‘থমকে যাওয়া’ পৃথিবীতে আজ পিকনিক দিবস

যুক্তরাজ্যে পিকনিকে উপস্থিত লোকজন
ফাইল ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে মানুষের ভ্রমণে রয়েছে বিধিনিষেধ। তাই চাইলেও হইহুল্লোড় করে একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ নেই অনেক দেশে। এই ‘থমকে যাওয়া’ পৃথিবীতে আবার এসেছে বিশ্ব পিকনিক দিবস। প্রতিবছর ১৮ জুন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি বেশ ঘটা করে উদ্‌যাপিত হয়ে থাকে। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে এবার দিনটি উদ্‌যাপনে বিশ্বে তেমন বড় কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের তথ্য পাওয়া যায়নি।

যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ ডিকশনারিতে (অভিধানে) পিকনিকের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, আপনি যখন কোনো উপলক্ষ ছাড়া বাইরে খেতে যান, সেটাকেই মূলত পিকনিক বলা হয়। আর বাংলায় পিকনিকের অর্থ বনভোজন। বাংলাদেশের নানা প্রান্তে বনভোজন হয়। শীতকালে এটা বেশি হয়ে থাকে। তবে দেশে বিশ্ব পিকনিক বা বনভোজন দিবস ঘটা করে উদ্‌যাপন করার নজির খুব একটা নেই।

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই আয়োজন দেখা যায় বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও বছর বছর আয়োজন করেন বনভোজনের। অনেকে আবার তা পারিবারিকভাবে আয়োজন করে থাকেন।

বনভোজনের মূল উদ্দেশ্য, ভালো খাবার খাওয়া ও প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়া। সেই সঙ্গে মনকে চাঙা করা। এই দিবসের উৎপত্তি সম্পর্কে খুব একটা সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে বলা হয়, এর শুরুটা হয়েছে ফরাসি বিপ্লবের শেষের দিকের কোনো একটা সময়। অর্থাৎ, ১৭৯৯ সালের আশপাশে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিকনিক শব্দটি এসেছে ফরাসি শব্দ ‘pique-nique’ থেকে। ফ্রান্সে শুরুতে কিছু ব্যক্তি বাসা থেকে খাবার নিয়ে গিয়ে রাতে রেস্তোরাঁয় বসে খেতেন। সঙ্গে নিতেন ওয়াইন। সেই থেকেই পিকনিক শব্দটি মানুষের সংস্কৃতিতে জড়িয়ে পড়ে।

উত্তর গোলার্ধের মানুষ দিনটি কাটায় ঘরের বাইরে। অন্যদিকে একই পদ্ধতিতে দিনটি উদ্‌যাপিত করে দক্ষিণ গোলার্ধের মানুষও, তবে সেটা আগস্টের প্রথম সোমবারে।
শুরুর ধারণাটা ছিল এমন, খাবারের আয়োজনে সবার অবদান থাকবে। কোনো পার্কে বা প্রকৃতির সান্নিধ্যে গিয়ে আনন্দ–ফূর্তি করবেন এবং একসঙ্গে বসে খাবার খাবেন।

মূলত দুপুর ও রাতের খাবারের সময়টা বনভোজনের জন্য বেছে নেওয়া হতো। এখনো রীতি প্রায় তেমনই রয়েছে। তবে বাংলাদেশে বনভোজনের ধারণাটা একটু ভিন্ন। অনেকে নৌভ্রমণের মাধ্যমে বনভোজনের আয়োজন করেন।

বিশ্বের অনেক দেশে পিকনিক নিয়ে রয়েছে উন্মাদনা। তবে ২০০৯ সালে পর্তুগালের একটি বনভোজন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বনভোজনের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে।

রাজধানী লিসবনের একটি পার্কে রিয়েলাইজার ইমপ্যাক্ট মার্কেটিং ও মডেল নামের একটি প্রতিষ্ঠান বনভোজনটি আয়েোজন করে। ২২ হাজার ২৩২ জন ওই বনভোজনে অংশ নেন। বনভোজনটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসেও স্থান করে নিয়েছে। পর্তুগালের বিভিন্ন স্থান থেকে ৪০০টি বাসে করে ওই পার্কে আনা হয়েছিল তাঁদের।

কেন বনভোজন

বনভোজন এমন একটি আয়োজন, যেখানে মানুষ তার প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততা, যান্ত্রিকতা অন্তত এক দিনের জন্য হলেও ভুলে থাকতে চায়। মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করে। নিজের পরিচিতজনদের সময় দেয়। কিছু কিছু বনভোজনে আবার অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গেও পরিচিত হয়।

তবে গত বছর করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বনভোজন ঘটা করে আর পালন হচ্ছে না। বিকল্প হিসেবে অনেকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ভার্চুয়্যাল আড্ডাকে বেছে নিয়েছে। সবার অপেক্ষা, আবার বনভোজন শুরু হবে। আবার একত্রে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা, হইহুল্লোড়ে মাতবে বিশ্ব।