তেলের পর বাড়ছে চিনির দাম

রাজধানীর কারওয়ানবাজারে নিত্যপণ্যের দোকান
ফাইল ছবি

ভোজ্যতেলের পর এবার বাজারে বাড়ছে চিনির দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ৪–৫ টাকা বেড়ে ৬৬ থেকে ৬৮ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অবশ্য অনেক দোকানে এখনো আগে কেনা চিনি ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চালের পাইকারি বাজারে আমদানির খবরের সামান্য প্রভাব পড়েছে। দাম কমেছে কেজিপ্রতি এক থেকে দুই টাকা। তবে খুচরায় প্রভাব নেই। পেঁয়াজের বাজার স্থিতিশীল। অন্য কোনো পণ্যের দামেও তেমন হেরফের নেই।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা অনুযায়ী, খুচরা দোকানে চিনি বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা ছিল।

পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে কোম্পানিগুলো চিনির বাড়তি দাম চাইছে। এ কারণে পাইকারি বাজারও বাড়তি। তিনি বলেন, পাইকারি বাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার চিনির দাম ছিল প্রতি কেজি ৬২ টাকার কিছু বেশি। দুই মাস আগেও তা ৫২ টাকার আশপাশে ছিল।

কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনি ৩ হাজার ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়, প্রতি কেজি সাড়ে ৬৩ টাকার মতো।

দেশে পাঁচ থেকে ছয়টি প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত ভোজ্যতেল ও চিনি আমদানি করে পরিশোধনের পর বাজারে ছাড়ে। বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়ে কয়েক মাস ধরে কোম্পানিগুলো ভোজ্যতেলের দামও বাড়িয়েছে।

ঢাকার তিনটি বাজার ঘুরে গতকাল দেখা যায়, প্রতি কেজি খোলা সয়াবিন ১২০-১২৫ টাকা, পাম তেল ১১০-১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেলের প্রতি লিটারের দাম ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। আর পাঁচ লিটারের এক বোতল তেল বাজারভেদে ৫৭০–৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি করেন খুচরা বিক্রেতারা।
মিরপুর শাহ আলী মার্কেটের ব্যবসায়ী রাসেল খান বলেন, তেলের বোতলের গায়ে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) ৬১৫ থেকে ৬২৫ টাকা। বড় বাজারে বিক্রেতারা কমিয়ে বিক্রি করেন। পাড়ামহল্লার এ ছাড় পাওয়া যায় না।

সরকার চলতি মাসে বেসরকারি খাতে প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিলেও বাজারে তেমন একটা প্রভাব নেই। অনুমতি পেয়ে ব্যবসায়ীরা কিছু কিছু চাল ইতিমধ্যে ভারত থেকে দেশে এনেছেন। এ খবরে পাইকারি কিছু কিছু চালের দাম কেজিপ্রতি এক থেকে দুই টাকা কমেছে।

ঢাকার বাবুবাজারের চালের আড়ত শিল্পী রাইস এজেন্সির মালিক কাওসার রহমান বলেন, আমদানিতে চালের দাম কমবে, এই আশঙ্কায় বেচাকেনা কমে গেছে। ফলে দাম সামান্য কমেছে। এখন ভারতীয় চাল এলে পরিস্থিতি বোঝা যাবে।

মিরপুর শাহ আলী মার্কেটের চালের আড়তদার মো. হাসান মিয়াও দাম কিছুটা কমার কথা জানান। তিনি বলেন, পাইকারিতে এক বস্তা চাল (৫০ কেজি) ৫০-৬০ টাকা কমে বিক্রি করা হচ্ছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর টাউন হলের ডিএনসিসি কাঁচাবাজার, মিরপুর শাহ আলী মার্কেট ও কারওয়ান বাজারে ঘুরে দেখা যায়, বাজারে সরু মিনিকেট চাল ৬২ থেকে ৬৫ টাকা, নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৬২ টাকা, বিআর-২৮ চাল ৫৩ থেকে ৫৪ টাকা এবং মোটা গুটি স্বর্ণা চাল মানভেদে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

সরকার ৭ জানুয়ারি পেঁয়াজ আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এরপর পণ্যটির দরপতন থেমেছে। বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো। খুচরা বাজারে আকারভেদে ৩৮-৪০ টাকা দরে বিক্রি হয় দেশি পেঁয়াজ। পাইকারি ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি করেন।

ভারত ১ জানুয়ারি থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। তবে বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ দেখা যায়নি। পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী নারায়ণ চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজে ভরা। ব্যবসায়ীরাও দেশি পেঁয়াজই বিক্রি করছেন।

শীতের সবজির দামও গত সপ্তাহের মতো কম। নতুন আলু বাজারে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। শীতকালীন সবজির দামেও কোনো হেরফের নেই। আগের মতোই গতকাল শিম ২০–২৫ টাকা, বেগুন (লম্বা ও গোল) ৪০-৫০ টাকা, টমেটো ৪০ টাকা, ফুলকপি (মাঝারি) ২৫-৩০ টাকা, বাঁধাকপি (মাঝারি) ২০-২৫ টাকা এবং করলা ৪০-৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন বিক্রেতারা।