দুর্গম হাওরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবিকার সংকট

স্থানীয় মানুষজন বলছেন, হাওরে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এগিয়ে নিতে হলে সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে থাকা নিশ্চিত করতে হবে।

বছরের প্রায় ছয় মাস পানির নিচে ডুবে থাকে এই সড়ক। ঘাস কেটে নিয়ে বাড়ি ফিরছে হাওরের দুই শিশু। সম্প্রতি খালিয়াজুরির কৃষ্ণপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম অালো

‘যেখানে চলে না রিকশা, গাড়ি/ তারই নাম খালিয়াজুরি’—নেত্রকোনার হাওরবেষ্টিত খালিয়াজুরি উপজেলা নিয়ে ২০০০ সালের দিকে ছড়াটি লেখেন সেখানকার বাসিন্দা সঞ্জয় সরকার। ২১ বছর পর সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা গেল, খালিয়াজুরির সেই দুর্গম চেহারা খুব একটা বদলায়নি।

জেলা শহর থেকে পূর্ব-দক্ষিণে এই উপজেলার দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। এই উপজেলা সব দিক থেকে হাওরবেষ্টিত। চারদিক থেকে খালিয়াজুরিকে জড়িয়ে আছে ধনু ও সুরমা নদী। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি দেশের হাওর-দ্বীপ-চরের যে ১৬ উপজেলাকে দুর্গম বিবেচনা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, খালিয়াজুরি তার একটি।

সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, অন্য দুর্গম এলাকাগুলো হলো কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, নোয়াখালীর হাতিয়া, সিরাজগঞ্জের চৌহালী, কুড়িগ্রামের রৌমারী ও চর রাজীবপুর, পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, ভোলার মনপুরা, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা, শাল্লা, দোয়ারাবাজার ও হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ।

হাওরগুলোতে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। তবে হাওরে আর কোনো অলওয়েদার সড়ক না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাওরের উন্নয়ন করতে হলে আগে এখানকার প্রতিবেশ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে।
মো. মাসুক মিয়া, হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

নেত্রকোনা শহর থেকে খালিয়াজুরি যেতে হয় মদন অথবা মোহনগঞ্জ উপজেলা হয়ে। মদনের উচিতপুরে যেখানে হাওরের শুরু হয়েছে, সেখান থেকে খালিয়াজুরি উপজেলা শহর পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার ডুবো সড়ক হয়েছে। তবে খালিয়াজুরি শহর থেকে ২ কিলোমিটার আগে উপজেলার মেন্দিপুরে ধনু নদ পার হতে হয় নৌকা দিয়ে।

খালিয়াজুরি উপজেলা সদরে পৌঁছে অবশ্য বেশ কিছু অটোরিকশা চলতে দেখা গেল। উপজেলার দুই শতাধিক ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, এ সবই পাঁচ থেকে ছয় মাসের জন্য। জ্যৈষ্ঠের শেষ বা আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত খালিয়াজুরি ডুবে থাকে পানিতে। তখন ইঞ্জিনচালিত নৌকা এখানকার যোগাযোগের প্রধান বাহন।

খালিয়াজুরীতে প্রথম চার চাকার দুটি গাড়ি এসেছে গত ১৩ জানুয়ারি। একটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার। অন্যটি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার। তবে যোগাযোগ দুর্গমতার কারণে খালিয়াজুরিতে এখনো কোনো সংবাদপত্র আসে না।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানালেন, এক লাখ জনসংখ্যার খালিয়াজুরির একটি গ্রাম থেকে আরেকটি গ্রাম বিচ্ছিন্ন। উপজেলা শহর থেকে ছয় ইউনিয়নের কোনোটির সঙ্গেই সরাসরি যোগাযোগ নেই।

খালিয়াজুরি সদর থেকে কখনো অটোরিকশায়, কখনো হেঁটে আড়াই কিলোমিটার দক্ষিণে নগর ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামে গিয়ে পড়তে হলো বিড়ম্বনায়। সন্ধ্যার পর ফেরার যানবাহন নেই। হঠাৎ মোটরসাইকেল নিয়ে মুশকিলের আসান হয়ে আসেন একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী হাফিজুর রহমান। তাঁর ভাষ্য, ‘নগর ইউনিয়ন হলো দুর্গমের দুর্গম।’

