দণ্ডিত মিয়ার বদলে হাওলাদারের কারাভোগের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

মাদকের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মানিক মিয়ার বদলে মানিক হাওলাদারের কারাভোগের অভিযোগের বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করতে শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে এই অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৩০ দিনের মধ্যে অনুসন্ধান করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ ও জেল সুপারকে এই অনুসন্ধানকাজে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ সোমবার রুলসহ এই আদেশ দেন।

প্রকৃত নাম ও ঠিকানা যাচাই না করে নামের মিলে মানিক হাওলাদারকে কারাগারে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তাঁর স্ত্রী সালমা বেগম ২ মার্চ রিটটি করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী পার্থ সারথী রায়। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।

মাদকের এক মামলায় মানিক মিয়া নামের এক ব্যক্তিকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে চার বছরের কারাদণ্ড দেন সিরাজগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১। তার আগে মানিক মিয়া জামিন নিয়ে পলাতক হন।

মামলার সূত্রে নামের আংশিক মিল থাকায় গত বছরের ২৮ নভেম্বর মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেই থেকে তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারে আছেন। এ অবস্থায় মানিক হাওলাদারের স্ত্রী রিট করেন।

নাম-পরিচয়ের সত্যতা যাচাই ছাড়া এই মামলায় মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর আদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।

স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, সিরাজগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক, সিরাজগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলারসহ বিবাদীদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আইনজীবী পার্থ সারথী রায় প্রথম আলোকে বলেন, আদালত প্রকৃত আসামিকে চিহ্নিত করতে শরীয়তপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে বিচারিক তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আগামী ১২ এপ্রিল পরবর্তী আদেশের জন্য তারিখ রেখেছেন আদালত।

নথিপত্র ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানিক হাওলাদারের বাবার নাম নজরুল ইসলাম। আর মানিক মিয়ার বাবা ইব্রাহীম মৃধা। তবে মামলার নথিপত্রে মানিক মিয়ার বাবার নাম উল্লেখ আছে নজরুল হাওলাদার।

মামলার এজাহার ও থানা সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ২ জুন র‍্যাব অভিযান চালিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে ফেনসিডিলসহ চার ব্যক্তিকে আটক করে। র‍্যাবের পক্ষ থেকে ওই দিন সলঙ্গা থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে চার ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করা হয়। আসামিদের একজন শরীয়তপুরের ব্যাপারী কান্দি গ্রামের মানিক মিয়া। গ্রেপ্তারের কিছুদিন পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। এরপর থেকে তিনি পলাতক। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ মামলার রায়ে চার আসামিকে চার বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

শরীয়তপুরের সখীপুর থানা সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এ একটি মাদক মামলার চার বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. মানিক মিয়া, পিতা নজরুল হাওলাদার, গ্রাম ব্যাপারী কান্দির নামে একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর সখীপুর থানায় আসে। আর সখীপুর থানার পুলিশ গত বছরের ২৮ নভেম্বর ওই থানার আলম চান ব্যাপারী কান্দি গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে।

মানিক হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর পরিবার গত ৩০ নভেম্বর শরীয়তপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করে। সে সময় তিনি প্রকৃত আসামি নন—এ কথা উল্লেখ করে তাঁর সপক্ষে কাগজপত্র উপস্থাপন করা হয়। তখন আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করা সহকারী উপপরিদর্শক শামসুর রহমানকে লিখিত ব্যাখ্যা উপস্থাপন করার নির্দেশ দেন। ৯ ডিসেম্বর এএসআই শামসুর রহমান আদালতে উপস্থিত হয়ে দাবি করেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় আসামি হিসেবে লেখা নামের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় এবং এই নামে অন্য কোনো ব্যক্তি না থাকায় তিনি তাঁকে গ্রেপ্তার করেছেন।

আরও পড়ুন