তবু মাথা নোয়াবার নয়

ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের ছোবলে শেফালি বেগম ও মজিবর মল্লিকের দোচালা ঘরটি পড়ে গেছে। ভাঙা ঘর পেছনে ফেলে ঝড়-ঝঞ্ঝার মধ্যে সন্তানদের নিয়ে দৌড়ে আধা কিলোমিটার দূরে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েছিলেন তাঁরা।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ফিরে এসে দেখেন, ঘরটি দুমড়েমুচড়ে চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। রাতে আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে পরদিন সকালে স্বামী-স্ত্রী মিলে ঘরের টিন-কাঠ কুড়িয়ে এনে নড়বড়ে ছোট্ট ঘরটি আবার দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন। শেফালি-মজিবর দম্পতির বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার দেউলীসুবিদখালী ইউনিয়নের পায়রা নদীপারের মেহেন্দিয়াবাদ গ্রামে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার জলোচ্ছ্বাসেও তাঁদের ছোট্ট ঘরটি ভেঙে গিয়েছিল। শেফালি-মজিবরের মতো এমন দশা মেহেন্দিয়াবাদ গ্রামের আরও অনেকের। কারও ঘর সম্পূর্ণ, কারও আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। পিয়ারা বেগম স্বামী নুরু আকনকে নিয়ে ভেঙে যাওয়া ঘরটি মেরামত করছিলেন।

পিয়ারা বেগম বলেন, ‘বইয়া থাকলে তো কেই আইয়া ঘর তুইল্যা দিবে না। নিজেগো কাজ নিজেরাই করতে হইবে।’ হালিমা বেগমের স্বামী সোবাহান মল্লিক জানান, বারবার তাঁরা দুর্যোগের শিকার হচ্ছেন। দুর্যোগ তাঁদের পিছু ছাড়ছে না।

চরখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবদুল মালেক জানান, এখানকার লোকজন খুব গরিব। সিডর ও আইলায় এখানকার অনেকেই পুনর্বাসনের ঘর পায়নি। এরা বাঁধ ও তার আশপাশে ঝুপড়িঘরে বসবাস করছিল। এবারের ঘূর্ণিঝড়ে তাদের সেই ঘরটিও বিধ্বস্ত হয়েছে।

দেউলীসুবিদখালী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম মৃধা জানান, প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে তাঁর ইউনিয়নের লোকজন বেঁচে আছেন। মহাসেনের ছোবলে তাঁর ইউনিয়নের মোট ৯৭৪টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৫৫টি ঘর। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পায়রা নদীপারের মেহেন্দিয়াবাদ গ্রামে। তবে মানুষ দুর্যোগের কাছে মাথা নোয়ায়নি। নিজেদের উদ্যোগে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

সিডরের আঘাতেও দেউলীসুবিদখালী ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। তখন ৮৬ জন নারী-পুরুষ ও শিশু প্রাণ হারিয়েছিল।