তামাকপণ্যে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ ও ই-সিগারেট নিষিদ্ধ প্রধান অগ্রাধিকার

তামাকপণ্যে উচ্চ হারে সুনির্দিষ্ট ট্যাক্স আরোপ, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা প্যাকেটের ৯০ শতাংশ করা এবং ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করাসহ বিদ্যমান আইন সংশোধন করা এখন প্রধান অগ্রাধিকার। বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০২১ পালন উপলক্ষে ফেসবুক পেজ স্টপ টোব্যাকো বাংলাদেশ আয়োজিত ‘তামাকমুক্ত নতুন দিন’ শীর্ষক লাইভ অনুষ্ঠানে চারজন সাংসদের আলোচনায় এ কথাই উঠে এসেছে। এই সাংসদেরা হলেন হাবিবে মিল্লাত, শিরীন আখতার, শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও রানা মোহাম্মদ সোহেল। গতকাল সোমবার এ লাইভ অনুষ্ঠান হয়।

আন্তর্জাতিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন ব্যক্তিমালিকানাধীন টেলিভিশন চ্যানেলে তথ্য প্রচারণা চালিয়ে আসছে এবং ইতিমধ্যে ২১টি টিভি স্পট তৈরিতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে। ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের সহায়তাপুষ্ট তামাকবিরোধী প্রচারণা পেজ ‘স্টপ টোব্যাকো বাংলাদেশ’ সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে তামাকপণ্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবহিত করাসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে তামাকবিরোধী আইন প্রণয়ন, সংস্কার ও বাস্তবায়নে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। বর্তমানে পেজটির ফলোয়ারের সংখ্যা ৬ লাখ ৬৫ হাজার। প্রতি মাসে পেজটিতে ভিডিও ও বিভিন্ন ধরনের মিম নিয়ে প্রায় ২০টি করে পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। ফলে প্রতি মাসে লাখ লাখবার তামাকবিরোধী বার্তা পাচ্ছেন ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। পেজটির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তামাক ব্যবহার ছেড়েছেন দেশের প্রায় ৫ হাজার মানুষ।

অনুষ্ঠানে তামাকজাত পণ্যের নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জের সাংসদ হাবিবে মিল্লাত বলেন, মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ক্ষতিসাধন করে তামাক। এটি নিয়ন্ত্রণে এখন প্রয়োজন বিদ্যমান আইনের সংস্কার করে যুগোপযোগী করা ও এর বাস্তবায়ন জোরদার করা। গাইবান্ধা-১ আসনের সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারী তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে তামাকপণ্যের প্যাকেটের সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা যেখানে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ, সেখানে আমাদের মাত্র ৫০ শতাংশ। আমাদের দেশেও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা ৯০ শতাংশ করা অত্যাবশ্যক।

শিরীন আখতার বলেন, ‘তামাকজাত পণ্যের ট্যাক্স বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি। প্রতিবছর আমরা এ নিয়ে সরব হই কিন্তু কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হচ্ছে না। তাই আমাদের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ অনুযায়ী অগ্রসর হতে হবে।’ নীলফামারী-৩ আসনের সাংসদ রানা মোহাম্মদ সোহেল বলেন, স্বাস্থ্য খাতে তামাকজনিত রোগের চিকিংসা ব্যয় তামাক খাত থেকে আসা ২৩ হাজার কোটি টাকা রাজস্বের চেয়ে অনেক বেশি। তাই সরকারকে তামাক নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হতে হবে।

আলোচকেরা একমত যে ২০৪০ সালের মধ্যে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ অর্জন করতে হলে তামাকজাত পণ্যে উচ্চমাত্রায় সুনির্দিষ্ট ট্যাক্স আরোপ করা জরুরি এবং এতে কোম্পানির লাভ স্থিতিশীল রেখে সরকারের রাজস্ব ব্যাপকভাবে বাড়ানো সম্ভব হবে এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে। তাঁরা সবাই একসঙ্গে মিলে তাঁদের সহকর্মী সাংসদদের সঙ্গে নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে তামাকপণ্যে ট্যাক্স বাড়ানোর অনুরোধ জানাবেন এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানাবেন।

আলোচনা থেকে কিশোর ও তরুণেরা তামাকে আসক্ত না হতে ও তামাক ব্যবহারকারীরা তামাক ছাড়তে উৎসাহী হবেন বলে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন।