুরে শাপলা খাতুন (২৩) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। শাপলা রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর গ্রামের হাসিবুল হাসানের স্ত্রী।

শাপলার মামা আবু ওমাইয়া বলেন, ৪ সেপ্টেম্বর জ্বরে আক্রান্ত হলে শাপলাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়ার প্রস্তুতির সময় তিনি মারা যান।

এ নিয়ে এই বছর ২০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয় বা দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো এই মৃত্যুর সংখ্যা সংগ্রহ করেছে।

এর সঙ্গে আইইডিসিআরের মৃত্যুর সংখ্যার পার্থক্য আছে। আইইডিসিআর বলছে, তারা এ পর্যন্ত ১৯৭টি মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে মৃত্যু পর্যালোচনা কমিটি ১০১টি ঘটনা পর্যালোচনা করেছে। কমিটি বলেছে, ৬০টি মৃত্যুর নিশ্চিত কারণ ডেঙ্গু। বাকি ৪১টি মৃত্যুর কারণ তারা প্রকাশ করেনি।