তেলের সঙ্গে চা কেনার শর্ত

বড় বাজারে নতুন দামে ভোজ্যতেল সরবরাহ শুরু করেছে কোম্পানিগুলো। যদিও অলিগলির দোকানে ঘাটতি রয়ে গেছে।

ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে সয়াবিন তেলের বোতলের সঙ্গে ক্রেতাদের অন্যান্য পণ্য কেনার শর্ত দিচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা। তাঁরা বলছেন, কোম্পানির পরিবেশকেরাই তাঁদের এসব পণ্য কিনতে বাধ্য করছেন। তাই তাঁরাও ক্রেতাদের তেলের সঙ্গে ওই সব পণ্য কেনার শর্ত আরোপ করছেন।

এই ঘটনা ঘটছে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহে ঘাটতির কারণে। অবশ্য বড় বাজারে গতকাল রোববার নতুন দামে তেল সরবরাহ শুরু করেছে কোম্পানিগুলো। ঘাটতি রয়ে গেছে ছোট বাজার ও অলিগলির মুদিদোকানে।

এদিকে আগে কিনে রাখা তেল বোতলে উল্লিখিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের (এমআরপি) চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

সয়াবিন তেলের সঙ্গে চা কেনার শর্ত দিতে দেখা যায় নিউমার্কেটের বনলতা কাঁচাবাজারে। সেখানে বাজার করতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার এক বাসিন্দা নাম না জানিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, তীর ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের একটি বোতল কেনেন তিনি। বোতলের গায়ে দাম ৭৬০ টাকা লেখা। দোকানি জোর করে ২১০ টাকা দামের একটি চায়ের প্যাকেট ধরিয়ে দিতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি চা নিতে রাজি ছিলেন না। তবে নিতে বাধ্য হন।

‘সরকার পাঁচ লিটার তেলের দাম নির্ধারণ করেছে ৯৮৫ টাকা। আর আমরা আজ (রোববার) দোকানদারদের তেল দিলাম ৭৪০ টাকায় (খুচরা মূল্য ৭৬০ টাকা)। এ কারণে একটি করে আধা কেজির চা–পাতার প্যাকেট বাধ্যতামূলক করেছি।’
এ কে এম খালেকুজ্জামান, নিউমার্কেট এলাকায় তীর ব্র্যান্ডের তেলের পরিবেশক

নিউমার্কেট এলাকায় তীর ব্র্যান্ডের তেলের পরিবেশক এ কে এম খালেকুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার পাঁচ লিটার তেলের দাম নির্ধারণ করেছে ৯৮৫ টাকা। আর আমরা আজ (রোববার) দোকানদারদের তেল দিলাম ৭৪০ টাকায় (খুচরা মূল্য ৭৬০ টাকা)। এ কারণে একটি করে আধা কেজির চা–পাতার প্যাকেট বাধ্যতামূলক করেছি।’

এদিকে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী কমপ্লেক্স ও বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের ১০টি দোকানের বিক্রেতারা জানান, ঈদের আগে থেকেই পরিবেশকেরা সয়াবিন তেলের সঙ্গে চা, আটা, ময়দা ইত্যাদি কেনা বাধ্যতামূলক করেছেন। ফলে তাঁরাও বাধ্য হয়ে ক্রেতাদের তেলের সঙ্গে অন্য পণ্য কেনার শর্ত দিয়েছেন।

বড় বাজারে নতুন দামের তেল

রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নিউমার্কেট, কাঁঠালবাগান, পশ্চিম পান্থপথ ও কলাবাগানের মোট ২৬টি দোকান ঘুরে গতকাল দেখা যায়, ১৪টি দোকানে তেল ছিল। ১২টিতে ছিল না। এসব দোকানে পাঁচ লিটার তেল ৯৭০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়।

কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, তীর, পুষ্টি ও ফ্রেশ ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল বাজারজাত করা হচ্ছে। নিউমার্কেটে গতকাল শুধু তীর ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল সরবরাহ করা হয়েছে।

কাঁঠালবাগান, পান্থপথ ও ধানমন্ডির কলাবাগান এলাকার দুটি গলি ও একটি ছোট বাজারের সাতটি দোকান ঘুরে দেখা যায়, কোনো দোকানে তেল নেই। কলাবাগানের মনির স্টোরের মালিক মনির হোসেন বলেন, ‘আমার দোকানে ২০ দিন হবে তেল নেই। আমি দোকানদার হয়ে শর্ষের তেল খাচ্ছি। আজকে ফোন দিয়েছিলাম, তারা বলেছে দু-তিন পরে আসবে।’

এদিকে চট্টগ্রাম শহরের বড় দুটি বাজার কর্ণফুলী কমপ্লেক্স ও বহদ্দারহাট বাজারে গতকালও কোনো কোম্পানি তেল সরবরাহ করেনি বলে খুচরা বিক্রেতারা দাবি করেছেন। বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের শাহজালাল স্টোরের মালিক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে কোনো কোম্পানি তেল দেয়নি।

মজুত তেল বেশি দামে বিক্রি

ঢাকার কাঁঠালবাগানে একটি মেস চালান মো. ফারুক। মেসের জন্য গতকাল বিকেলে কারওয়ান বাজার থেকে পাঁচ লিটার পুষ্টি ব্র্যান্ডের তেল কেনেন তিনি। গত ১৫ এপ্রিল উৎপাদিত এই তেলের বোতলে লেখা মূল্য ৭৬০ টাকা। কিন্তু কারওয়ান বাজারের আবু রব এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা তাঁর কাছ থেকে রেখেছেন ৯৫০ টাকা। ফারুক বলেন, ‘আগের তেল বেশি দাম রাখল আমার কাছ থেকে।’ অবশ্য আবু রব এন্টারপ্রাইজের দোকানি মো. নাইম বলেন, তাঁরা নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে তেল বিক্রি করেননি।

এখনো যে বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে সয়াবিন তেল মজুত আছে, তা বেরিয়ে এল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তরের অভিযানে। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের কর্ণফুলী কমপ্লেক্সের খাজা স্টোরের মালিক আবদুল হাকিমের দোকানের নিচে গুদামে এক হাজার লিটার সয়াবিন তেলের সন্ধান পায় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তাঁকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।