তারেক ও জোবায়দা পলাতক কি না, সেই প্রশ্নে শুনানি শুরু

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবায়দা রহমান পলাতক কি না এবং তাঁদের পক্ষে আইনজীবী লড়তে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়েছে। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আজ রোববার এ শুনানি গ্রহণ করেন। শুনানি নিয়ে আদালত আগামী রোববার শুনানির পরবর্তী দিন রেখেছেন।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও হিসাব বিবরণীতে সম্পদ গোপন করার অভিযোগে করা মামলা দায়ের ও এর প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমান ১৫ বছর আগে হাইকোর্টে পৃথক তিনটি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে তখন হাইকোর্ট রুল দিয়েছিলেন। রুল শুনানির জন্য তারেক রহমানের করা দুটি রিট ও জোবায়দা রহমানের করা একটি রিট গত ২৯ মে হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে।

সেদিন আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী সময়ের আরজি জানান। পলাতক তারেক রহমানের পক্ষে আইনজীবী সময়ের আরজি জানাতে পারেন কি না, তা নিয়ে সেদিন প্রশ্ন রাখেন দুদকের আইনজীবী। এর ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি হয়।

এর আগে সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলা নিয়ে জোবায়দা রহমানের করা লিভ টু আপিল খারিজ করে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, যখন আবেদনকারী (জোবায়দা) বাতিল আবেদনটি (২০০৮ সালে এপ্রিলে হাইকোর্টে করা) করেন, তখন তিনি আইনের দৃষ্টিতে পলাতক ছিলেন।

তারেক ও জোবায়দা পলাতক কি না, শুনানি শুরু

আজ মধ্যাহ্নবিরতির পর তারেকের রিটের বিষয়ে শুনানিতে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, তারেক রহমান যখন আবেদন করেন, ওকালতনামা দিয়ে তারেক রহমান রিট করেন। আদালত বলেন, ‘কোন মামলা সূত্রে ওকালতনামা দেওয়া হয়েছে, তার উল্লেখ নেই। ওই মামলার সূত্রে এসেছেন, তা স্টেটমেন্ট দেবেন না?’ একপর্যায়ে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, সেসব মামলায় সাজা হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে আত্মসমর্পণ না করে প্রতিকার পাবেন না। এটি পাইকারি হারে হবে না।
আদালত বলেন, আত্মসমর্পণ না করে আবেদন করতে পারবেন না—এমন নজির আছে। এ ক্ষেত্রে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণও করেননি। এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, মামলার কার্যক্রম চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়। তখন দেশে ছিলেন। এই মামলায় তারেক রহমান পলাতক নন।

আদালত বলেন, ‘এই মামলায় জোবায়দা রহমান আত্মসমর্পণ করেছেন বা তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল কি না, তা দেখান।’ তখন জোবায়দার রিটের বিষয়ে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, হাইকোর্টে উপস্থিত হওয়ার পর জোবায়দার করা বাতিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল ও স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন। আমলে নেওয়ার আট সপ্তাহের মধ্যে জোবায়দা রহমানকে নিম্ন আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছিল। হাইকোর্টের রায়ে পলাতক বলা হয়নি।

আদালত বলেন, আপিল বিভাগ হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেননি। তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি চেয়ে আবেদন দেওয়া হয়েছে। কেননা, রিভিউ আবেদন করা হবে।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে বলেন, আপিল বিভাগ রায়ে বলে দিয়েছেন, জোবায়দা রহমান পলাতক। এই মামলায় পলাতক হিসেবে বিবেচিত হবেন। ওই মামলা বাতিল আবেদনে ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল জোবায়দা হাইকোর্টে হাজির হন। পরদিন হাইকোর্ট রুল ও স্থগিতাদেশ দেন। এমন চর্চা করা যাবে না বলে রায়ে বলেছেন আপিল বিভাগ। একই মামলা নিয়ে রিট ও বাতিল আবেদন করা যাবে না। আট সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের অংশবিশেষ বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের রায় রিভিউ চাইতে হলে তাঁকে (জোবায়দা) আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এ অবস্থায় আপিল বিভাগের রায় কার্যকর থাকবে। রিট ও বাতিল আবেদনের পরিণতি একই হবে। আপিল বিভাগের অভিমত অনুসারে পলাতক জোবায়দার পক্ষে আইনজীবী লড়তে পারবেন না।

আদালত বলেন, জোবায়দা রহমান আত্মসমর্পণ করেছেন কি না? তখন এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, এ মামলায় অভিযোগ আমলেই নেওয়া হয়নি। তাই আত্মসমর্পণ করার পর্যায় আসেনি।

দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আপিল বিভাগ বলে দিয়েছেন, জোবায়দা রহমান পলাতক। তাঁদের বক্তব্য শোনার কোনো সুযোগ নেই। দুর্নীতি দমন কমিশন বনাম এইচ বি এম ইকবাল মামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরও বলেন, দেশের বাইরে থাকা পলাতক ব্যক্তির পক্ষে লড়লে আদালত অবমাননার মুখোমুখি কথাও এসেছে এই রায়ে। একটি মামলা নিয়ে চারটি আবেদন করা হয়েছে। দুটি জোবায়দার ও দুটি তারেক রহমানের।

দুর্নীতি দমন কমিশন বনাম এইচ বি এম ইকবাল মামলার বিষয়বস্তু দণ্ডিত ও পলাতক ব্যক্তি নিয়ে উল্লেখ করে এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, জোবায়দা দেশে ছিলেন ও হাইকোর্টে হাজির হয়েছিলেন। আর জোবায়দার বিরুদ্ধে করা মামলাটি ম্যাচিউরডও হয়নি। এই মামলায় তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অনুসন্ধান শুরুর পর ও তদন্তের পর তারেক রহমান পৃথক দুটি রিট করেন।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, তারেক রহমান এই মামলায় পলাতক। কেননা, তিনটি মামলায় তারেক রহমান দণ্ডিত হয়েছেন। তাঁর সাজা পরোয়ানা এখনো ঝুলছে। যদি তিনি দণ্ডিত না হতেন আর মামলাগুলোর বিচার শেষ না হতো, তাহলে ভিন্ন কথা। আইনের দৃষ্টিতে সাজা নিয়ে ঘুরছেন তারেক রহমান।

শুনানির শেষ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এই মামলায় তারেক রহমানকে ২০০৭ সালের ৩১ অক্টোবর গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর হয়। রিট দুটির একটিতে লেটার অব অথরিটি (ক্ষমতা অর্পণপত্র) দেওয়া হয়েছে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এবং অন্যটিতে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর। অর্থাৎ গ্রেপ্তার দেখানোর আগে। তারেক রহমান জামিন নেননি এবং আত্মসমর্পণও করেননি। এখন তিনি পলাতক।

আদালতে এ জে মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম।