১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার তরমুজ

  • তরমুজের বাজারমূল্য দাঁড়াবে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা
  • তরমুজের আবাদ আগের বছরের দ্বিগুণ হয়েছে

বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় প্রায় ১৭ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদনের আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রতি কেজি ১০ টাকা মূল্য ধরা হলেও উৎপাদিত এই তরমুজের বাজারমূল্য দাঁড়াবে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। দেশের অর্থনীতিতে এটা বড় অর্জন বলে মনে করছেন তাঁরা।

কৃষকেরা বলছেন, খারাপ আবহাওয়া সত্ত্বেও ২০১১ সালের পর থেকে এই অঞ্চলে তরমুজের আবাদ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। লবণাক্ততা, খরা, অসময়ে বৃষ্টিপাতসহ নানা কারণে ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার পর এ অঞ্চলের কৃষকেরা বিকল্প ফসল উৎপাদন করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে গত বছর এই অঞ্চলে তরমুজের আবাদ তার আগের বছরের উৎপাদনের অর্ধেকে নেমে এসেছিল। আবাদ কম হলেও গত বছর উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবার তরমুজের আবাদ আগের বছরের দ্বিগুণ হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বরিশাল অঞ্চলে এবার তরমুজ আবাদ হয়েছে ৩৬ হাজার ৯১১ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদনের হার ৪৮ দশমিক ৭৪ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে এবার প্রায় ১৭ লাখ ৭২ হাজার মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন তাঁরা। তবে চাষিরা বলেছেন, এবার বেশি জমিতে আবাদ হলেও গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ মার্চ পর্যন্ত কয়েক দফার অকালবর্ষণের কারণে খেতে পানি জমে যাওয়ায় উৎপাদন কিছুটা কমতে পারে।

বরাবরের মতো পটুয়াখালী, বরগুনা ও ভোলায় সবচেয়ে বেশি তরমুজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে পটুয়াখালীতে ২১ হাজার ৬৮২ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১০ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। বরগুনায় আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। ভোলায় আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৪৯১ হেক্টরে এবং উৎপাদন হবে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন। বরিশালে ৩৯৭ হেক্টর, পিরোজপুর ১২১ হেক্টর এবং ঝালকাঠি জেলায় ২০ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ হয়েছে।

পটুয়াখালীর রাঙাবালীর কাউখালী গ্রামের চাষি মজিবর রহমান বলেন, এ বছর নিজের ও অন্যের জমি মিলিয়ে তিনি ৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ করেছেন। এখন আড়তদারেরা এলাকায় এসে চাষিদের কাছ থেকে তরমুজ সংগ্রহ করছেন। খেতে বসেই প্রতিটি তরমুজ ৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালে বিভাগের ৬ জেলায় ৩৫ হাজার ২৯১ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছিল। কিন্তু তার প্রায় অর্ধেক ফসলই ক্ষতিগ্রস্ত হয় ওই বছরের মার্চ-এপ্রিলের অতিবর্ষণের কারণে। ফলে উৎপাদন তার আগের বছরের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়। এ কারণে ২০১৮ সালে তরমুজ আবাদের পরিমাণ কমে। গত বছর আবাদ হয়েছিল ১৯ হাজার ২৮১ হেক্টর।

ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর মাটি-পানিতে লবণাক্ততা বাড়ায় ও ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে ধান উৎপাদনে ধস নামে। এতে এই অঞ্চলের লাখ লাখ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরপর কয়েক বছর ধান উৎপাদন কমতে থাকে। এর মধ্যে কৃষকেরা বিকল্প হিসেবে তরমুজ চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ব্যাপক হারে তরমুজ চাষ বাড়তে থাকে ২০১১ সাল থেকে।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের জমিতে লবণাক্ততার মাত্রা ২ থেকে ১০ ডিএস/মিটার। ফসল উৎপাদনের জন্য জমিতে ২ ডিএস সহনীয় মাত্রা। এর বেশি লবণাক্ত জমিতে ফসল উৎপাদন করা যায় না।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেন, কৃষকেরা এখন না বুঝে চাষ করছেন, তাতেই সাফল্য পাচ্ছেন। মাটি পরীক্ষা করে কৃষকদের মধ্যে ভালো জাতের বীজ সরবরাহ করতে পারলে ফলন আরও অনেক গুণ বাড়বে। এ নিয়ে গবেষণাসহ কৃষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলিমুর রহমান বলেন, কৃষকের উৎপাদিত এসব তরমুজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা ও বিপণনব্যবস্থাকে সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রাকৃতিক বৈরিতা থেকে তরমুজখেত রক্ষায় কৃষকদের নতুন নতুন কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হলে এই খাতে আরও সফলতা আনা সম্ভব।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক তাওফিকুল আলম বলেন, চলতি মৌসুমে তরমুজের আবাদ ও ফলন দুটোই বেড়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় ফলনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে তাঁরা আশা করছেন।