দুই ধাপ নেমে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১২তম

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)

বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম। এটি ২০১৯ সালের তুলনায় দুই ধাপ নিচে নেমেছে। অর্থাৎ গত বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪তম। ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২০’–এ বাংলাদেশ ১০০ স্কোরের মধ্যে পেয়েছে ২৬। একই স্কোর ছিল ২০১৮ ও ২০১৯ সালে।

বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২০’ শীর্ষক প্রতিবেদন আজ বৃহস্পতিবার সকালে সারা বিশ্বে প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশে এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতির ধারণা সূচকের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান এ সূচকের বিভিন্ন তথ্য–উপাত্ত উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্নীতি দমনে বাংলাদেশের অবস্থান হতাশাজনক। দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ, অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন দিক থেকে বাংলাদেশ চতুর্থ। এবার জরিপে অংশ নেওয়া ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬। গতবারের মতো একই আছে। অর্থাৎ কোনো অগ্রগতি নেই। ০ স্কোর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত আর ১০০–এর কাছাকাছি মানে হচ্ছে কম দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ১৯৯৫ সাল থেকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এ সূচক প্রকাশ করছে। বাংলাদেশ ২০০১ সাল থেকে এ জরিপে অংশ নিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে দুই বছরের চলমান তথ্য ব্যবহার করা হয়। এবার দুর্নীতি ধারণা সূচকে বৈশ্বিকভাবে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত তথ্য নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় খাতে ঘুষ লেনদেন, সরকারি খাতে নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, রাষ্ট্রকাঠামোকে দখল করার প্রবণতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। গণতান্ত্রিক জবাবদিহি, আইনের প্রয়োগ, উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার সাহস ও চর্চা, গণমাধ্যমের কাজ করার স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয় প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করে।

ইফতেখারুজ্জামান জানান, ২০২০ সালের প্রতিবেদনের তথ্যের উৎস ১৩টি আন্তর্জাতিক জরিপ। বাংলাদেশের জন্য আটটি সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
তবে টিআইবির কোনো গবেষণা বা প্রতিবেদনের কোনো তথ্য এতে অন্তর্ভুক্ত হয় না।

এবারের প্রতিবেদনেও বরাবরের মতোই ডেনমার্ক, নিউজিল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ দুর্নীতি দমনে ভালো অবস্থানে আছে। সাউথ সুদান, সোমালিয়াসহ বিভিন্ন দেশ এবারও খারাপ অবস্থানে আছে। এবারও শতভাগ স্কোর কোনো দেশই করেনি, অর্থাৎ বিশ্বব্যাপীই দুর্নীতি বিরাজ করছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমনে হতাশাজনক চিত্রের জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার, গণতন্ত্রের জবাবদিহির কার্যকারিতার অবদমন, বিচারহীনতার সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন উপাদান প্রভাব ফেলেছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর করোনা মোকাবিলায় নানান দুর্নীতি, উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ‘রুই–কাতলা’দের বিচারের আওতায় আনার ঘাটতি, রাষ্ট্রীয় খাতে কেনাকাটায় রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়ম, গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করার বিষয়গুলোও একইভাবে দায়ী। দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। ব্যাংক খাতের দুর্নীতি তো আছেই।

দুর্নীতি দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো করতে হলে প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হয়েছে।