স্থানীয় উন্নয়নকর্মী মহসিন মিয়া বললেন, সরকার খালিয়াজুরিকে দুর্গম ঘোষণা করেছে শুধু সরকারি কর্মকর্তাদের স্বার্থে। তাঁরা বিশেষ ভাতা পাচ্ছেন। কিন্তু জনগণের জন্য যোগাযোগব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সরকারের নজর কম।

হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুক মিয়া অবশ্য প্রথম আলোকে বলেন, হাওরগুলোতে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। তবে হাওরে আর কোনো অলওয়েদার সড়ক না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাওরের উন্নয়ন করতে হলে আগে এখানকার প্রতিবেশ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে।

হাসপাতাল আছে, চিকিৎসা নেই

খালিয়াজুরি উপজেলায় ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে। এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়েছে। নতুন নির্মিত ভবনও উদ্বোধনের অপেক্ষায়। তবে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা নেই।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যান শাখার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণির মঞ্জুরিকৃত ১৫টি পদের মধ্যে আছেন মাত্র ৪ জন। শূন্য ১১টি পদ। দ্বিতীয় শ্রেণির ২৯টি পদের মধ্যে আছেন ২৩ জন, তৃতীয় শ্রেণির ৭২টি পদের মধ্যে শূন্য ৪১টি। চতুর্থ শ্রেণির ২১টি পদের মধ্যে আছেন মাত্র ২ জন।

সদ্য বদলি হওয়া ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রিয়াজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা চিকিৎসা দেবেন, সেই চিকিৎসকেরই বড় সংকট এখানে। একজন চিকিৎসককেই বহির্বিভাগ, জরুরি ভাগ ও ওয়ার্ড সামলাতে হয়। জানা গেছে, ৯ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও এ হাসপাতালে ৩ বছর ধরে ২ জনের বেশি চিকিৎসক ছিলেন না। তবে গত কয়েক দিনে এখানে পাঁচজন চিকিৎসকের পদায়ন হয়েছে। তবে তাঁরা এখনো কর্মস্থলে যোগ দেননি।

গত দুই মাসে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন তিনজন। সদ্য যোগ দেওয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উত্তম কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে গাইনি, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক নেই। অপারেশন থিয়েটার পরিত্যক্ত হয়ে আছে। ল্যাব নেই। এক্স-রে মেশিন অচল। পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র নেই।

১৯ ডিসেম্বর খালিয়াজুরি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসববেদনা নিয়ে আসেন নগর ইউনিয়নের বল্লবপুর গ্রামের রিমা সরকার। তাঁর স্বামী জুয়েল সরকার বলেন, হাসপাতালে সিজারের ব্যবস্থা নেই। তাঁর নবজাতকটি মারা গেছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ৯ জন মা ও ১৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা বলেন, এর বাইরেও হাসপাতালে স্থানান্তর করার সময় মা অথবা শিশুর মৃত্যু ঘটে। ফলে এ সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।

শিক্ষায়ও বেহাল

খালিয়াজুরি উপজেলার নগর, কৃষ্ণপুর, চাকোয়া ও মেন্দিপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেল, ১০-১৫ বছর বয়সী ছেলেরা মাছ ধরছে। গরু চরাচ্ছে, ঘাস কাটছে। তাদের বেশির ভাগ লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়েছে।

উপজেলার যুগীমারা হাওরে ৮-১০ শিশুকে গরু চরাতে দেখা গেল। শাহিনুর নামে ১২ বছরের এক শিশু বলল, সে এক বছর আগে লেখাপড়া বাদ দিয়েছে। সাত মাসে ২২ হাজার টাকার চুক্তিতে এক প্রতিবেশীর গরু দেখাশোনা করে। শিশু ইমন (১০) বলল, ‘আমগো কাম (কাজ) হলো খেতে হানি (পানি) দেওয়া আর গরু দেখা। ফাঁকে ফাঁকে টিকটক করি।’

হাওর এলাকায় কন্যাশিশুদের বাল্যবিবাহের সমস্যাও আছে। তবে শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হলো শিক্ষক–সংকট। খালিয়াজুরি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৬৩টি প্রধান শিক্ষকের পদের মধ্যে শূন্য আছে ১৯টি। ৩২২টি সহকারী শিক্ষকের পদের মধ্যে ৭৮টি পদ শূন্য।

খালিয়াজুরি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৪৭১ জন। প্রধান শিক্ষক ইন্দ্রজিৎ বর্মণ বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানে ১০ পদে ৯ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। তার মধ্যে তিনজন প্রশিক্ষণে আছেন। অথচ এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রী অনুপাতে অন্তত ১৬ জন শিক্ষকের প্রয়োজন।

গাজীপুর ইউনিয়নের পাঁচহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী আছে প্রায় সাড়ে পাঁচ শ। কিন্তু শিক্ষক মাত্র চারজন। তার মধ্যে একজন প্রশিক্ষণে আছেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রফিকুল ইসলাম বললেন, শিক্ষকেরা এখান থেকে দ্রুত বদলি নেওয়ায় শিক্ষক–সংকট কাটানো যাচ্ছে না।

জীবিকার সংগ্রাম

হাওরের প্রধান পেশা কৃষি। কৃষকেরা এখন খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত। নগর ইউনিয়নের নয়াগাঁও গ্রামের কৃষক চয়ন সরকার ও বিবেন্দ্র সরকার জানালেন, তাঁরা সুদে ২০ হাজার করে টাকা নিয়ে বোরো আবাদ করেছেন। বিবেন্দ্র বললেন, ‘আষাঢ় মাসে গিরিস্তি তুলে সুদে-আসলে ৩০ হাজার দিতে হবে।’

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেল, ভূমিহীন বর্গাচাষি, প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক খালিয়াজুরিতে বেশি। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, মোট ২৫ হাজার ২২২ কৃষক পরিবারের মধ্যে এ সংখ্যা অন্তত সাড়ে ১৭ হাজার।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জসিম উদ্দিনও বললেন, খালিয়াজুরিতে মোট জমির ৩০-৩৫ শতাংশ বড় কৃষকের হাতে। ফলে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষিরা সেভাবে এগোতে পারছেন না।

খালিয়াজুরির সবখানেই জীবনের সংগ্রাম। মাছ ধরতে না পেরে শুকনো জাল নিয়ে জেলের বাড়ি ফেরা কিংবা রান্নার জন্য বয়স্ক নারীর মাথায় করে দুই কিলোমিটার দূর থেকে লাকড়ি আনার মতো ঘটনাও চোখে পড়ে। কীর্তনখোলা হাওরে এক দম্পতিকে পাওয়া গেল, যাঁরা আফালের ভাঙনে ভূমিহীন হয়ে রাখাল হয়েছেন। হাওরপারের সব মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা উঠে এল কৃষ্ণপুরের কৃষক নজরুল ইসলামের কণ্ঠে। তিনি বললেন, ‘ভাটি এলাকার মানুষের জীবনযুদ্ধ কে দেখবে। গিরস্ত মার খেলে, জীবন বাঁচে ক্যামনে।’

হাওরের ল্যান্ডলর্ড ও ওয়াটারলর্ড

হাওরে বিশেষ শ্রেণির কিছু মানুষও আছেন, যাঁরা স্থানীয়ভাবে ল্যান্ডলর্ড ও ওয়াটারলর্ড নামে পরিচিত। খালিয়াজুরি প্রেসক্লাবের সামনে একজন ‘ল্যান্ডলর্ডের সঙ্গে দেখা ও কথা। তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জে। খালিয়াজুরিতে তাঁদের ৪০০ একরের মতো জমি আছে।

ল্যান্ডলর্ড বললেন, ‘আসলে এটা ভাটির দেশ। আমাদের ভালো লাগে। আগে এলাকার ধনী মানুষেরা বন্দুক নিয়ে পাখি শিকারের জন্য আসত। এখন দেশি হাঁস বেশি হওয়াতে পলিটা খেয়ে ফেলে। যার কারণে অতিথি পাখি আর আসে না।’

জিজ্ঞেস করি, আপনি নিয়মিত আসেন?

