দুই সেট ট্রেন দেশে এসেছে, ভাবাচ্ছে করোনা সংক্রমণ

আগামী আগস্টে উড়ালপথে এই ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচল দেখতে পাবে ঢাকাবাসী।
ফাইল ছবি

মেট্রোরেলের আরও দুই সেট ট্রেন জাপান থেকে বাংলাদেশে এসেছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এগুলো মোংলা বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে শুল্ক ও ভ্যাটসংক্রান্ত কার্যাদি সম্পন্ন হলে ট্রেনগুলো বার্জে করে ঢাকার পথে রওনা হবে। এদিকে প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত লোকজনের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে। ফলে সতর্কতা অবলম্বন করতে গিয়ে কাজের গতি কিছুটা কমেছে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল) সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটারসহ ঢাকায় মেট্রোরেল নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ডিএমটিসিএল।

জুন পর্যন্ত ৭৩৪ জন কর্মী, শ্রমিক ও কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে জুন মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬ জন।

কোম্পানির সূত্র বলছে, গত ২২ জুন জাপানের কোবে সমুদ্রবন্দর থেকে দুই সেট ট্রেন নিয়ে জাহাজ বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেয়। মোংলা বন্দরে এসে পৌঁছায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। ঈদের কারণে শুল্ক ও ভ্যাট কার্যক্রম বন্ধ আছে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে ট্রেনগুলো উত্তরায় ডিপোতে পৌঁছাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ।

মেট্রোরেলের প্রতি সেট ট্রেনে ছয়টি বগি। ২৪ সেট ট্রেনের নকশা প্রণয়ন ও তৈরির কাজ করছে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম। প্রতিষ্ঠানটি সব কাজ জাপানেই সম্পন্ন করে একেবারে পরিপূর্ণ ট্রেন বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। প্রথম সেট ট্রেন ঢাকায় এসেছে গত ২৩ এপ্রিল। এরপর উত্তরায় ডিপোতে সেটির ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। ১৪ মে ডিপোর ভেতর প্রায় ৫০০ মিটার তা চালিয়ে দেখা হয়। দ্বিতীয় সেট ট্রেন ঢাকায় আসে ১ জুন। ১৬ জুন ডিপোর ভেতর ট্রায়াল ট্র্যাকে (পরীক্ষামূলক চলাচল) মেট্রোরেল চালানো হয়েছে।

উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ
ফাইল ছবি

আগস্টে ডিপোর বাইরে উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত মেট্রোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচল শুরুর কথা রয়েছে। এটাকে ইন্টারফেস টেস্ট বলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ট্রেনের সঙ্গে রেললাইন, বিদ্যুৎ ও সংকেত ব্যবস্থাসহ সবকিছুর সমন্বয় পরীক্ষা করা হবে। এই পরীক্ষা শেষ হতে ছয় মাস লাগতে পারে। এরপর শুরু হবে আরেক ধাপের পরীক্ষামূলক চলাচল (ট্রায়াল রান)।

প্রথমে উত্তরা থেকে পল্লবী, পরে আগারগাঁও পর্যন্ত তা চলবে। যাত্রীসহ বাণিজ্যিকভাবে চলাচলের সময় যে গতিতে এবং যেসব নিয়ম মেনে চলাচল করার কথা, ঠিক সেভাবে ট্রায়াল রান হবে। পার্থক্য শুধু যাত্রী থাকবে না। এভাবে চলাচল করবে আরও ছয় মাস।

করোনার সংক্রমণ

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, মেট্রোরেল প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত লোকজনের মধ্যে করোনা সংক্রমণের হার বেড়েছে। ফলে কাজে সতর্কতা অবলম্বন করতে গিয়ে কিছুটা গতি কমেছে। তবে কোনো কাজই বন্ধ নেই। জুন পর্যন্ত ৭৩৪ জন কর্মী, শ্রমিক ও কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে জুন মাসেই আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬ জন। জুলাইয়ের পূর্ণাঙ্গ হিসাব তৈরি হয়নি। তবে এর মধ্যে ট্রেনের পরীক্ষামূলক চালুর কাজে নিয়োজিত কর্মীরাও আক্রান্ত হয়েছেন। এ জন্য ট্রেনের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজে কিছুটা ব্যাঘাত হয়েছে বলে ডিএমটিসিএল সূত্র জানিয়েছে।

আগস্টে পরীক্ষামূলকভাবে উড়ালপথে ট্রেন চালানোর বিষয়ে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, এখনো পর্যন্ত পরিকল্পনা অনুসারেই কাজ এগোচ্ছে। তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। তবে আগস্টেই উড়ালপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করবে। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে। তবে কোনো কাজ বন্ধ নেই।

উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশে আগে মেট্রোরেল চালুর পরিকল্পনা আছে সরকারের। আগামী বছরের ডিসেম্বর থেকেই এ পথে ট্রেন চালুর লক্ষ্য ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষের। সব মিলিয়ে ২৪ সেট ট্রেন তৈরির প্রক্রিয়া চলছে জাপানে। তবে প্রথম দফায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে চালানোর জন্য পাঁচ সেট ট্রেন আসার কথা। এর মধ্যে চার সেট বাংলাদেশে এসেছে।

টেস্ট ট্র্যাক বা পরীক্ষামূলক চলাচলের লাইনে চলা শুরু করেছে মেট্রোরেলের ট্রেন
ফাইল ছবি

আরও এক সেট ট্রেন ১৬ জুলাই জাপান থেকে রওনা হওয়ার কথা ছিল। তবে অলিম্পিক গেমস এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে জাপানে চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এ জন্য নির্ধারিত দিনে পঞ্চম সেট ট্রেন রওনা হতে পারেনি। প্রকল্প সূত্র বলছে, পঞ্চম ট্রেন সেটটি সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে পৌঁছার কথা ছিল। এখন হয়তো মাসখানেক দেরি হতে পারে। তবে এর জন্য পরীক্ষামূলক চলাচলে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না।