তারেক-জোবাইদার রিট হাইকোর্টে খারিজ, দুর্নীতির মামলা চলবে

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

আইনের দৃষ্টিতে তারেক রহমান পলাতক। আত্মসমর্পণ না করে তিনি আইনি প্রতিকার চাইতে পারেন না। তাঁর পক্ষে আইনজীবীর শুনানির সুযোগ নেই। আর গত ১৩ এপ্রিল আপিল বিভাগের রায়ে এসেছে, জোবাইদা রহমান পলাতক। তাঁর মামলা চালানোর এখতিয়ার নেই। তাঁর পক্ষে আইনজীবী লড়তে পারেন না।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানের করা পৃথক রিট খারিজ (রুল ডিসচার্জ) করে আজ রোববার হাইকোর্ট এ রায় দিয়েছেন। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও হিসাববিবরণীতে সম্পদ গোপন করার অভিযোগে করা মামলা দায়ের ও তার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে তারেক-জোবাইদা পৃথক রিট করেছিলেন।

রিট খারিজ করে দেওয়া রায়ে হাইকোর্ট বলেন, রিট (তারেক-জোবাইদা) গ্রহণযোগ্য নয়। রুল খারিজ করা হলো। ইতিপূর্বে দেওয়া স্থগিতাদেশ (মামলার কার্যক্রমে) প্রত্যাহার করা হলো।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে মামলার রেকর্ড উপযুক্ত আদালতে পাঠাতে নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট যত দ্রুত সম্ভব মামলাটি নিষ্পত্তি করতে সিনিয়র স্পেশাল জজকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলা দায়ের ও তার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে তারেক-জোবাইদা ১৫ বছর আগে হাইকোর্টে পৃথক তিনটি রিট করেছিলেন। তখন হাইকোর্ট রুল দিয়েছিলেন। পাশাপাশি মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়।

রুল শুনানির জন্য তারেকের করা দুটি রিট ও জোবাইদার করা একটি রিট গত ২৯ মে হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন পলাতক তারেকের পক্ষে আইনজীবী সময়ের আরজি জানাতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রাখেন দুদকের আইনজীবী।

৫ জুন তারেক ও জোবাইদা পলাতক কি না, তাঁদের পক্ষে আইনজীবী লড়তে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে শুনানি হয়। এরপর ১২ ও ১৯ জুন শুনানি হয়।

আদালতে তারেক-জোবাইদার রিটের বিষয়ে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও জয়নুল আবেদীন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কায়সার কামাল।

দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন শুনানিতে অংশ নেন।

শুনানি শেষে ১৯ জুন হাইকোর্ট রায় প্রদানের জন্য ২৬ জুন দিন রাখেন। সে অনুযায়ী, আজ রায় দেওয়া হয়।

শুনানিতে যা হলো

শুনানিতে দুদকের আইনজীবী বলেন, তিনটি মামলায় তারেক দণ্ডিত হয়েছেন। তাঁর সাজা পরোয়ানা এখনো ঝুলছে। যদি তিনি দণ্ডিত না হতেন, আর মামলাগুলোর বিচার শেষ না হতো, তাহলে ভিন্ন কথা। তারেক এ মামলায় পলাতক। একই মামলা বাতিল চেয়ে জোবাইদার করা আবেদনের ওপর আপিল বিভাগ গত ১৩ এপ্রিল রায় দেন। এ রায়ে আপিল বিভাগ বলে দিয়েছেন, জোবাইদা পলাতক। পলাতক বলে তাঁদের পক্ষে আইনজীবী শুনানি করতে পারেন না।

তারেক ও জোবাইদার বিষয়ে আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘মামলাটি ভ্রূণ অবস্থায়। এখনো অভিযোগ আমলে নেওয়া হয়নি। তাই আত্মসমর্পণ করার পর্যায়ে আসেনি। জোবাইদার ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করা হবে। তাই এ বিষয় নিয়ে বলছি না। তবে তারেক যখন রিট করেন, তখন তিনি পলাতক ছিলেন না। কোনো মামলায় কেউ দণ্ডিত হলে বিচারাধীন অপর মামলায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে পলাতক হয়ে যাবেন, এমন নজির দেখছি না। তারেক এ মামলায় জামিন পেয়েছেন, যা আপিল বিভাগ বহাল রেখেছেন। তাই এ মামলায় তাঁকে পলাতক বলা যাবে না।’

এর আগে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, আপিল বিভাগ রায়ে বলে দিয়েছেন, জোবাইদা পলাতক। এ মামলায় পলাতক হিসেবে তিনি বিবেচিত হবেন। মামলা বাতিল আবেদনে ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল জোবাইদা হাইকোর্টে হাজির হন। পরদিন হাইকোর্ট রুল ও স্থগিতাদেশ দেন। এমন চর্চা করা যাবে না বলে রায়ে বলেছেন আপিল বিভাগ।

এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, একই মামলা নিয়ে রিট ও বাতিল আবেদন করা যাবে না। আট সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের অংশবিশেষ বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের রায়ের রিভিউ চাইতে হলে তাঁকে (জোবাইদা) আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এ অবস্থায় আপিল বিভাগের রায় কার্যকর থাকবে। রিট ও বাতিল আবেদনের পরিণতি একই হবে। আপিল বিভাগের অভিমত অনুসারে পলাতক জোবাইদার পক্ষে আইনজীবী লড়তে পারবেন না।

অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানিতে আরও বলেন, এ মামলায় তারেককে ২০০৭ সালের ৩১ অক্টোবর গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর হয়। রিট দুটির একটিতে লেটার অব অথরিটি (ক্ষমতা অর্পণপত্র) দেওয়া হয়েছে ২০০৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। অন্যটিতে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর, অর্থাৎ গ্রেপ্তার দেখানোর আগে। এখন তিনি পলাতক।