তাঁর জবাব, ‘এখানকার বাতাস মুক্ত। ফসলের মাঠ সুন্দর। এখানে না এলে ভালো লাগে না। বর্ষার সময় এখানে ছোট ছোট ঢেউ ওঠে। দু-তিন মাইল বাড়িঘর নেই। এখানে ছোট্ট একটা বাড়ি করার চিন্তা করছি। যে বাড়িটার নাম হবে ‘তরঙ্গবিলাস।’

হাওরের বেশির ভাগ মানুষ কৃষিকাজ করে। কেউ কেউ কৃষিকাজের ফাঁকে মাছ ধরে। কিন্তু অবারিত হাওরে এখন আর আগের মতো মাছ ধরতে যেতে পারে না। কারণ, হাওরের জলমহালগুলো স্থানীয় ভাষায় ‘ওয়াটারলর্ডদের’ দখলে।

খালিয়াজুরি উপজেলা পরিষদের সামনের চা–দোকানি শফিকুল ওয়াটারলর্ড চেনার উপায়ও বাতলে দিয়ে বললেন, ‘দেখবেন, তাদের দখলে চার-পাঁচটা জলমহাল আছে। তারা ভোটে দাঁড়ায়।’

জানা গেল, খালিয়াজুরি সদর, গাজীপুর, চাকোয়া, মেন্দিপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী, বিদ্রোহী প্রার্থী যাঁরাই ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই একাধিক জলমহালের দখলদার। কৃষ্ণপুরের বাসিন্দা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুদ তালুকদার বলেন, ‘ঢাকা, গাজীপুরে রাজনীতিকেরা শিল্পকারখানার মালিক আর খালিয়াজুরির রাজনীতিকেরা জলমহালের মালিক।’

দুর্গম হাওরাঞ্চলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের হাতে জমি খুব কম। পাশাপাশি জলমহালগুলোও জেলেদের হাতে নেই। ফলে সেখানে জীবিকার সংকট আছে। হাওরপারের জীবনমান উন্নয়ন করতে হলে সরকারকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। আর শিক্ষা, স্বাস্থ্য এগিয়ে নিতে হলে সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে থাকা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁর মতে, সরকারি কর্মকর্তারা কর্মস্থলে উপস্থিত থাকলে অনেক সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে
অধ্যাপক এম এ সালাম, ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক

অন্য হাওরের চিত্র

খালিয়াজুরির পাশের উপজেলা সুনামগঞ্জের শাল্লা, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের ইটনা। এই তিনি উপজেলাও আছে দুর্গম এলাকার তালিকায়।

সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে শাল্লা উপজেলা। উপজেলার সুখলাইন গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক সুব্রত দাস বলেন, শুকনো মৌসুমে হেঁটে আর বর্ষায় নৌকায় চলাচল করেন তাঁরা। তাঁর মতে, যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য—সবকিছুর উন্নতি হতো।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানালেন, শাল্লা উপজেলার সঙ্গে জেলা সদরের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের কাজ হচ্ছে। এর মাধ্যমে শাল্লার সঙ্গে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলারও যোগাযোগ স্থাপিত হবে।

শাল্লার দক্ষিণে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা। এই উপজেলার সঙ্গে হবিগঞ্জ জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা আছে। তবে উপজেলা সদরের সঙ্গে বদলপুর ও কাকাইলছেও ইউনিয়নের সড়কব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি।

উপজেলার কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ মিয়া বলেন, আজমিরীগঞ্জ শহরে যেতে প্রায় ২ ঘণ্টা সময় লাগে। প্রথমে নৌকা, তারপর কিছু দূর হেঁটে আবার ইজিবাইকে উঠতে হয়। এর বদলে মেঘনা নদী পার হয়ে দেড় ঘণ্টায় কিশোরগঞ্জে পৌঁছানো যায়।

ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এম এ সালাম প্রথম আলোকে বলেন, দুর্গম হাওরাঞ্চলে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের হাতে জমি খুব কম। পাশাপাশি জলমহালগুলোও জেলেদের হাতে নেই। ফলে সেখানে জীবিকার সংকট আছে। হাওরপারের জীবনমান উন্নয়ন করতে হলে সরকারকে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। আর শিক্ষা, স্বাস্থ্য এগিয়ে নিতে হলে সরকারি কর্মকর্তাদের কর্মস্থলে থাকা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁর মতে, সরকারি কর্মকর্তারা কর্মস্থলে উপস্থিত থাকলে অনেক সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে।


[তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন পল্লব চক্রবর্তী, নেত্রকোনা; খলিল রহমান, সুনামগঞ্জহাফিজুর রহমান, হবিগঞ্জ]