তিন–চার দিনের মধ্যে আসছে বর্ষা, জুনে বন্যার আশঙ্কা

আকাশে অল্প অল্প করে জমে উঠছে মেঘ। যেকোনো সময় নামতে পারে অঝোর বৃষ্টি।
প্রথম আলো ফাইল ছবি

চলতি বছরের মে মাসের প্রায় পুরো সময়জুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টি ঝরেছে। কোথাও কোথাও একই সময়ে বয়ে গেছে দাবদাহ। মেঘ-বৃষ্টি-গরম মিলেমিশে মে মাস কেটে যেতে না যেতে বাংলাদেশে দ্রুত এগিয়ে আসতে শুরু করেছে এবারের বর্ষা।

বর্ষাকালের পূর্ব লক্ষণ হচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে মৌসুমি বায়ু দক্ষিণ ভারত হয়ে মিয়ানমারকে স্পর্শ করে বাংলাদেশের টেকনাফ দিয়ে প্রবেশ করে। এরই মধ্যে তা দক্ষিণ ভারত উপকূল ও মিয়ানমারে চলে এসেছে বলে গতকাল শুক্রবার প্রকাশ করা ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের মৌসুমি বায়ু হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সাধারণত জুনের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশে মৌসুমি বায়ু দেখা দেয় বা বর্ষাকাল শুরু হয়। তবে এবার জুনের প্রথম থেকেই দেশে বর্ষা শুরু হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদেরা। সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সঙ্গে আবহাওয়া অধিদপ্তরের মৌসুমি বায়ুর গতিপ্রকৃতি নিয়ে একটি সভাও গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে। এবার যথাসময়ে, অর্থাৎ জুনের শুরু থেকে মাঝারি মাত্রার শক্তিশালী মৌসুমি বায়ু দেশে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বলে মতামত দেওয়া হয়েছে সেখানে। ফলে আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে চট্টগ্রাম দিয়ে অঝোরে বৃষ্টি নামিয়ে বর্ষা বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আরও তিন থেকে চার দিন পর রাজধানীসহ সারা দেশে বৃষ্টি শুরু হতে পারে।

বাংলাদেশের আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা করেন, এমন একাধিক বিজ্ঞানী প্রথম আলোকে বলেন, এবার মৌসুমি বায়ু হতে পারে বেশ শক্তিশালী। এর সঙ্গে আসা বিশাল মেঘমালার কারণে বৃষ্টি বেশি হবে। ফলে এবার বন্যা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি মাত্রায় হতে পারে। স্বাভাবিক বন্যায় দেশের ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। আর মাঝারি মাত্রার বন্যায় তা ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ হয়ে থাকে।

এ বিষয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূইয়া প্রথম আলোকে বলেন, মৌসুমি বায়ু এবার একটু আগেভাগে বাংলাদেশের দিকে আসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে এর অগ্রভাগ মিয়ানমারের আরাকান উপকূল ও ভারতের দক্ষিণ উপকূল স্পর্শ করেছে। তিনি বলেন, মৌসুমি বায়ুর কারণে বৃষ্টি বেড়ে এবার জুনের মাঝামাঝি সময় থেকে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপরে চলে যেতে পারে। ফলে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ওই সময় থেকে বন্যা শুরু হতে পারে।

মৌসুমি বায়ুর গতিপ্রকৃতি নিয়ে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, এ বছর পশ্চিমা লঘুচাপের কারণে বর্ষা আসার আগের সময়টায় মেঘ-বৃষ্টি ও বজ্রপাত বেশি থাকবে। অর্থাৎ আগামী তিন-চার দিন বাংলাদেশের উজানে ভারতের মেঘালয়, আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ওই পানি ঢল হয়ে বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা দিয়ে প্রবেশ করবে।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, চলতি মে মাসজুড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যে বৃষ্টি হয়েছে, তা মূলত পশ্চিমা লঘুচাপের প্রভাবে। লঘুচাপের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টির সঙ্গে থাকে বজ্রপাত আর দমকা হাওয়া। ফলে টানা মুষলধারে বৃষ্টি হয় না। অল্প সময়ের জন্য বৃষ্টি এসে আবার চলে যায়। কিন্তু মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে বিশাল মেঘমালা ভেসে আসে। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে একযোগে টানা বৃষ্টি শুরু হয়।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ বলছে, সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ১০-১২ দিন ধরে যে বন্যা হয়, তা নিয়ে আপাতত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনার সব এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। জেলাগুলোতে আপাতত বন্যার কোনো আশঙ্কা নেই।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, আজ শনিবার ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের বেশির ভাগ স্থানে এবং রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু স্থানে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টিহীন থাকায় পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, পটুয়াখালী ও বাগেরহাটের বেশির ভাগ জায়গায় মৃদু দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। তা আজও অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে রাঙামাটিতে, ৫৪ মিলিমিটার। আর বেশি তাপমাত্রা ছিল বাগেরহাটের মোংলায় ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।