দুই পক্ষের দুই মত

  • বাংলাদেশের ‘সতর্ক আশাবাদ’

  • ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক

  • জুনের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুতে আগ্রহী বাংলাদেশ

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে লাখো রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়
রয়টার্স ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কবে, কীভাবে শুরু করা যায়, এ নিয়ে চীনের মধ্যস্থতায় প্রথম ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় একমত হতে পারেনি বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। বাংলাদেশ চাইছে বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত নেওয়ার পরিবর্তে গ্রাম বা এলাকাভিত্তিক প্রত্যাবাসন হোক, যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে আদি নিবাসে ফেরার ব্যাপারে রোহিঙ্গারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আর মিয়ানমার চাইছে এখন পর্যন্ত যেসব রোহিঙ্গাকে যাচাই-বাছাই করে পাঠানো হয়েছে, তাদের যুক্ত করে বিক্ষিপ্তভাবে প্রত্যাবাসন শুরু হোক।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের এমন ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের পরও চীনের মধ্যস্থতায় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের প্রথম আলোচনা শেষে ‘সাবধানী আশাবাদ’ ব্যক্ত করছে বাংলাদেশ।

ঢাকা থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন, বেইজিং থেকে চীনের উপমন্ত্রী লুও ঝাওহুই এবং নেপিডো থেকে মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক সহায়তাবিষয়ক উপমন্ত্রী হে দো সুসান গতকাল মঙ্গলবার প্রায় দেড় ঘণ্টার এই ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় অংশ নেন।

বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘এত দিন পর বৈঠক করাটাকে একটি ইতিবাচক ঘটনা বলতে চাই। কারণ, বৈঠক না করার চেয়ে বৈঠকে বসাটা ভালো।’

মাসুদ বিন মোমেন জানান, এরই মধ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সই হওয়া দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে যেন সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলে, নতুন প্রসঙ্গ এনে যাতে দেরি না হয়, তা নিয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছে।

বাংলাদেশ গ্রামভিত্তিক রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আগ্রহী। এ নিয়ে গতকালের আলোচনায় কী হলো জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘মিয়ানমার যেটা বলেছে, যে সংখ্যাটি তারা যাচাই-বাছাই করেছে, সেটি দিয়ে শুরু করা যায় কি না। আমাকে তিনবারই বলতে হয়েছে, সংখ্যাটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। একসঙ্গে কিছু লোক পরস্পর পরস্পরকে চেনে এবং একই গ্রাম থেকে এসেছে, এইভাবে যদি এগিয়ে যাই, সেগুলোকে যদি চিহ্নিত করতে পারি, যাচাই-বাছাই হওয়া লোকজনকে আলাদা করতে পারি, সেটা অনেক বেশি কার্যকর হবে। বাস্তবসম্মত হবে। আমাদের প্রস্তাবের যুক্তিটা চীন বুঝতে পেরেছে। কিন্তু মিয়ানমার যেহেতু আগে থেকেই একটা অবস্থান নিয়ে আছে বলে এবারের বৈঠকে আমাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। তবে তারা এটা বিবেচনায় নেবে। আশা করছি ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে সমাধান করতে পারব।’

মাসুদ বিন মোমেন জানান, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের যে তালিকা যাচাই-বাছাই করে দিয়েছে, তাতে ১২টি গ্রাম থেকে ৮৪০ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে, যার মানে পুরো তালিকাটা বিক্ষিপ্ত। তবে মিয়ানমারের কথায় মনে হয়েছে, তারা আলোচনা করতে চায়। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির বৈঠকের আগে তারা কিছু সময় পাবে।

নতুন তারিখ ও প্রত্যাশা

দুই দফা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা ভেস্তে যাওয়ার পর বাংলাদেশ নতুন কোনো দিনক্ষণের কথা ভাবছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘নতুন তারিখের কথা আমরা বলেছি, প্রথম তিন মাসের মধ্যে শুরু করা যায় কি না। তারা বলেছে অবকাঠামোসহ খুঁটিনাটি নানা বিষয়ে তাদের আরও সময় দরকার। তারা একেবারে নাকচ করে দেয়নি। চেষ্টা করার কথা জানিয়েছি। মনে হচ্ছে পরবর্তী তিন মাসের মাথায় হতে পারে। আমাদেরও সেই চেষ্টা থাকবে।’

ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের ফলাফল নিয়ে তিনি ‘সতর্ক আশাবাদী’ বলে সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করেন।

পরবর্তী বৈঠকসমূহ

পররাষ্ট্রসচিব জানান, তিন দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের পর আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ওয়ার্কিং গ্রুপের ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হবে, যার ব্যাপ্তি বাড়বে। এখন এতে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার অনুবিভাগের মহাপরিচালক, চীনের পক্ষে ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত ও মিয়ানমারের পক্ষে ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত অংশ নেন। ফেব্রুয়ারির আলোচনায় নেপিডোতে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও বেইজিং থেকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক যোগ দেবেন। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মহাপরিচালকদের মধ্যে যত শিগগির সম্ভব হটলাইন চালু হবে, যাতে ছোটখাটো সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ দূর করে নিতে পারেন।

আগামী মাসে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের পর আবার পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে। পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘আমি তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি ঢাকা বা কক্সবাজারে এই বৈঠক হতে পারে অথবা ভার্চ্যুয়াল হতে পারে। পরবর্তী সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক প্রয়োজন অনুসারে হতে পারে।’