তরুণ প্রজন্ম নারী-পুরুষের সমতায় পথ দেখাবে

রাশেদা কে চৌধূরী
ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বসংসারের সর্বত্র নারীর ভূমিকা। নারীকে সবকিছুই করতে হয়। সন্তান ধারণ, লালন-পালন করতে হয় নারীকে। পরিবারের অনেক পুরুষ একধরনের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বড় হন বলেই হয়তো নারীকে শুধু আর্থিক সহায়তা করেন অথবা পড়ালেখার খরচ দেন। কিন্তু তাতে দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।

আমরা দেখি, নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত—সব পরিবারে মায়েদের আরেকটি বাড়তি দায়িত্ব থাকে সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, লেখাপড়া করানো। করোনাকালে অনলাইনে সন্তানদের লেখাপড়া করানোর দায়িত্বও মায়েদের নিতে হয়েছে। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে,​ পরিবারের কোনো নারী কর্মজীবী হলে তাঁদের প্রতি সঙ্গীর যে দায়িত্ব আছে, বাড়ির অন্য পুরুষদেরও এ বিষয়ে যত্নশীল হতে হবে।

উদাহরণ দিয়ে বলি, গণমাধ্যমে আমাদের যে নারীরা কাজ করছেন, তাঁদের অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয় এবং সময়​মতো কাজে যেতে হয়। একইভাবে চিকিৎ​সা পেশায় যাঁরা আছেন, আইনশৃঙ্খলা পেশায় যাঁরা আছেন, তাঁদের প্রত্যেককে বিশেষ দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেখানে যদি পরিবারের পুরুষেরা না এগিয়ে আসেন, তাহলে এই বোঝা বহন করা নারীর জন্য কষ্টকর হয়ে ওঠে।

আমরা বলি, সর্বত্র বৈষম্য বাড়ছে। এই বৈষম্য হলো চিন্তাচেতনায়, কাজকর্মে। ঘরের ভেতরে যদি বৈষম্য থাকে, তাহলে তো সমাজে বাড়বেই। উদাহরণ দিয়ে বলি, নারী যদি সমপরিমাণ আয় করে ঘরে আসেন, তারপরও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা থাকে না। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত—সব পরিবারে এটা দেখা যায়। ধরেই নেওয়া হয়, সিদ্ধান্ত গ্রহণ পুরুষের অধিকার। এটাই পুরুষতান্ত্রিকতা।

কিন্তু নারীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকার ইতিবাচক উদাহরণও আছে। আজ যেসব নারী রাজনীতিতে, প্রশাসনে, সামাজিক আন্দোলনে ও উন্নয়ন খাতে আছেন, তাঁদের পরিবারের পুরুষেরা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা এই সহায়তা পেয়েছেন বলে আজকের জায়গায় আসতে পেরেছেন। এটা​ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও সত্য। গ্রামে, গঞ্জে, শহরে তাঁরা ঘরের পুরুষের সহায়তা পেয়েছেন।
কোনো গণমাধ্যম যদি নারীবান্ধব হয়, সহকর্মীরা যদি নারীবান্ধব হন, তাহলে সেই গণমাধ্যম অনেক বেশি সুন্দর ও বৈষম্যহীন হয়ে ওঠে। যে কারণে আমরা দেখেছি, অ্যাসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নারী-পুরুষ একসঙ্গে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু নারীর প্রতি সহিংসতার অন্য যে ধরনগুলো আছে, সেখানে পুরুষদের তেমনভাবে এগিয়ে আসতে দেখি না, বরং নিরুৎসাহিত হতে দেখি।

গ্রামে, গঞ্জে, তৃণমূল পরিবারে যেখানে বেসরকারি সংগঠনগুলো কাজ করে, সেখানে অনেক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ দায়িত্ব ভাগ করে নেন, সহযোগিতা করেন। এই দায়িত্ব ভাগের বিষয়টা যদি রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমসহ সবক্ষেত্রে থাকে, তাহলে নারীর পথচলা অনেক বেশি সহজ হবে।

এখানে আরেকটি কথা বলতে চাই, আমাদের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অনেক সময় দেখি নারীকে সম্মান করার ক্ষেত্রে তাদের ইতিবাচক দৃষ্টি​ভঙ্গি ততটা থাকে না। আবার এই তরুণ প্রজন্মই নারীর প্রতি লাঞ্ছনা-নির্যাতনের প্রতিবাদে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়। কাজেই এটা আশা করতে পারি, নতুন প্রজন্ম পুরুষতান্ত্রিকতা থেকে বে​র হয়ে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে এগিয়ে আসবে। তারা নারী-পুরুষ সমতার ক্ষেত্রে পথ দেখাবে।


রাশেদা কে চৌধূরী: গণসাক্ষরতার অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা।